টানা ভারী বর্ষণে বিপর্যস্ত জনজীবন

40

তুষার দেব

করোনা অতিমারির কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার উপর আগে থেকেই ঝুলে রয়েছে ‘লকডাউন’ নামে বিধি-নিষেধের খড়গ। তার সাথে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়েই যেন চেপে বসেছে শ্রাবণের অতি ভারী বর্ষণ। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘণ্টায় চট্টগ্রামজুড়ে অতি ভারী বর্ষণে নাকাল হয়েছে জনজীবন। এসময় মহানগরসহ সমুদ্র উপকূলবর্তী অন্তত পাঁচটি এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ শত মিলিমিটারের ঘর ছাড়িয়েছে। জলমগ্ন হয়েছে শহর থেকে শুরু করে বিস্তীর্ণ গ্রামীণ জনপদের নিম্নাঞ্চল। অব্যাহত বর্ষণের কারণে জারি করা হয়েছে ভূমিধসের সতর্কতা। সমুদ্রবন্দরগুলোতে বহাল রাখা হয়েছে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত।
শ্রাবণের প্রথম পক্ষের শেষদিকে এসে বাদলধারা এই ‘সুপার-ডুপার’ ইনিংসের তোপ দাগিয়েছে মূলত উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপ আর প্রবল অবস্থায় সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর উপর ভর করেই। আবহাওয়ার বিরাজমান অবস্থায় বর্ষণের এই চলতি ধারা অন্ততপক্ষে আরও দু’দিন কমবেশি অব্যাহত থাকতে পারে। আর বর্ধিত পাঁচদিনের আবহাওয়ার অবস্থায় বৃষ্টিúাতের প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ খোন্দকার হাফিজুর রহমান ভারী বর্ষণের কারণে সতর্কতা অবলম্বনের তাগিদ দিয়ে পূর্বদেশকে বলেন, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রাম, ঢাকা. খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী (৪৪- ৮৮ মি.মি) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। তিনি জানান, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি বর্তমানে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে এবং গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের উপক‚লীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, মংলা, পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহ ও কক্সবাজার উপকূলকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্র্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপক‚লের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী চব্বিশ ঘণ্টার জন্য প্রচারিত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘন্টায় অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে কক্সবাজারের সীমান্তের সমুদ্র উপক‚লীয় অঞ্চল টেকনাফে দেশের সর্বোচ্চ একশ’ ৯৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এছাড়া বিভাগের আওতাধীন চট্টগ্রাম মহানগরে একশ’ ২৯ মিলিমিটার, সন্দ্বীপে একশ’ ১২, কক্সবাজারে একশ’ ১৯ ও হাতিয়ায় একশ’ সাত মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর বাইরে বিভাগের অন্যান্য অঞ্চলগুলোর মধ্যে সীতাকুন্ডে ৭৩, নোয়াখালীতে ৬৫ এবং কুতুবদিয়ায় ৮৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চট্টগ্রামের বাইরে খুলনা বিভাগের মংলা এবং বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী ও খেপুপাড়ায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ শত মিলিমিটারের ঘর ছাড়িয়েছে।
অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার বর্ষার প্রথমভাগে অর্থাৎ বিদায়ী জুন মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। প্রতিবছর জুনের মাঝামাঝিতে প্রতিবেশি ভারতের কেরালা ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ উপক‚ল দিয়ে দেশের স্থলভাগে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু অর্থাৎ বর্ষার প্রবেশ ও বিস্তার ঘটলেও এবার ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ তার পালে হাওয়া দিয়েছে। এ কারণে খানিকটা আগে-ভাগেই দেশে ঢুকেছে বৃষ্টিসমৃদ্ধ মৌসুমি বায়ু। অধিদপ্তর থেকে বিদায়ী জুন মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টির আভাস দিয়ে বলা হয়েছিল, বৃষ্টিপাতের সম্ভাব্য পরিমাণ গড়ে চারশ’ ৪০ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। তবে জুনে গড়ে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে গড়ে পাঁচশ’ ১৭ দশমিক নয় মিলিমিটার। যা অধিদপ্তরের দেয়া পূর্বাভাসের চেয়ে ১৭ দশমিক আট শতাংশ বেশি। ওই মাসে সারাদেশের মধ্যে সিলেট ও রংপুর বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে কম এবং অন্যান্য বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। চব্বিশ ঘন্টা বা একদিনের হিসাবে গত ৩০ জুন চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ দুইশ’ ১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।