টানেলে অন্যরূপ পিএবি সড়কের

121

খালেদ মনছুর, আনোয়ারা

টানেল সংযোগ সড়কে পাল্টে যাচ্ছে আনোয়ারার অর্থনৈতিক ও যোগাযোগের চিত্র। ব্যাপকহারে চলছে অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ, স্থাপন হচ্ছে কল-কারখানা। বাড়ছে ব্যাংক-বীমাসহ নানা অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। হু হু করে বাড়ছে ছয় লেন সংযোগ সড়কের দুই পাশের জমির দাম।
বঙ্গবন্ধু টানেল ছয় লেন সংযোগ সড়কের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ। দৃষ্টিনন্দন ছয় লেন সড়কে ইতোমধ্যেই যান চলাচল উপভোগ করছেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের যাত্রীরা। যানজট ছাড়াই চলছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। শাহ আমানত সেতু থেকে আনোয়ারায় পৌঁছতে সময় লাগছে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। যা সড়ক নির্মাণ পূর্ণাঙ্গ শেষ হলে আরো কমে আসবে। সব মিলিয়ে টানেল সংযোগ সড়ককে ঘিরে আনোয়ারাসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের জীবনে আসছে ব্যাপক পরিবর্তন।
দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও ছয় লেন সড়কের প্রকল্প পরিচালক সুমন সিংহ জানান, ‘বঙ্গবন্ধু টানেল ছয় লেন সংযোগ সড়কের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা আপাতত চার লেন সড়ক যান চলাচলের জন্য চূড়ান্ত করব। বাকী দুই লেন ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কালাবিবির দীঘির মোড়, টানেল সংযোগ সড়কের মাথা ও ক্রসিং এলাকায় তিনটি গোলচত্বরের কাজ চলমান রয়েছে। ৮.১০ কিলোমিটার সড়কে বিভিন্ন স্থানে ছয়টি ইউটার্ন করা হবে। জনবহুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এলাকায় আপাতত কোনো স্পিড বেকার নির্মাণের পরিকল্পনা নেই। যদি প্রয়োজন হয় পরবর্তীতে করে দেয়া হবে।’
জানা যায়, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেলের যানবাহন নির্বিঘ্নে চট্টগ্রাম শহর ও কক্সবাজার পৌঁছাতে আনোয়ারা কালাবিবির দীঘির মোড় থেকে ক্রসিং ওয়াই জংশন পর্যন্ত ৮.১০ কিলোমিটার সড়ক ছয় লেন ও কালাবিবির দীঘির মোড় থেকে আনোয়ারা সদর পর্যন্ত সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। প্রায় ২৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এই দুই সড়কের নির্মাণ কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনডিই। ষোলটি কালভার্টের মধ্যে ১৪টি কালভার্টের কাজ শেষ হয়েছে। দুটি কালভার্টের কাজ চলমান রয়েছে। আগামী মার্চ মাস নাগাদ উভয়দিকে চার লেনের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং সওজের কর্মকর্তারা।
এদিকে বঙ্গবন্ধু টানেল ছয় লেন সংযোগ সড়ক দৃশ্যমান হওয়ায় আনোয়ারায় বাড়ছে অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ। সড়কের দুই পাশে উঁচু উঁচু আবাসিক ও বাণিজ্যিক দালানের সংখ্যাও বাড়ছে। পাশাপাশি গার্মেন্টস, টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন কারখানা স্থাপনের কাজ চলছে। ছয় লেন সড়কের দুই পাশে এবং টানেল সংযোগ সড়কের আশপাশে জমি কিনতে চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের বাইরের মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। এর মধ্যে সামনের সারিতে রয়েছেন প্রবাসীরা। দামের প্রতি তোয়াক্কাও করছেন না তারা। জমি পেলেই কিনে নিচ্ছেন। ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জমির দাম। টানেল সংযোগ সড়কের মাথা, চাতরী চৌমুহনী বাজার, কালাবিবির দীঘির মোড়, কমিউনিটি সেন্টারসহ আশপাশের জমির মূল্য ৫ থেকে ১০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শাখা খোলার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০-২৫টি ব্যাংকের শাখা খোলা হয়েছে আনোয়ারায়। যা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ৫০টি ছাড়িয়ে যাবে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
একসময় চট্টগ্রাম শাহ আমানত সেতু থেকে আনোয়ারা যেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে আটকা পড়ে সাধারণ যাত্রীদের ব্যাপকভাবে সময় ও অর্থের অপচয় হত। বর্তমানে কোনো প্রকার যানজট ছাড়াই চট্টগ্রাম শহরে যাওয়া-আসা করতে পেরে অনেক খুশি আনোয়ারা-কর্ণফুলীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ। টানেল সংযোগ সড়ক ও ছয় লেন সড়ক দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কয়েক হাজার মানুষ বিনোদনের জন্য ভিড় জমায় টানেল সংযোগ সড়কে। এতে আনোয়ারা ছাড়াও আশপাশের উপজেলার লোকজনও রয়েছেন।
কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠানের বাসিন্দা মো. শোয়াইব বলেন, ‘এখন ঘর থেকে বের হয়ে ১০ মিনিটে চট্টগ্রাম শহরে চলে যেতে পারছি। আগে যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে আটকে থাকতাম এখন সেই পরিবেশ আর নেই। যানজটমুক্ত সড়কে এখন যাতায়াত করে আনন্দ লাগছে।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনডিই’র প্রকল্প ব্যবস্থাপক (পিএম) প্রকৌশলী আব্দুল হান্নান জানান, ‘নানা প্রতিবন্ধকতার পরও আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু টানেল সংযোগ সড়কের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ করেছি। আগামী মার্চ মাস নাগাদ চার লেনের কাজ বুঝিয়ে দিতে পারব। তবে বাকী দুই লেনের বেশিরভাগ কাজ শেষ হয়েছে। কয়েকটি জায়গায় ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হলে বাকী কাজটা দ্রæততম সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারব।’