জয়-পরাজয়ে পার্থক্য গড়বে ‘তরুণ ভোটার’

34

২০১০ থেকে ২০২০ সাল। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় গত দশ বছরে দুই লক্ষ ৬২ হাজার ৩৭৯জন নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছেন। ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনের চেয়ে এবার ভোটার বেড়েছে এক লক্ষ ৩৭ হাজার ৬০৩ জন। যার মধ্যে গত ২ মার্চ ঘোষিত হালনাগাদকৃত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা থেকে ৩৩ হাজার ৭৪জন ভোটার চসিকের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন। এবারই তারা প্রথমবারের মতো যে কোনো ধরনের নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। বিগত দশ বছরে ভোটার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হওয়া এসব ইয়াং (তরুণ) ভোটাররাই আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ে পার্থক্য গড়তে পারেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি অধ্যাপক মু. সিকান্দর খান পূর্বদেশকে বলেন, ‘ভোটের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমার এ সময়েও পুরানো ভোটারের চেয়ে নতুন ভোটারদের ভোট নিয়ে আগ্রহ একটু বেশিই থাকবে। নতুন ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যাবে বেশি। স্বাভাবিকভাবে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া ভোটাররা যে প্রার্থীর পক্ষেই থাকবেন সেই প্রার্থীই জয়ী হবেন।’
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান পূর্বদেশকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রাপ্ত বয়স্ক ৩৩ হাজার ভোটার নতুন যুক্ত করা হয়েছে। গত নির্বাচনের চেয়ে এবার এক লক্ষ ৩৭ হাজার ভোটার বেড়েছে। সবমিলিয়ে ভোটার সংখ্যা ১৯লক্ষ ৫১ হাজার ৫২জন। এবার ভোটকেন্দ্র বাড়লেও কমানো হয়েছে ভোট কক্ষের সংখ্যা।’
ইসি সূত্র জানায়, ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটার ছিল ১৬ লক্ষ ৮৮ হাজার ৬৭৩জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার আট লক্ষ ৭৩ হাজার ১৬৫ ও নারী ভোটার ছিল আট লক্ষ ১৫ হাজার ৫১৫ জন। ৬৭৩ ভোটকেন্দ্রে চার হাজার ৭৭টি কক্ষে ভোটগ্রহণ করা হয়। ভোট গ্রহণে দায়িত্ব পালনে ছিলেন ৬৭৩ প্রিসাইডিং কর্মকর্তা,চার হাজার ৭৭জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও আট হাজার ১৫৪জন পোলিং কর্মকর্তা।
২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ছিল ১৮ লক্ষ ১৩ হাজার ৪৪৯ জন ভোটার। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার নয় লক্ষ ৩৭ হাজার ৫৩ ও নারী ভোটার ছিল আট লক্ষ ৭৬ হাজার ৩৯৬ জন। ৭১৯টি কেন্দ্রের চার হাজার ৯০৬টি বুথে ভোটগ্রহণ হয়েছিল। ভোট গ্রহণে দায়িত্ব পালনে ছিলেন ৭১৯জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, চার হাজার ৯০৬জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও নয় হাজার ৮১২জন পোলিং কর্মকর্তা। আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মোট ভোটার ১৯লক্ষ ৫১ হাজার ৫২জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার নয় লক্ষ ৯৮ হাজার ৭২৩জন ও নারী ভোটার নয় লক্ষ ৫২ হাজার ৩২৯ জন। গত নির্বাচনের চেয়ে ১৬টি কেন্দ্র বাড়িয়ে এবার ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েচ্ছে ৭৩৫টি। ভোটকক্ষ গতবারের চেয়ে ২০টি কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে চার হাজার ৮৮৬টি। ভোটগ্রহণে দায়িত্ব পালন করবেন ৭৩৫জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, চার হাজার ৮৮৬জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও নয় হাজার ৭৭২ পোলিং কর্মকর্তা।
২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে নতুন বেড়েছিল এক লক্ষ ২৪ হাজার ৭৭৬ ভোটার। এবার বেড়েছে এক লক্ষ ৩৭ হাজার ৬০৩ ভোটার। গত দশ বছরে দুই লক্ষ ৬২ হাজার ৩৭৯জন নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছেন। প্রতিটি ওয়ার্ডেই নতুন ভোটার বেড়েছে। ২০১০ সালে প্রথমবার ভোটার হওয়া অধিকাংশ ভোটারের বয়স ছিল ১৮ থেকে ২০ বছর। এ ভোটারদের বয়স এখন ত্রিশের আশপাশে। গত দুটি নির্বাচন ব্যালটের মাধ্যমেই হলেও এবারই প্রথমবার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ইভিএমে হবে। ইভিএম পদ্ধতির ভোট নিয়ে প্রবীণদের চেয়ে নবীন ভোটারদের মধ্যেই আগ্রহ বেশি। আমেজবিহীন এবারের ভোটে বিভিন্ন ওয়ার্ডে সক্রিয় আছেন তরুন ভোটাররাই। যে কারনে নতুন ভোটারদের ঘিরে প্রার্থীরাও কষছেন নিত্যনতুন ছক।
২০১০ সালের ১৭জুন অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি প্রার্থী এম. মনজুর আলম। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী এম. মনজুর আলমকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দীন। আগামী নির্বাচনে জয়ের মুকুট কোন প্রার্থী পড়বেন তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো ২২দিন।