জ্ঞানতাপস ফজলুল হক হেঁটে চলেছেন সীমানা পেরিয়ে

8

 

মনে হয়েছিল অনেক কিছুই লিখব। লিখতে বসে দেখলাম কলমটাই যেন শেকড় গজিয়েছে। কোনোক্রমেই সে স্থানচ্যুত হয় না। কোনো স্মৃতি রোমস্থন করতে গেলে হাজারটা স্মৃতি এসে ভিড় জমায় মস্তিষ্কে। ফলে স্মৃতিকাতর হয়ে সবকিছু গুলিয়ে ফেলি। যাকে নিয়ে লিখছি তিনি আমাদের প্রিয়জন শিক্ষক অধ্যক্ষ ফজলুল হক। তাঁর আজ ৭৮তম জন্মদিন। শ্রদ্ধা ও অকৃত্রিম ভালোভাসা তাঁর প্রতি।
পঞ্চাশ পেরুলেই অর্ধশত, আর একাত্তর পেরুলে? একাত্তর পেরুলে কি একটা মানুষের প্রদেয় আর প্রাপ্তির হিসাব টানার সময় হয়ে যায়? একাত্তরের বেশ আগেই তো মানুষের মধ্যে বয়সের সীমারেখা। অন্য মানুষের যাই হোক একজন শিক্ষক ও কলামিস্ট-এর জন্য একাত্তর তো সবে সকল জীবন-সুধা সঞ্চয়ের শেষ ধাপ। এরপর তো তিনি দিতে থাকবেন, তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে একের পর এক প্রকাশ করে যাবেন। তাইতো বলতে হয়, একজন শিক্ষকের বাঁচা উচিত তিনশ বছর। একশ বছর যাবে তাঁর অভিজ্ঞতা অর্জনে, আর বাকি জীবন তিনি দিয়ে যাবেন। এ কথা আমার নয়, মনীষীদের। তো যাই হোক, ষাট কিংবা সত্তর বছরে আর যে যাই করুক ফজলুল হক স্যারকে আমি দেখছি তারুণ্যের উদ্দীপ্ততা নিয়ে শিক্ষকতা ও সংগঠনের নানা কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে। শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছেন বেশ কয় বছর হয়ে গেল। কিন্তু পত্রিকার পাতাজুড়ে লেখালেখিতে স্যারকে প্রতিদিন দেখতে পেতাম, যেন তিনি অবসরে যান নি। কিন্তু না, এক পর্যায়ে চোখের দৃষ্টি শক্তির কারণে আগের মতো পত্রিকার পাতায় আর দেখা যায় না। ফলে স্যারের ক্ষুরধার কলাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পাঠক সমাজ।
জ্ঞানতাপস অধ্যক্ষ ফজলুল হক। তিনি শুধু শিক্ষকতার পেশায় ছিলেন, তা কিন্তু নয়। একই সাথে ক্ষুরধার লেখক। দৈনিক আজাদীতে তাঁর ধারাবাহিক কলাম ‘বহমান সময়’ সব ধরনের পাঠককে আকৃষ্ট করেছে দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকা প্রকাশের শুরু থেকেই লিখেন ‘সময় সোপান’ শিরোনামে কলাম। এছাড়া দৈনিক পূর্বকোণ, দৈনিক সুপ্রভাত পত্রিকারও তিনি নিয়মিত কলাম লিখেছেন দীর্ঘ বছর ধরে। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে এসব কলামগুলো পত্রিকার পাতায় আর দেখা যায় না। তিনি অসুস্থ। দৃষ্টিশক্তি নিয়ে চিকিৎসাধীন আছেন আগস্ট ২০১৯ সাল থেকে। পরের মাস সেপ্টেম্বরে পা পিচলিয়ে পড়ে আবারো চোখে আঘাত লাগে। অবশেষে চিকিৎসার জন্য ভারতের হায়দারাবাদের এলভিআই হাসপাতালে একমাস চিকিৎসাধীন থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলেও চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ফেব্রæয়ারি ২০২০ সালে আবারো একই হাসপাতালে যেতে হয়। কিন্তু তৃতীয়বার যখন উক্ত হাসপাতালে চেকআপের জন্য যাওয়ার কথা তখন সমগ্র বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি। ফলে আর যাওয়া হলো না। যে কারণে অসুস্থ চোখ নিয়ে লোকচক্ষুর অন্তরালে নিজ বাসাতেই সময়ক্ষেপণ করছেন তিনি। তিনি জন্মেছেন ১৯৪৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। সে হিসেবে আজ ৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে ৭২-এ পা দিবেন। শুরুতেই বলেছি