টিকা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে কূূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার হোক

15

একদিকে মহামারি করোনা ভাইরাসের উর্ধ্বমুখীতে দেশব্যাপী চলছে কঠোর লকডাউন, পাশাপাশি জীবন ও জীবিকা নিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। এরমধ্যে আরো বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার মত খবর হচ্ছে, দেশে টিকার মজুদ শেষের দিকে, কিন্তু ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারণে সিরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে টিকা পাঠাতে পারছে না। এর ফলে বাংলাদেশ সরকার ভারতের সাথে ক‚টনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধিসহ রাশিয়ার সহযোগিতায় বাংলাদেশে টিকা উৎপাদন ও চীন থেকে জরুরি ভিত্তিতে টিকা নেয়ার বিষয়ে চুক্তি ও কার্যক্রম শুরু করা বিষয়ে নানা ইতিবাচক খবরও আমাদেরকে আশাবাদী করেছে। তবে রাশিয়া ও চীনের বিষয়টি প্রক্রিয়াগত, সময়ের ব্যাপার। কিন্তু দেশে প্রথম ডোজের উপর ভিত্তি করে দ্বিতীয় ডোজের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্Íর হিসাব করে দেখেছে বর্তমান মজুদকৃত টিকার মধ্যে প্রথম ডোজের সকল গ্রহিতা টিকা নিলে ১২ লাখ ডোজ ঘাটতি রয়েছে। এ অবস্থায় সরকার ভারতের সাথে ক‚টনেতিক তৎপরতা জোরদার করে চুক্তি অনুযায়ী ভারত থেকে বাকি টিকাগুলো আনার উদ্যোগ নিয়েছে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়। আমরা জানি, বাংলাদেশ সরকার বেসরকারি কোম্পানি বেক্সিমকোর মাধ্যমে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি টিকা কেনার চুক্তি করেছিল। সে অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা পাওয়াার কথা ছিল। ইতোমধ্যে চুক্তির আলোকে ৭০ লাখ টিকা আর ভারত সরকার কর্তৃক উপহার হিসাবে পাওয়া আরো ৩২ লাখ টিকা মিলে ১ কোটি ২লাখ টিকা এসেছে মাত্র। এ টিকাগুলোর মজুদ এখন শেষের দিকে। কিন্তু দেশটিতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে করোনা ভ্যাক্সিন অন্যকোন দেশে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা জারি করে, এতে বিপত্তি ঘটে বাংলাদেশের বাকি ভ্যাক্সিন বা টিকা পাওয়া নিয়ে। গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ভারত আমাদের বলেছে যে, বাংলাদেশের সাথে যে চুক্তিটা হয়েছিল, সেটা হয়েছে ভারতের নতুন অ্যারেঞ্জমেন্টের (রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা) আগে। সুতরাং তাদের নতুন নীতির প্রভাব আমাদের ওপর পড়া উচিৎ নয়। তবে যেহেতু ভারতের নিজেদেরই চাহিদা অনেক বেড়েছে এবং তাদের অনেক আন্দোলন হচ্ছে যেন কোথাও টিকা দেয়াা না হয়, সেজন্য ভারত সময়মত চালানটা পাঠায় নাই।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘এরমধ্যেও ভারত কথা দিয়েছে, ভারতের হাইকমিশনার এমুহূর্তে নয়াদিল্লিতে আছেন, যাতে আমাদের সরবরাহ ডিস্টার্ব না হয়, সেজন্য তিনি ওখানে কাজ করছেন।’ আশা করা হচ্ছে, বাকি ভ্যাক্সিন পাওয়া নিয়ে একটি ইতিবাচক খবর আমরা পাব। তবে এর পাশাপাশি সরকার রাশিয়ার টেকনোলজি ব্যবহার করে বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনের যে চুক্তি করেছে তাকে আমরা স্বাগত জানাই। এধরণের আরো আগে নিলে সরকার ও দেশবাসী আরো স্বস্তিতে করোনা ভাইরাস মোকাবেলার সুযোগ পেত।
গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, করোনা টিকা উৎপাদনে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ সমঝোতা চুক্তি সই করেছে। এছাড়া চীন বাংলাদেশকে পাঁচ লাখ টিকা উপহার দেবে।, বাংলাদেশ ও রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে টিকা উৎপাদনে সই হয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা বাংলাদেশে যৌথভাবে টিকা উৎপাদন করতে পারবো। তবে যে কোম্পানি টিকা উৎপাদন করবে, তাকে ফর্মূলা গোপন রাখতে হবে। তিনি বলেন, টিকা নিয়ে চীনের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। চীন আমাদের ৫ লাখ টিকা উপহার দেবে। বাংলাদেশে চীনা শিক্ষার্থী ও চীনের সঙ্গে যারা ব্যবসা করেন, তারা অনেকেই চীনা টিকা নিতে আগ্রহী। এর পাশাপাশি চীনের নেয়া ‘ইমার্জেন্সি ভ্যাকসিন স্টোরেজ ফ্যাসিলিটি ফর কোভিড ফর সাউথ এশিয়া’ নামক এই প্লাটফর্মে যুক্ত হওয়ার জন্য সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ। এর বাইরেও বিকল্প উপায় বা অন্য দেশ থেকে টিকা কীভাবে আনা যাবে, সেটা যাচাই করে সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে। সেই কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হবে। কর্মকর্তারা বলেছেন, যে দেশগুলোতে টিকা উৎপাদন হচ্ছে, এখন সে ধরনের সব দেশের সাথেই যোগাযোগ করে টিকা পাওয়াার সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমরা মনে করি, দেরিতে হলেও সরকারের বিকল্প উদ্যোগগুলো প্রশংসনীয়। আশা করা যায়, টিাকা ঘাটতি নিয়ে যে উদ্বেগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে, শিগগিরই এর অবসান হবে। দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ করোনা ভ্যাক্সিন গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।