ঝুঁকিপূর্ণ বায়েজিদ লিংক রোডে চলছে গাড়ি

36

এম এ হোসাইন
নগরীর যানজট সমস্যা সমাধানে বায়েজিদ বোস্তামি থেকে সীতাকুÐের ফৌজদারহাট পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ২০১৫ সালে শুরু হওয়া সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ৯২ শতাংশ। তবে পরিবেশের অনুমোদনের তুলনায় বেশি পাহাড় কাটায় সিডিএকে ১০ কোটি টাকা জরিমানা এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ২০২০ সালে মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। এ অবস্থায় মামলা ও জরিমানার বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় ঝুলে আছে বায়েজিদ লিংক রোড প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজ। এরই মধ্যে পাহাড়ধসের মতো ঘটনায় দুই দফায় সড়কটি বন্ধ করলেও আবার খুলে দিতে বাধ্য হয় সিডিএ। ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত সড়কটিতে দিয়ে চলছে গাড়ি। ঈদে বাড়তি গাড়ির চাপও পড়ছে একই সড়কে। বায়েজিদ লিংক রোডে পাহাড়ধসের শঙ্কায় গতবছরের জানুয়ারিতে সর্বশেষ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তবে সপ্তাহ না সেটি আবার খুলে দেওয়া হয়। বর্তমানে সড়কটি দিয়ে প্রচুর গাড়ি চলাচল করলেও প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয়। বিশেষ করে সড়কের দুই পাশের পাহাড়ের ঢাল লেভেল না করায় মারাত্মক ঝুঁকিতে
রয়েছে সড়কটি। স¤প্রতি চট্টগ্রাম পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৩তম সভায়ও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কমিটির সদস্যরা।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলার জন্য পাহাড় রিটেনশনের কাজ দেরি হচ্ছে। আমরা ড্রয়িং-ডিজাইন জমা দিয়েছি। অনুমতি পেলেই রিটেনশনের কাজ শুরু হবে। পাহাড় ঝুঁকিমুক্ত না করা গেলে গত বছরের মতো এ বছরও ভারী বৃষ্টি হলে সড়কটি দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিতে হবে। অনুমতি না পাওয়ায় পাহাড়ের ঢাল সুরক্ষার কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, বিভাগীয় কমিশনারের সাথে আমাদের মিটিং হয়েছে। ঈদের পরে একটি কমিটি করা হবে। এর মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান হবে আশা করছি। বর্ষার আগে অনুমতি দিলে আমরা দ্রæত কাজ শেষ করবো। যদি এরমধ্যে আমরা অনুমতি না পায় তাহলে বৃষ্টি শুরু হলে আমরা সড়কটি আবার বন্ধ করে দিব। এখন এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। টানেল এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে এই সড়কে চাপ আরো বাড়বে।
এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত বায়েজিদ লিংক রোড ব্যবহার করে দূরপাল্লার বাস চলাচল করার নির্দেশনা দিয়েছে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। গত রবিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে সিএমপির গণসংযোগ শাখা থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দূরপাল্লার সব যাত্রীবাহী বাস বিকল্প সড়ক হিসেবে বায়েজিদ লিঙ্ক রোড ব্যবহার করবে। নগরের ভেতর স্থাপিত বাস কাউন্টারগুলোর সামনে ১০ মিনিটের বেশি কোন বাস যাত্রী তুলতে পারবে না। ঈদ উপলক্ষে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হলে অভিযান চালাবে ট্রাফিক পুলিশ। ঈদের ছুটিকে সামনে রেখে অস্থায়ীভাবে কাউন্টার স্থাপন করে টিকেট বিক্রি করা যাবে না। টেরিবাজার-চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের যানজট নিরসনেও নেওয়া হয়েছে একাধিক পদক্ষেপ। পাশাপাশি মার্কেট কেন্দ্রীয় যানজট নিরসনে সড়কে কোন পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
৬ কিলোমিটারের চার লেনবিশিষ্ট সড়কটি নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২০ কোটি টাকা। একাধিকবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়েও বিভিন্ন জটিলতায় কাজ শেষ করতে পারেনি সিডিএ। সড়কটি নির্মাণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে আড়াই লাখ ঘনফুট পাহাড় কাটার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে ১০ লাখ ৩০ হাজার ঘনফুট পাহাড় কাটা হয়। এজন্য সিডিএকে ২০২০ সালে ১০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি মামলা করা হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এরপর থেকে থমকে আছে সড়কটির কাজ। বর্তমানে সড়কটির পাশের চারটি পাহাড়কে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে ভারী বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের ঘটনাও ঘটতে পারে। এরইমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ খাড়া পাহাড়গুলো নতুন করে কেটে সুরক্ষার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে পুনরায় আবেদন করে সিডিএ। ওই আবেদনে নতুন করে ৩ লাখ ৩২ হাজার ঘনমিটার পাহাড় কাটার অনুমতি চায় সংস্থাটি। এরপর ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো কাটা ও সংরক্ষণ কীভাবে করা হবে, সে বিষয়ে সিডিএর কাছে বিশেষজ্ঞ মতামতসহ প্রতিবেদন চায় পরিবেশ অধিদপ্তর। সেই প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে সিডিএ। পরিবেশের অনুমতি না পাওয়াতে সড়কটিতে কাজ করতে পারছে না সিডিএ। আবার ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত সড়কটি সংস্কার না করাতে ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।