একজন শিক্ষকের বাঁচা উচিত তিনশ বছর। একশ বছর যাবে তাঁর অভিজ্ঞতা অর্জনে, আর বাকি জীবন তিনি দিয়ে যাবেন। তারপরও বলতে হয় সমকালীন এ বয়সী মানুষ পূর্ণমাত্রায় বিশ্রামে থাকার কথা। আমাদের চৌদিকের পরিবেশ তাই বলে। স্যারের জন্য বয়স কোন ফ্যাক্টর ছিল না, কাল হয়ে দাঁড়ালো চোখের অসুস্থতা। অসুস্থতাজনিত কারণে লেখালেখিও আর হচ্ছে না। ফলে স্যারের ক্ষুরধার কলাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পাঠক সমাজ। স্যারের সাথে মাঝে মধ্যে ফোনে আলাপ হয়। আলাপ-চারিতায় তিনি মনে সাহস নিয়ে বলেন একটু সুস্থ হলেই আবার কলম ধরবেন। পত্রিকায় ফজলুল হক স্যারের মতো কলাম লেখক ব্যক্তি বর্তমান সময়ে খুবই অভাব। তিনি লিখেন সামাজিক প্রেক্ষাপটি দৈনন্দিন ঘটমান বিষয়গুলো নিয়ে। এ ধরনের দায়িত্ব নিয়ে প্রতি সপ্তায় চার চারটি পত্রিকায় কলাম লেখা খুবই দুরুহ কাজ। এই দুরুহ কাজটি তিনি করে আসছেন কয়েকযুগ ধরে। কিন্তু অসুস্থতার কারণে এখন আগের মত নিয়মিত লিখতে পারেন না।
আমাদের সমাজে নানা ধরনের মানুষ দেখার অভিজ্ঞতা আমার আছে। বলতে গেলে প্রচুর। দেখেছি ভালোমানুষ, মন্দ মানুষ, হিংগ্র মানুষ, হৃদয়বান মানুষ, উল্টা-পাল্টা মানুষ, সোজা সরল মানুষ। দেখা আছে এমনকি রাজাকার, আল-বদরদের। তবে বিস্তর মানুষ দেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে আমার স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে এতোটা বয়সে সত্যিকারের পন্ডিত মানুষ আমি কমই দেখেছি। বেশি দেখেছি উচ্চ ডিগ্রিধারী, অহংকারী, যারা কথায় কথায় ডিগ্রির অহংকার করে। আসলে জ্ঞানী তারাই যারা জ্ঞান বিতরণে সমাজ ও জাতির কল্যাণ বয়ে আনে। এমনই একজন পÐিত মানুষ অধ্যক্ষ ফজলুল হক। ফজলুল হক জন্মগ্রহণ করেছেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলা নিকেতন চট্টগ্রামের হালিশহরে। এখানে সাগর, নদী ও পাহাড়ের অনাবিল মিলন নিসর্গকে করেছে স্বপ্নীল-চিত্তাকর্ষক। মানুষের মনকে করেছে উদার, মহান ও ভাবুক। শুধু তাই নয় তিনি যেখানে জন্মেছেন তার অনতিদূরেই বঙ্গোপসাগর। তাই তাঁর মনটাও সাগর সমান। তাই প্রফেসর ফজলুল হক সাহেবের শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের সোনালি দিনগুলো নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের মধুময় আবেশে সিক্ত হয়েছে। তাঁর হৃদয়ের অনাবিল উচ্ছ¡লতা এসেছে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালা থেকে। প্রফেসর ফজলুল হক সাহেব সরাসরি আমার শিক্ষক না হলেও আমি প্রথম দেখা থেকে স্যার হিসেবেই সম্বোধন করে আসছি। তিনি শুধু আমারই স্যার নন, সর্বমহলের, সর্বজনেরই স্যার। একজন সংস্কৃতিবান ও সংস্কৃতিপ্রাণ মানুষ হিসেবে ফজলুল হক স্যারের আলোকিত সত্তার সন্ধান করার প্রয়োজন আছে বৈকি? শত সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, সমাজ উন্নয়ন সংস্থা তাঁর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বিকশিত হচ্ছে। তিনি একজন সাংস্কৃতিক যোদ্ধা ও বোদ্ধা। মন ও মননশীলতায় সমাজের আরও দশজনের কাছ থেকে তাঁর পার্থক্য নান্দনিক, ব্যতিক্রমী ও সুস্পষ্ট। তিনি একজন পরিশীলিত, পরিমিত বিদগ্ধ ও সচেতন মানুষ হিসেবে পরিচিত।
