জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে না

116

লোকসান নিয়েই গেল বছর শুরু করেছিল বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। তবে বছর শেষে ব্রেক ইভেন্ট পয়েন্টে পৌঁছেছে প্রতিষ্ঠানটি। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও হ্রাসের তারতম্যের কারণে বছরের বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানটি ভিন্নভিন্ন চিত্রের মুখোমুখি হয়। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করতে তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবও নিয়েছিল বিপিসি। তবে বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য হ্রাসের কারণে তেলের দাম আর বাড়ানো হচ্ছে না।
জানা যায়, বিপিসি ২০১৮ সাল শুরু করেছিলো লোকসান দিয়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে গেল বছরে কয়েক দফায় তেলের দাম উঠানামা করলেও দেশিয় বাজারে দাম স্থিতিশীল ছিল। যার কারণে লোকসানের মাত্রাও কম ছিল। তবে বছরের মাঝামাঝিতে এ লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় দৈনিক ৩০ কোটি টাকা পর্যন্ত। টানা কয়েকমাস আন্তর্জাতিক বাজারে দামের উর্ধ্বগতির কারণে দেশিয় বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। তবে নির্বাচন সন্নিকটে চলে আসায় তখন সে প্রস্তাব স্থগিত রাখে মন্ত্রণালয়। নির্বাচন পরবর্তীতে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার কথা ছিলো। কিন্তু গেল বছরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে কমতে থাকে তেলের দাম। একমাসে বিপিসি লোকসানের বদলে লাভের মুখ দেখতে যাচ্ছে। বর্তমানে বিপিসি ব্রেক ইভেন্ট পয়েন্টে এসে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় জ্বালানি তেলের দাম আপাতত না বাড়ানোর কথাও জানিয়েছেন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (ফাইন্যান্স) মনি লাল দাশ বলেন, বর্তমানে আমরা ব্রেক ইভেন্ট পয়েন্টে আছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দু’এক টাকা করে লাভও হচ্ছে। এখন আর তেলের দাম বাড়ানো হবে না। মাঝখানে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল, তখন সমন্বয়ের কথা ছিলো। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমেছে।
দেশে ডিজেল, ফার্নেস অয়েল, পেট্রোল, অকটেন, জেট ফুয়েল ও কেরোসিন এই ছয় ধরনের জ্বালানি ব্যবহার হচ্ছে। তাছাড়াও এলডিও, জেবিও, লুব, এলপিজি, বিটুমিন, এমটিটি, এসবিপি এসব তেল আমদানি ও বিক্রি করে করে থাকে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিপিসি মোট ৫৮ লাখ ৮৮ হাজার ৭৩০ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল বিক্রি করে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিক্রি করে ৬৯ লাখ ৪৮ হাজার ৩৩৬ মেট্রিক টন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপিসির এক কর্মকর্তা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে গতবছর জ্বালানি তেলের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। তখন আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করার জন্য তেলের দাম পুনঃনির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। নির্বাচনের কারণে প্রস্তাবটি তখন কার্যকর করা হয়নি। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে আবার দাম কমে গেছে। ফলে দাম পুনঃনির্ধারণের আর প্রয়োজন নেই। এখন কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিপিসির লাভ হচ্ছে।
বর্তমানে দেশে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত মিলে মোট জ্বালানি তেলের চাহিদা ৫৫ লাখ মেট্রিক টন। এরমধ্যে দেশের একমাত্র তেল শোধানাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধন ক্ষমতা হচ্ছে ১৪ লাখ মেট্রিক টন। পরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাকি চাহিদা আমদানির মাধ্যমে মেটানো হয়। বর্তমানে দেশের বাজারে লিটার প্রতি পেট্রোল ৮৬ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা, কেরোসিন ও ডিজেল ৬৫ টাকা। এ ছাড়া লিটার প্রতি ফার্নেস অয়েলের মূল্য ৪২ টাকা।