জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা জরুরি

8

বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমতে থাকলেও বাংলাদেশে হঠাৎ করে দাম বৃদ্ধি করার ফলে দেশব্যাপী এক ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে শনিবার দেশব্যাপী পরিবহন ধর্মঘট চলে। পাম্পগুলো গাড়িতে তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। সরকার কালবিলম্ব না করে গাড়ির চাকা স্বাভাবিক রাখতে গাড়ি ভাড়াও বাড়িয়ে দেয়। যার সামগ্রিক প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে। বেড়ে যাবে জনদুর্ভোগ। এ অবস্থায় সরকারের উচিৎ একলাফে অস্বাভাবিক দাম না বাড়িয়ে জ্বালানী তেলের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা। উল্লেখ্য যে, সরকার গত শুক্রবার রাত থেকে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম ৪২-৫২ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে। এক লাফে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর এই সিদ্ধান্তকে সুচিন্তিত বলে মনে হয়নি। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, দেশের সকল ধরনের পরিবহনের বড় একটি অংশই চলে ডিজেলে। ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেনের দাম বাড়ার ফলে পরিবহন খরচ এখন আগের চেয়ে বেড়ে যাবে। এতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আরো বৃদ্ধি পাবে। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে, মানুষের ত্রয়ক্ষমতা কমে যাবে। বিশেষ করে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষজনের দুর্ভোগ বাড়বে। এককথায় শিল্প উৎপাদন, পরিবহন খাত সবকিছুতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে চাহিদা কমছে বলে বেশ কিছুদিন ধরে নিম্নমুখী তেলের দাম। যা গত শুক্রবার কিছুটা বাড়লেও ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। বলা হচ্ছে, পাশের দেশসহ বিভিন্ন দেশে নিয়মিত তেলের মূল্য সমন্বয় করা হয়। ভারত গত ২২ মে থেকে কলকাতায় ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ৯২ দশমিক ৭৬ রুপি এবং পেট্রোল ১০৬ দশমিক ৩ রুপি নির্ধারণ করেছে। এই মূল্য বাংলাদেশি টাকায় যথাক্রমে ১১৪ দশমিক ০৯ টাকা এবং ১৩০ দশমিক ৪২ টাকা। অর্থাৎ বাংলাদেশে কলকাতার তুলনায় ডিজেলের মূল্য লিটার প্রতি ৩৪ দশমিক ৯ এবং পেট্রোল লিটারপ্রতি ৪৪ দশমিক ৪২ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছিল। তাই সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তেল পাচার হওয়ার আশঙ্কা থেকেও জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে সরকারকে হয়তো দাম বাড়াতে হতো। কিন্তু একবারে এত বেশি বাড়ানো কতটা যুক্তিসঙ্গত? জানা গেছে, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া পেট্রোলের দাম ৮৬-১৩০ টাকা এবং অকটেনের দাম ৮৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে বেড়েছে এক লাফে ৩৪ টাকা। অকটেনের দাম বেড়েছে লিটারে ৪৪ টাকা। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পেট্রোলের দাম। প্রতি লিটারে এর দাম বাড়ে ৪৬ টাকা। গত শুক্রবার থেকে এ দাম কার্যকর শুরু হয়েছে। জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধির ফলশ্রæতিতে পরের দিন শনিবার অফিসহ নিত্যকাজে বের হওয়া মানুষের ভোগান্তির চিত্রও গণমাধ্যমে উঠে আসছে। দেশব্যাপী পরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন জেলায় গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। আরো নানামুখী সংকট হয়তো আমাদের সামনে দেখতে হবে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব বহুমাত্রিক। এতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় যেমন বাড়ে তেমনি সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতির ওপরও এর প্রভাব পড়ে। এমনকি ব্যয় বাড়ে কৃষি পণ্য উৎপাদনেও। কারণ ডিজেলের ব্যবহার সেখানে অপরিহার্য। ফলে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির এই প্রভাব কৃষিকাজেও পড়বে। বৈশ্বিকভাবে জ্বালানি তেলের দামের ওঠানামা, অস্বাভাবিক। এটি আসলে কতদিন চলবে সেটার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলে আমাদের দেশে দাম কমার প্রবণতা দেখা যায় না।
জ্বালানি তেল নয় শুধু যেকোন পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পরে দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি বা দাম কমলেও দেশের বাজারে আর দাম কমানোর কোন লক্ষণ দেখা যায় না। আমরা আশা করি, সরকার যে কারণই হোক জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে, তবে জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত বিবেচনা করে সহনীয় পর্যায়ে রাখার উদ্যোগ নিলে দেশের জনগণের কষ্ট লাঘব হবে।