টাকা না দেওয়ায় খুন করে মাদকাসক্ত ‘ভাগ্নে’

51

দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে দূরসম্পর্কের ভাগ্নের হাতে খুন হয়েছেন ব্যবসায়ীর স্ত্রী রোকসানা বেগম (৪২)। সিসি ক্যামরার ফুটেজ দেখে ভাগ্নে মো. সোহেলকে চিহ্নিত করার পর মঙ্গলবার রাতেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি খুনের ঘটনা স্বীকারও করেন।
মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে নগরীর কোরবানিগঞ্জ বাসায় ব্যবসায়ীর স্ত্রী রোকসানাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন সোহেল। হত্যাকান্ডের পর পালিয়ে যাওয়ার সময় রোকসানার ছেলে আবদুল আজিজ (২৩) এবং প্রতিবেশী আব্দুস সোবাহানকে (৬২) ছুরিকাঘাত করেন খুনি। আজিজ বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। আহত আজিজের ভাষ্য এবং কোরবানিগঞ্জের বাসাটির আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে সোহেলকে খুনি হিসেবে চিহ্নিত করে পুলিশ। খুনের পর নিজেকে বাঁচাতে সোহেল স্ত্রীসহ নগরের মিয়াখান নগরের নুরুল হক হাজীর কলোনির বাসা ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে কর্ণফুলী এলাকায় একটি বাসা ভাড়া করেন। রাতে সে বাসা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেন। সোহলের বাড়ি চন্দনাইশে। তার বাবার নাম জামাল উদ্দিন।
সোহেলকে গ্রেপ্তারের পর নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম হত্যাকান্ডের কারণ সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরে বলেন, সোহেল টাকার লোভে কোরবানিগঞ্জের ব্যবসায়ী আবুল কাশেমের বাসায় যান। এ সময় তিনি একটি ছুরি ও খেলনা পিস্তল নিয়ে গিয়েছিলেন। তার ধারণা ছিল কাশেম ব্যবসায়ী হওয়ায় তার বাসায় অনেক টাকা থাকবে। রোকসানাকে একা পেলে সে ছুরির ভয় দেখিয়ে বাসা থেকে টাকা কিংবা মূল্যবান কিছু নিয়ে আসবেন।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার সকালে সোহেল মোটরসাইকেলে কাশেমের বাসায় গিয়ে রোকসানার কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। রোকসানা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সোহেল ছুরি ও খেলনা পিস্তলটি দেখিয়ে তাকে ভয় দেখান। তারপরও রোকসানা টাকা না দেওয়ায় সোহেল তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। এসময় ঘরের আলমারি ভেঙে স্বর্ণালঙ্কার, তেলের ডিও, রোকসানার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও একটি ল্যাপটপ নিয়ে যান। এ সময় বাসার গৃহকর্মী ঢুকে পড়লে তাকে ছুরির ভয় দেখিয়ে একস্থানে বসিয়ে রেখেছিলেন সোহেল। তখন রোকসানার ছেলে আজিজকে ছুরিকাঘাত করা হয়।
আমেনা বেগম বলেন, সোহেল হাতে ছুরি নিয়ে পালানোর সময় ভবনের নিচে এক প্রতিবেশী তাকে বাধা দেয়। তখন সোহেল তাকেও ছুরিকাঘাত করেন। হত্যাকান্ডের আলামত নষ্ট করতে সোহেল বাসাটিতে আগুন লাগিয়ে দেন। ভবনটিতে সিসি ক্যামেরা ছিল। ফুটেজ দেখে সোহেলকে শনাক্ত করে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।
বুধবার রোকসানার স্বামী আবুল কাসেম কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন। এসময় তিনি জানান, গ্রেপ্তার সোহেল তার বোন জামাইয়ের চাচাত বোনের ছেলে। সে হিসেবে সোহেল দূরসম্পর্কের ভাগ্নে হয়। মাঝে মধ্যে সে বাসায় আসতো।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন বলেন, মঙ্গলবার রাতেই সোহেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে রোকসানার বাসা থেকে খোয়া যাওয়া একটি ল্যাপটপ, একটি মোবাইল ফোন, ভ্যানিটি ব্যাগ, ইমিটেশন ও স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া হত্যার সময় ব্যবহৃত একটি খেলনা পিস্তলও উদ্ধার করা হয়।
এদিকে বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম খাইরুল আমীনের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন সোহেল।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান জানান, হত্যাকান্ড ঘটিয়ে সোহেল তার মোটরসাইকেলটি রেখে ঘটনাস্থলের কাছে খাতুনগঞ্জ আমিন মার্কেট এলাকার নিউ পার্ক ভবনে অবস্থান করেছিলেন। সেখান থেকে এক যুবককে বাকলিয়া ময়দার মিল এলাকায় তার বাসায় পাঠিয়ে কাপড় আনান। কাপড় আনার পর তার পরনে থাকা গেঞ্জি, প্যান্ট ও স্যান্ডেল ভবনের তৃতীয় তলার বাথরুমে রেখে জামা-কাপড় পাল্টে ফেলেন। সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পর তিনি ভবন থেকে নেমে সাথে থাকা ব্যাগটি নিচে ফেলে দিয়ে ১০ টাকা দিয়ে একটি বাজারের ব্যাগ কেনেন। সে ব্যাগে মালামালগুলো নিয়ে মইজ্জ্যারটেক এলাকায় চলে যান। মইজ্জ্যারটেকের বাসাটি সোহেল আগেই ভাড়া নিয়েছিলেন। বাসায় গিয়ে সোহেল ফোন করে তার স্ত্রীকে ওই বাসায় যেতে বলেন। সে বাসা থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশের কাছে দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, সোহেল দুয়েক বছর ধরে ইয়াবায় আসক্ত। ব্যবসায় লোকসান দিয়ে হতাশ হয়ে সে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিল। বাকলিয়া মিয়াখান নগর এলাকায় রিকশার যন্ত্রাংশের দোকান ছিলো তার। মাস তিনেক আগে লোকসান হওয়ায় ৭০ হাজার টাকায় দোকানটি বিক্রি করে দেয়। দোকান বিক্রির টাকা ফুরিয়ে যাওয়ার পর অর্থাভাবে পড়ে সে। মঙ্গলবার কোরবানিগঞ্জে রোকসানার বাসায় যাওয়ার আগে সে তিনটি ইয়াবা সেবন করে।