জড়িতদের খোঁজে মাঠে নামছে সিআইডি

10

হাটহাজারীতে এসিল্যান্ড ও ভূমি অফিসে হেফাজতের তান্ডবে কারা জড়িত তা খুঁজে বের করতে মাঠে নামছে সিআইডি। দুই মামলার প্রতিটিতে ২৫০ থেকে ৩০০ জন অজ্ঞাত আসামিকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করাই হবে সিআইডির আসল কাজ। পুলিশ সদর দপ্তরের সিদ্ধান্তে গত সোমবার ২৩টি মামলার সাথে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় দায়ের হওয়া বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা দুটিও সিআইডিকে দেওয়া হয়। মামলা নম্বর ৫৪ ও ৫৫।
তথ্য মতে, সদর ভূমি অফিস ও এসিল্যান্ড অফিসে ভাঙচুর, লুটপাট ও নথিপত্র জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় দায়ের হওয়া বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা দুটির তদন্তভার পাওয়ার কথা স্বীকার করে সিআইডি চট্টগ্রামের বিশেষ পুলিশ সুপার শাহনেওয়াজ খালেদ বলেন, ‘আমরা হাটহাজারী থানায় দায়ের হওয়া বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৫৪ ও ৫৫ নম্বর মামলা দুটির তদন্তভার পেয়েছি। এখনও মামলার ডকেট পুলিশের কাছ থেকে পাইনি। ডকেট পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা করে তদন্ত শুরু করব।’ প্রসঙ্গত : ২৬ মার্চ হেফাজতের তান্ডবের পাঁচদিন পর গত ৩১ মার্চ চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানা ভবনে হামলা, ভূমি অফিসে ভাঙচুর, ডাকবাংলোয় আগুন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ছয়টি ও পটিয়াতে একটি মামলা করে পুলিশ। হাটহাজারী থানায় চারটি ও পটিয়ায় একটি মামলার বাদী পুলিশ। আর ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা দায়ের করেন দুটি মামলা। তবে প্রায় দুই হাজার জনকে আসামি করা হলেও কারো নাম নেই এসব মামলায়। সাত মামলার সব আসামিই অজ্ঞাত। ওই সময় থেকে মামলাগুলো তদন্ত করছিল পুলিশ। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ।
এ বিষয়ে হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাদাত হোসেন জানান, ‘আমাকে বিষয়টি খবর নিয়ে দেখতে হবে। কোন কোন মামলা সিআইডিকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২৬ মার্চ ও ২৭ মার্চ হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্ররা দু’দিন ধরে নারকীয় তান্ডব চালায়। তারা ওই সময় হাটহাজারী উপজেলার সহকারী কমিশনারের (ভূমি) ৫৫ লাখ টাকা দামের গাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এসিল্যান্ড অফিসের সব নথি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তছনছ করা হয় সব আসবাবপত্র। সরকারি ডাকবাংলোতে আগুন দেওয়া হয়। সেখানে থাকা তিনটি মোটরসাইকেলও আগুনে পুড়ানো হয়। এছাড়া সদর ভূমি অফিস তছনছ করার পাশাপাশি জমির খতিয়ান পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এই অফিসের অধীন পৌরসভা, মেখল ও ফতেপুর ইউনিয়নের জমির খতিয়ান ও খাজনার সব রেকর্ড ছিল। ডাকবাংলোর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করেছে জেলা পরিষদ। তবে এসিল্যান্ড অফিস ও সদর ভূমি অফিসে হেফাজতের নেতাকর্মীদের তান্ডবে শুধুমাত্র ভৌত অবকাঠামোগত ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭০ লাখ টাকা।
অন্যদিকে দুই অফিসের খতিয়ান-কাগজপত্রসহ যা ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। এসবের জন্য ওখানকার সেবা প্রার্থীকে অনেক বছর ভোগতে হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা। থানায় হামলা, ভাঙচুর, ডাকবাংলোতে অগ্নিসংযোগ, পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে পুলিশের চার মামলার পাশাপাশি গত ৩১ মার্চ সদর ভূমি অফিসের তফশীলদার আকতার কামাল চৌধুরী ও এসিল্যান্ড অফিসের নাজির একরাম পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা এ দুই মামলায় (মামলা নম্বর ৫৪ ও ৫৫) অজ্ঞাত ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এর প্রতিবাদে হাটহাজারীতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা থানায় হামলা চালালে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি ছোড়ে। হাটহাজারীতে চারজন নিহত হন। নিহতের জেরে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা হাটহাজারী থানা, ডাকবাংলো, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে হামলা চালান। তারা হাটহাজারী-খাগড়াছড়ি সড়কের ওপর দেয়াল তৈরি করে তিনদিন অবরোধ করে রাখেন। পরি প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অবরোধকান্ডের সুরাহা হয়। ওই রাস্তা দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।