জ্বালানিতে গতি আনতে গুচ্ছ পরিকল্পনা

40

জ্বালানিতে গতি আনতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে একই মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের কাজ দুই রকম অবস্থায় দেখা গেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ বিশেষ আইনের সুযোগ নিয়ে বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করলেও জ্বালানিখাত তা করে উঠতে পারেনি। জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ বছর জ্বালানি খাতের গতি বাড়াতে নেওয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। পিএসসি (প্রোডাকশন শেয়ারিং কনট্যাক্ট) সংশোধন ও মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভের কাজ দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, কয়লা তুলতে বড়পুকুরিয়ায় সমীক্ষা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে কাজ করতে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ বা কৌশলগত অংশীদার হিসেবে কাজ করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, এমনভাবে এসব অংশীদার নেওয়া হবে, যেন তাদের যেখানে প্রয়োজন সেখানে অংশীদার হিসেবে তারা কাজ করতে পারেন।
জ্বালানি বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের সাগরে এবং পাহাড়ে গ্যাস তোলার অভিজ্ঞতা নেই। এসব জায়গায় এদের অংশীদার হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এজন্য রাশিয়ান গ্যাস কোম্পানি গ্যাজপ্রম-এর সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে’। তিনি আরও বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে জ্বালানি খাত শুধুমাত্র আমদানির প্রক্রিয়া চালিয়ে গেছে। দেশীয় কোম্পানি বাপেক্সকে বসিয়ে রেখে কাজ দেওয়া হয়েছে বিদেশি কোম্পানিকে। এতে দেশীয় জ্বালানির উত্তোলন যে পরিমাণ বাড়বে বলে আশা করা হয়েছিল, তা হচ্ছে না। ক্রমান্বয়ে দেশে জ্বালানির চাহিদা আরও বেড়ে গেছে। এতে অতিরিক্ত আমদানিনির্ভর হতে হচ্ছে’। খবর বাংলাট্রিবিউনের
জ্বালানি বিভাগের যুগ্মসচিব নাজমুল আহসান বলেন, ‘তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কাজের গতি এমনিতেই কম থাকে। এখানে অর্থনৈতিক ঝুঁকি একটি বড় বিষয়। আমাদের মতো দেশের পক্ষে এই ধরনের ঝুঁকি নেওয়া কঠিন। বাপেক্সের কাজের গতি বাড়াতে বিদেশি অভিজ্ঞ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপের মাধ্যমে কাজ করার চিন্তা করা হচ্ছে’।
তিনি আরও দাবি করেন, ‘বাপেক্স আগের চেয়ে কাজে অনেক দক্ষ হয়েছে। এই দক্ষতা বাড়াতে বিদেশ ভ্রমণ নয়, দেশের মধ্যেই বিদেশি বিশেষজ্ঞ নিয়ে এসে প্রশিক্ষণের চিন্তা করা হচ্ছে। এতে আমাদের অর্থ এবং সময় দুইই বাঁচবে’।
বাপেক্স সূত্র জানায়, গত বছর আজারবাইজানের সঙ্গে বাপেক্স যৌথভাবে কাজ করতে চুক্তি করার পরিকল্পনা করলেও শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না পাওয়ায় এই চুক্তি করা যায়নি। যদিও তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে করা উৎপাদন বন্টন চুক্তিতে (পিএসসি) বাপেক্সেকে ১০ ভাগ শেয়ার দেওয়ার কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু এরপরও বাপেক্স আন্তর্জাতিক বিদেশি এসব তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে কোনও কাজে যুক্ত হতে পারে না।
এদিকে, দেশে জ্বালানি সংকট থাকলেও এখনও ব্যাপকভাবে কয়লা তোলা হচ্ছে না। এর আগে কয়লা তোলার উদ্যোগ নেওয়া হলেও দেশের উর্বর ফসলী জমির কথা চিন্তা করে কয়লা তোলা থেকে সরে আসে সরকার। তবে বড়পুকুরিয়ার উত্তরে উন্মুক্ত খনি করার একটি আলোচনা চলছে। ইতোমধ্যে সমীক্ষায় উন্মুক্ত খনন সম্ভব বলে জানানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলা’র চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বলেন, ‘এখনও সমীক্ষার কাজ শেষ হয়নি। শেষ হলেই বলা যাবে কী হবে না হবে’। এদিকে আরও জানা গেছে, সাগরে মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভের ঝুলে থাকা উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। এই প্রক্রিয়ায় সাগরের বøকগুলোতে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে জরিপ করা হবে। জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে বিদেশি কোম্পানিগুলো সম্ভাবনা দেখলে এখানে তেল গ্যাস উত্তোলন করতে আসবে। এছাড়া, ঝুলে থাকা পিএসসির অনুমোদন পেলে দ্রæত সাগরের বøক ইজারা দেওয়া সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পেট্রোবাংলা’র চেয়ারম্যান বলেন, ‘পিএসসি চূড়ান্ত হলেই তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য আমরা দ্রুত দরপত্র আহ্বান করবো। এতে কাজের গতি বাড়বে। অন্যদিকে, পিএসসি চূড়ান্ত হওয়ার পাশাপাশি মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভেও করা দরকার। তাতে বিদেশি কোম্পানিগুলো দরপত্র কিনতে এসে আমাদের দেশের তেল-গ্যাসের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাবে, এতে করে কোম্পানিগুলোকে আকৃষ্ট করাও আমাদের জন্য সহজ হবে’।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জ্বালানি খাতের একমাত্র সাফল্যের জায়গা এখন এলএনজি। বর্তমানে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাস চট্টগ্রামে সরবরাহ করা হচ্ছে। এই সরবরাহ বাড়াতে আগামি এপ্রিল মাসে আরও ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সামিট গ্রুপ মহেশখালীতে আলাদা এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের মাধ্যমে এই গ্যাস সরবরাহ করবে বলে জানা যায়। এপ্রিলে এলএনজি সরবরাহ বাড়লে তা জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে রাজধানীর দিকে সরবরাহ করা যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।