টাইগারপাসের টেম্পু আলকরণ মোড়ে এসে ঘুরে যায়

77

নগরীর শাহ আমানত সেতু (নতুনব্রিজ) থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত টেম্পু চলাচলের কথা কাগজে-কলমে থাকলেও ১৭ নং রুটটি সমাপ্ত হয় কোতোয়ালি আলকরণ মোড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে। অর্থাৎ জনগণকে কষ্ট দিয়ে আর গন্তব্যে যায় না তারা। যার কারণে কোতোয়ালী থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত যান চলাচলে বাধাগ্রস্ত হয়ে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। আর পুলিশের সহযোগিতায় ওই রুটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জানে আলম। তিনি চট্টগ্রাম টেম্পু সমিতি ১০ এর সাধারণ সম্পাদক বলে দাবি করেন।
তবে লাইনম্যান কালু বলছেন, যাত্রী না থাকায় চালকরা টাইগারপাস পর্যন্ত যান না। তাই কোতোয়ালীতে টেম্পু ঘুরিয়ে পুনরায় নতুনব্রিজে চলে আসে।
এ নিয়ে চলতি বছরের ২৩ জুলাই ‘আলকরণে সিন্ডিকেটের অবৈধ টেম্পু স্ট্যান্ড’ শিরোনামে পূর্বদেশে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
ট্রাফিক বিভাগ বলছে, আমরা অবৈধ গাড়ি পেলেই ড্যাম্পিং করে ফেলছি। সিটি কর্পোরেশন বলছে, এখানে কোন স্টেশনের অনুমতি দেয়া হয়নি। তারা স্বেচ্ছায় এখানে টেম্পু স্ট্যান্ড করেছে।
যাত্রী আসমা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ট্রাফিকরা কি এসব চোখে দেখেন না। তাদেরকে তো মনে হয় টাকা দিয়ে কিনে ফেলেছে। আমরা যদি কোন মারাত্মক দুর্ঘটনায় পড়ি, তাহলে দায়ভার কে নিবে?
জানা যায়, ১৭ নং রুটটিতে মাহিন্দ্রা, ম্যাক্সিমা এবং পিয়াজিও টেম্পু চলাচল করে ২৫০টি। প্রত্যেক গাড়িকে লাইনে অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রদান করতে হয়েছে ৩০ হাজার টাকা করে। আবার প্রতিদিন ওয়েবিল বাবদ নতুন ব্রিজ, চামড়ার গুদাম, কোতোয়ালী এবং নিউমার্কেট মোড়ে ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত প্রদান করতে হয়। একজন চালককে ওয়েবিল বাবদ দৈনিক প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দেয়া লাগে সাধারণ সম্পাদক জানে আলমকে। ওয়েবিল না দিলে ওই রুটে গাড়ি চলাচল করতে পারবেন না বলে জানান কয়েকজন চালক।
গতকাল রবিবার শাহ আমানত সেতু (নতুনব্রিজ) গিয়ে দেখা যায়, পেছন দিক থেকে একের পর এক গাড়ি কোতোয়ালীর উদ্দেশে ছাড়ছে। কোন চালকই বলছেন না টাইগার পাস পর্যন্ত যাবেন। যে গাড়িতে যাত্রী পরিপূর্ণ হচ্ছে সেটি যাত্রা করছে। প্রত্যেক গাড়ি যদি লাইনে দাঁড়ায়, তাহলে লাইন ম্যানেজারকে দৈনিক দিতে হয় ৫০ টাকা। পরবর্তীতে ঘুরে এসে পুনরায় একই গাড়ি লাইনে সংযোগ করে। এভাবে প্রতিদিন ২৫০টি গাড়ি থেকে অন্তত ২০০ টাকা করে নিলেও আয় হচ্ছে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মত।
চালক আর লাইনম্যানের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন যা আয় হয়, তা সরাসরি সাধারণ সম্পাদক জানে আলম এবং সভাপতি জাহাঙ্গীরের নিয়ন্ত্রণে থাকে। আবার প্রতিমাসে ট্রাফিক পরিদর্শককে (টিআই) ৭ হাজার টাকা, বাকলিয়া থানাকে ৭ হাজার টাকা এবং চাক্তাই পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে ৫ হাজার টাকা দেয়া লাগে। এতে পুলিশ আর বিরক্ত করে না।
তবে কোতোয়ালীর জিপিও’র সামনের স্ট্যান্ডটির জন্য ট্রাফিক বিভাগ থেকে কোন অনুমতি নেয়া হয়নি। অবৈধভাবে এটি পরিচালনা করছেন জানে আলম।
লাইনম্যান কালু বলেন, আমরা মাত্র ১০ টাকা করে ওয়েবিল নিই। আপনাকে যারা বেশি নিচ্ছি বলছে, তা মিথ্যা। আর টাকাগুলো দিয়ে আমাদের বেতন দেয়া হয়। নতুনব্রিজ থেকে টাইগার পাস পর্যন্ত ১৫ জন লাইনম্যান আছে। আর আমরা ২৪ ঘণ্টা পর্যায়ক্রমে ডিউটি করি।
চট্টগ্রাম অটো টেম্পু সমিতি ১০ এর সাধারণ সম্পাদক জানে আলম পূর্বদেশকে বলেন, আমি এখন মেডিকেলে আছি, তাই এ ব্যাপারে কোন কথা বলতে চাই না।
বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নেজাম উদ্দিন বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। পরিবহন দেখাশোনার দায়িত্ব ট্রাফিক বিভাগের। তারপরও আমার থানার কেউ যদি জড়িত থাকে, তাদেরকে তো ছেড়ে দিতে পারি না। অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাকলিয়া ট্রাফিকের পরিদর্শক মো. সামছুদ্দিন বলেন, আমি নিয়মিত মামলা এবং জব্দ করছি। আপনি জানে আলমের সাথে কথা বলেন। বাকিটা আমি জানি না।
ট্রাফিক উত্তর জোনের পরিদর্শক (প্রশাসন) মহিউদ্দিন খান বলেন, নিউ মার্কেট আর কোতোয়ালী মোড়টাতে গাড়ির চাপ বেশি থাকে বিধায় সার্জেন্ট, টিআই ওইদিকে থাকেন। আলকরণের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ দেয়া হয় না। আর যখন গাড়ির চাপ কম থাকে, তখন আমরা গাড়িগুলো ধরে নিয়ে ‘টো’ করে দিই।
আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কোতোয়ালীতে কোন স্টেশনের অনুমতি নেই। তারা অবৈধভাবে স্টেশন করেছে। আর এটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাবো।
এ ব্যাপারে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) এস এম মোস্তাক আহমেদ খান পূর্বদেশকে বলেন, আমরা এখন প্রত্যেকটি রুট নিয়ে যাচাই-বাছাই করছি। আমাদের কড়া নির্দেশ আছে অবৈধ কোন গাড়ি রাস্তায় চলাচল করতে পারবে না। এতে যদি আমাদের পুলিশ সদস্যও জড়িত থাকে তবে তাদেরও ছাড় দেয়া হবে না।