জয় বাংলা স্লোগানে মুখর টাইমস স্কয়ার

12

জাতীয় শোক দিবসের প্রথম প্রহরে বিলবোর্ডে ভেসে উঠল বাঙালির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি, নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ার প্রকম্পিত হল ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে। টাইমস স্কয়ারের আইকনিক বলড্রপ বিলবোর্ডে বাঙালির জাতির পিতার জীবন ও কর্মের এ প্রদর্শনী চলবে ২৪ ঘণ্টা ধরে। তাতে থাকছে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের অংশবিশেষ, বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের নানা মুহূর্তের ছবি আর তার স্মরণীয় উক্তি। বিশ্বজুড়ে পরিচিত এই আলো ঝলমলে টাইমস স্কয়ারের বিলবোর্ড থেকেই ইংরেজি বর্ষবরণের বলড্রপ দেখা যায় প্রতিবছর। বিভিন্ন দেশের লাখো মানুষ এই টাইমস স্কয়ারে জড়ো হয় প্রতিদিন। এবার ১৫ আগস্ট বিলবোর্ডজুড়ে তারা দেখতে পাচ্ছেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতির কর্মময় জীবনের গল্প।
প্রবাসী বাংলাদেশিরা টাইমস স্কয়ারে সমবেত হয়েছিলেন আগেই। ঘড়ির কাঁটা রাত বারোটায় পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে বিলবোর্ডে ভেসে ওঠে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। সমবেতরা সমস্বরে স্লোগান ধরেন। খবর বিডিনিউজের।
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা, কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসাও উপস্থিত ছিলেন সেখানে।
নিউ ইয়র্কভিত্তিক বিজ্ঞাপনী সংস্থা এনওয়াই ড্রিমস প্রোডাকশন-এর সিইও ফাহিম ফিরোজের উদ্যোগে টাইমস স্কয়ারের এই আয়োজনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসের বীর মুক্তিযোদ্ধারাও শামিল হয়েছেন।
প্রতি ২ মিনিটে ১৫ সেকেন্ড করে পুরো বিলবোর্ডজুড়ে এই প্রদর্শনী চলবে। সব মিলিয়ে ৭২০ বারে মোট তিন ঘণ্টা চলে এই প্রদর্শনী। এ আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করা বাংলাদেশের কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও ছিলেন টাইমস স্কয়ারে।
প্রথম প্রহরে টাইমস স্কয়ারে সমবেতদের অনেকেই বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে এসেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের একটি ব্যানারে ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দন্ডিত রাশেদ চৌধুরীকে অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের দাবি। সেই ব্যানারের পেছনে ছিলেন ফোবানার চেয়ারপার্সন জাকারিয়া চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মিয়াসহ কর্মকর্তারা। নিউ ইয়র্কে বসবাসরত বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, বঙ্গমাতা পরিষদের নেতা-কর্মীরাও ছিলেন সরব।
রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম এ উদ্যোগের জন্য এনওয়াই ড্রিমস প্রোডাকশন-এর সিইও ফাহিম ফিরোজকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আজকের দিনটি শোকের। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ জাতিরজনকের দেখানো পথে হাঁটছে। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অদম্য গতিতে এগোচ্ছে। তাই আমরা বলতে পারি, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে শোককে বাঙালি শক্তিতে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছে।
এভাবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে পারলেই ১৫ আগস্টের ঘাতকদের পরাজিত করা সম্ভব হবে এবং এর মধ্য দিয়েই জাতির জনকের আত্মার প্রতি যথাযথ সম্মান জানানো হবে।
কোভিড মহামারির কারণে মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে তেমন বড় কোনো কর্মসূচি নিতে পারেননি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিরা। সে কারণে টাইমস স্কয়ারের এই আয়োজন প্রবাসীদের মধ্যে বেশ উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে।
এ কর্মসূচি ঘিরে প্রবাসে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মের মধ্যেও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নতুন ভাবনা তৈরি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ফোবানার চেয়ারপার্সন জাকারিয়া চৌধুরী।
বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঘাতক রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্যে মার্কিন প্রশাসনকে অনুরোধ করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন তথা হোয়াইট হাউজ এবং কংগ্রেসে আমরা আরো সোচ্চার হব- এটাই হচ্ছে আজকের শোক দিবসের সংকল্প।
সমবেতদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ফাহিম ফিরোজ বলেন, উদ্যোগটি সফল করতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে মোমেন যেভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন, তা বিনয়ের সাথে স্মরণ করছি। গণমাধ্যমের আন্তরিক সহায়তার কথাও আমি ভুলব না।