টিকাদান কার্যক্রম শুরু করোনা প্রতিরোধে টিকার বিকল্প নেই

25

সকল জল্পনা-কল্পনা ও নানা বিভ্রান্তকে উপড়িয়ে সর্বশেষ ২৭ জানুয়ারি বুধবার সফলভাবে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে টিকাপ্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রাজধানী ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তার টিকা নেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশে এ টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। টিকা দেওয়ার শুরুতে তিনি রুনু ভেরোনিকা কস্তার-এর সঙ্গে কথাও বলেন। এসময় ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পাঁচজনকে টিকা দেওয়া হয়। এরপর আরও ২১ জন টিকা নিয়েছেন এদিন। গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ রাজধানীর আরো পাঁচটি হাসপাতালে টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। আশার কথা হচ্ছে, এ পর্যন্ত যারা টিকা নিয়েছেন তারা প্রত্যেকে সুস্থ আছেন, কারো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া যায় নি। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, করোনার টিকাদান কার্যক্রম নানা দিক থেকে তাৎপর্যময় ও গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ করোনা মহামারি মোকাবিলার প্রয়াসে এক নতুন যুগে প্রবেশ করল। বস্তুত শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের মানুষ প্রতীক্ষায় ছিল এ টিকার। গত প্রায় এক বছরে বিশ্বকে রীতিমতো ওলটপালট করে দিয়েছে করোনা নামের ভাইরাস। এ মহামারিতে বিশ্বে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কোটি কোটি মানুষ পড়েছে আর্থিক সংকটে। দীর্ঘ ১১ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সকল পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ভেঙে পড়েছে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। মৃত্যু, শোক আর সংকটের মধ্যে দিন যাপন করছে সাধারণ মানুষ। এ প্রেক্ষাপটে জীবন ও জীবিকা দুটির সুরক্ষার জন্যই বড় প্রয়োজন ছিল করোনা টিকার। বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান টিকা আবিষ্কার করলেও সংশয় ছিল-ধনী দেশগুলোর টিকাপ্রাপ্তির প্রতিযোগিতার দৌঁড়ে তা কবে নাগাদ আমাদের মতো দেশগুলোয় এসে পৌঁছবে। স্বস্তির বিষয়, সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপে বিশ্বে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হওয়ার অল্পদিনের মধ্যেই বাংলাদেশেও এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিশ্বের ৫৪তম দেশ হিসাবে করোনাভাইরাসের টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। ইতোমধ্যে ৩ কোটি ৪০ লাখ টিকা ক্রয় করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ লাখ এসে গেছে দেশে। আরও ২০ লাখ টিকা বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দিয়েছে ভারত সরকার। এ জন্য ভারত সরকারকে ধন্য জানানো উচিৎ। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। গতকাল শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের নানা উদ্যোগ ও দ্রæত ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
আমরা জানি, আপাতত ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে বয়স যাদের, তাদের এ টিকা দেওয়া হচ্ছে। করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে দেশের সব নাগরিকেরই উচিত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ টিকা গ্রহণে এগিয়ে আসা। প্রত্যেককে ‘সুরক্ষা’ নামক ওয়েবসাইট ও অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে টিকা নিতে হবে। সেক্ষেত্রে সবাই যাতে নাম নিবন্ধন করতে পারেন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদের। অনেকের অনলাইনের সুবিধা নেই, অনেকে নিজে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন না। সেক্ষেত্রে তারাও যাতে টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারেন, তার ব্যবস্থা করতে হবে। করোনার টিকা নিয়ে দেশে-বিদেশে নানা রকম অপপ্রচার রয়েছে, আমাদের দেশে রাজনীতিও চলছে, এরফলে কারও কারও মধ্যে ভয়-ভীতিও কাজ করছে। আমরা মনে করি টিকাগ্রহণে কোনরকম গুজবে কান না দেয়াই উচিৎ। এখানে ভয়ের তেমন কিছু নেই। এ পর্যন্ত সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আমলা ও চিকিৎসকদের অনেকে টিকা নিয়েছেন। তারা প্রত্যেকে সুস্থ এবং ভালো আছেন। সুতরাং টিকা নিয়ে যেকোন ভীতি অমূলক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রদান করা হচ্ছে, তাতে এমন কোনো উপাদান নেই, যা আমাদের শরীরে ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া এখন যাদের টিকা দেওয়া হচ্ছে, তাদের সপ্তাহখানেক পর্যবেক্ষণের পর এর সফলতার ভিত্তিতেই ৭ ফেব্রæয়ারি থেকে গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। কাজেই টিকা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। একমাত্র টিকা নেওয়ার মাধ্যমেই করোনাভাইরাসের ঝুঁকি থেকে মুক্ত হতে পারে মানুষ।