ঝুঁকিতে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা

41

সাইবার নিরাপত্তায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে নিচের সারিতে। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সাইবার নিরাপত্তা গবেষণা প্রতিষ্ঠান কমপারিটেকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাইবার নিরাপত্তার দিক থেকে সব চাইতে ঝুঁকিতে থাকা দশটি দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ।
বিশ্বের মোট ৬০টি দেশের ওপর জরিপ চালিয়ে ঐ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সাইবার নিরাপত্তার দিক থেকে সবচেয়ে অনিরাপদ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। খবর বিবিসি বাংলার
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রায় ৩৬ শতাংশের স্মার্টফোনই ম্যালওয়ারে আক্রান্ত। এছাড়া কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে ম্যালওয়ার আক্রান্তের হার ১৯ দশমিক ১ শতাংশ।
ঐ রিপোর্ট অনুযায়ী সাইবার নিরাপত্তায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ আলজেরিয়া। তালিকায় এরপর যথাক্রমে ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, তানজানিয়া এবং উজবেকি স্থানের নাম রয়েছে। নিরাপত্তার দিক থেকে বাংলাদেশের পরই রয়েছে পাকিস্তান। ঝুঁকির বিচারে তালিকায় চীন ১৩ নম্বরে এবং ভারত ১৫ নম্বরে রয়েছে।
কমপারিটেকের ঐ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে অ্যানড্রয়েড ফোন ব্যবহারকারীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।
এর কারণ হিসেবে তথ্য-প্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপন জানান, বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের গ্রাহক প্রায় দশ কোটি হবার পরও সাধারণ মানুষ এর ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন নয়। আর স্মার্টফোন কিভাবে ব্যবহার করতে হবে এ বিষয়ে মানুষ আসলে এখনও ঠিকভাবে জানে না। দেখা যাবে ফোনের সফটওয়্যার আপগ্রেড করার জন্য কিংবা কোন অ্যাপস, সেটা বিনোদনমূলক বা গেমস হতে পারে, ডাউনলোড করার জন্য মানুষ মার্কেটে বা পাড়ায় ফোনের দোকানে যায়। সেখান থেকে সহজেই গ্রাহকের অজান্তে ম্যালওয়্যার ইনস্টল হয়ে যায় বেশিরভাগ সময়।
ধরুন আপনি কোন সফটওয়্যার নিচ্ছেন বা একটা গান নিয়েছেন ফোনে, তার সঙ্গে একটি ভাইরাস চলে আসলো। কম্পিউটারে যেমন, এক পেনড্রাইভ থেকে অন্য পেনড্রাইভে কিছু নিলে ভাইরাস চলে যায়, ব্যপারটা অনেকটা সেরকম। এক্ষেত্রে অ্যান্ড্রয়েড ফোন ঝুঁকিপূর্ণ হবার কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশে শতকরা ৯৫ শতাংশ স্মার্টফোনই অ্যান্ড্রয়েড প্রযুক্তিতে চলে।
মোবাইল ফোন আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাব অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে নয় কোটি মোবাইল ফোন সক্রিয় রয়েছে। আর সিম সক্রিয় রয়েছে ১৫ কোটি। মোট ফোনের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহার করেন ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষ।
জাকারিয়া জানিয়েছেন, স্মার্টফোনের দুই ধরণের অপারেটিং সিস্টেম রয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে আইওএস। এটি অ্যাপল ইনকর্পোরেটেডের তৈরি একটি মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম, যা এই প্রতিষ্ঠানের তৈরি করা যন্ত্র যেমন আইফোন, ম্যাকবুক ও আইম্যাকে ব্যবহার করা হয়। অন্যটি হচ্ছে, অ্যান্ড্রয়েড। বাকী সব স্মার্টফোন চলে এই অপারেটিং সিস্টেমে। আইওএসের বাজার খুবই নিয়ন্ত্রিত, যেকোন জায়গায় চাইলেই আইওএস আপগ্রেড করা যায় না, বা এই অপারেটিং সিস্টেমে চলা যন্ত্রসমূহে চাইলেই যেকোন অ্যাপস ইনস্টল করা যায় না, ফলে এটি অনেক নিরাপদ।
তিনি বলেন, অ্যান্ড্রয়েড তো ‘ওপেন এন্ডেড’, সবাই ব্যবহার করতে পারে। যেকোন জায়গায় এটি আপগ্রেড করা যায়, এতে যেকোন অ্যাপস ডাউনলোড করা যায়। ফলে ম্যালওয়্যার ইনস্টল হয়ে যেতে পারে যেকোন সময়। এছাড়া মোবাইলে যখন অ্যাপস ডাউনলোড করা হয়, অনেক ব্যবহারকারী এর টার্মস এ্যান্ড কন্ডিশন ঠিকমত পড়ে দেখেন না। ফলে গ্রাহক নিজের অজান্তেই ফোনের মেসেজ, কল রেকর্ড, ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও অনেক কিছুর অ্যাকসেস দিয়ে দেন ঐ অ্যাপসের মালিককে। সেখান থেকেও ঝুঁকিতে পড়ে স্মার্টফোন ব্যবহারকারী।
ঝুঁকি এড়ানোর ব্যাপারে তথ্য-প্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপন বলছেন, প্রথমেই একজন ব্যবহারকারীকে যথার্থ সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে। অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করলে প্রপার অ্যান্ড্রয়েড ডাউনলোড করবো। দ্বিতীয়ত, যখনই কোন অ্যাপস ডাউনলোড করবো, এর শর্ত সমূহ পড়ে ও জেনে নামাতে হবে। এছাড়া ফোনে বা কম্পিউটারে যখনই কোন মেইল আসবে, সেটি ফিসিং মেইল কিনা তা নিশ্চিত না হয়ে ওপেন করা উচিত নয়।
কেবল স্মার্টফোন ব্যবহারকারীই নন, যেকোন কম্পিউটারেও যেকোন সময় ম্যালওয়্যার ইনস্টল হয়ে যেতে পারে। যেমন, তিন বছর আগে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির যে ঘটনা ঘটে, হ্যাকিং এর সেই ঘটনাটি ঘটানো হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমে ম্যালওয়্যার ইনস্টল করে। সে অর্থ উদ্ধারে এ মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রাখা রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার ফেরত পেতে নিউইয়র্কের ম্যানহাটন ডিসট্রিক্ট কোর্টে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।