অধ্যক্ষ ফজলুল হক ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন মেধাবী। ১৯৬৫ সালে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কমার্স কলেজে। ওই বছরেই তিনি কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচনে কমনরুম সেক্রেটারি পদে নির্বাচনে জয়লাভ করেন। বলতে গেলে তখন থেকেই তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। যেখানে এম এ আজিজের জন্ম সেখানেই তিনি জন্মেছেন। তাঁরই নিকট আত্মীয় চট্টলবীর এম এ আজিজের হাত ধরেই পড়া-লেখার পাশাপাশি রাজনীতিতে পা রাখেন তিনি। কলেজ জীবনে প্রবেশ করে তৎসময়ের প্রখ্যাত ছাত্রনেতা আবু ছালেহ, আবুল কালাম আজাদ, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, লোকমানুল মাহমুদ, মোখতার আহমদ, ফেরদৌস আহমদ কোরেশী, সাবের আহমদ আসগরী, শায়েস্তা খান, এস এম ইউসুফসহ অনেকের সংস্পর্শ লাভ করেন তিনি। ১৯৬৫ সালে ডবলমুরিং থানা আঞ্চলিক ছাত্রলীগ কমিটি গঠিত হলে তিনি উক্ত কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। তারপর কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সেক্রেটারি হন। তখন ঐ কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন শাহ ই জাহান চৌধুরী। পরবর্তীতে তিনি কমার্স কলেজের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তখন শেখ মোহাম্মদ ইব্রাহিম কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি। ৬ দফা আন্দোলনে তাঁদেরই নেতৃত্বে কমার্স কলেজ ও হোস্টেল হয়ে ওঠে আন্দোলন সংগ্রামের দুর্গ। আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাঁদের সাথে যুক্ত হতেন এম এ মান্নান, মহিউদ্দিন চৌধুরী, ইদ্রিচ আলম, আয়ুব বাঙালি, কিবরিয়া, সুলতানুল কবির চৌধুরীসহ অনেকে। বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রাম সফরে আসলে কমার্স কলেজের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুকে আগ্রাবাদের বাদামতলীতে সংবর্ধিত করেছিলেন তিনি ও তাঁর সাথীরা। সংবর্ধনা সভায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘বিপ্লবী আগ্রাবাদ’। এ সময় এম এ আজিজ এক দফার কথা বলতে শুরু করেন। ছয় দফা না মানলে এক দফা। নেতৃবৃন্দের এহেন আহবানে তখন ফজলুল হক ও তাঁর সাথী নেতৃবৃন্দরা একটি স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। তখন ফজলুল হকসহ সকল ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে হুলিয়া। তাঁরা হুলিয়া মাথায় নিয়ে গোপনে কাজ করতে থাকেন।
উল্লেখ্য যে, ছেষট্টির ৬ দফা ঘোষণা-উত্তর সঙ্কট পেরিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থা তখন ভালোর দিকে। জনসমর্থন ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছিল। সে বছরই শেখ সাহেবের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় জনতা দ্রæত আওয়ামীমুখি হতে থাকে। পরবর্তীতে ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান ও শেখ মুজিবের মুক্তি, ’৭০ এর সাধারণ নির্বাচন ও আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়, ৭১-এ ক্ষমতা হস্তান্তরে পশ্চিমাদের ধানাই-পানাই, এদেশবাসীর অসহযোগ ও বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা এবং মুক্তিযুদ্ধের শুরু। এর প্রতিটি পর্বে তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব আন্তরিকতার সঙ্গে পালনে ব্রতী ছিলেন তিনি। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ যখন রক্তে ভিজে যায় দেশ, সে মুহূর্ত থেকে পুরো নয় মাস দামাল ছেলে ফজলুল হক যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন মাতৃভূমিকে শত্রæমুক্ত করার যুদ্ধে। আমরা গড়ব নতুন দেশ, স্বদেশের নাম বাংলাদেশ।
মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গ নিয়ে মুখোমুখি হলে স্যার বলেন- ‘২৫ মার্চের পর বিহারী, রাজাকার, আলবদর, আল শামসের তৎপরতা বেড়ে যায়। স্থানীয় টাউট দালালরা মানুষকে বিশেষ করে হিন্দুদের কষ্ট দিতে শুরু করে। আমাদের বাড়ির উত্তর পূর্ব দিকে আধা মাইলের মধ্যে ইপিআর ক্যাম্প, ক্যাম্পের পাশেই বিহারী কলোনি। বিহারীরা নৃশংস। তারা বাঙালিকে হিন্দু বলে গালি দিত। ২৫ মার্চ থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থক তরুণ, ইপিআরদের তৎপরতার কারণে বিহারীরা চুপ ছিল। এপ্রিলে পাক সেনারা ইপিআর ক্যাম্প দখলে নেয়ার পর বিহারীদের হামলা বেড়ে যায়। মধ্য এপ্রিলে একজন স্থানীয় দালালের প্ররোচনায় বিহারী ও পাক বাহিনীর এক বিশাল দল সন্ধ্যা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত আমাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। ৮ জন মানুষ হত্যা করে। আমাদের মনে ছিল প্রতিশোধ স্পৃহা। আমার জীবনের প্রধান ব্রত হয়ে উঠেছিল যেখানে পাই পাকসেনা, পাকিস্তানি দালাল ও বিহারীদের হত্যা করব। মুক্তিযুদ্ধ করেছি বলে কোন সুবিধা রাষ্ট্রের কাছ থেকে নেয়ার কোন অভিলাষ আমার নেই। মুক্তিযুদ্ধ আমাকে সুযোগ করে দিয়েছিল, আমার পরিবারের লোকদের হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার। এখনো মাঝে মাঝে আমার মাথায় খুন চাপে, একজন পাকিস্তানী অধ্যাপক বলেছিলেন- এ ইন নাইনটিন সেভেনটি ওয়ান, বেংগলি লিভারেশ ওয়ার ওয়াজ নাথিং, বাট ইট ওয়াজ কিলিং অফ বিহারী মুসলিমস। আমি তাকে বলেছিলাম, আমি এখনো বিহারী মারতে চাই। তিনি বললেন, মানবতা কোথায় যাবে? আমি বলেছিলাম, যখন তোমার পাকিস্তানী জল্লাদরা আমাদের ৩০ লক্ষ মানুষ মেরেছে, আমাদের বাঙালি মেয়েদের রেফ করেছে তখন তোমার মানবতা কোথায় ছিল? তোমার ধর্ম কোথায় ছিল? তোমরা কেউই মানুষ না, তোমাদেরকে হত্যা করাই- সত্যিকারের মানুষের ব্রত হওয়া উচিৎ। যেমন মানুষ সাপ বিচ্ছু দেখলে হত্যা করে। যখন আমি দেখি আমার রাষ্ট্র এক সময়ের স্বাধীনতা বিরোধীকে দেখে চিনতে পারেনা, আজ তার ভোল পাল্টানো রূপ দেখে মজে যায়- তখন আমি আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলতে চাইনা। মুক্তিযুদ্ধ ছিল অকৃত্রিম। আজ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা এসে জুটেছে। মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদেরকে রাজনীতির উর্ধ্বে রাখতে না পারায়, ব্যর্থতা এখন আর সহ্য করা যায় না। ডা. মাহফুজের অধীনে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি কাজ করেছি। বর্তমানে আমি উনার প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য।’
আলাপচারিতার শেষ পর্বে এসে স্যারের কাছে জানতে চাইলাম আপনার পরিচয় তো অনেক। আপনি অধ্যাপক, সাহিত্যিক, সমাজকর্মী, মুক্তিযোদ্ধা- কোন পরিচয়টিতে আপনি গর্বিত। সহাস্যে বললেন তিনি, মুক্তিযোদ্ধা নিঃসন্দেহে আমার অহংকারি পরিচয়। তবে নিজেকে মানুষ হিসেবে ভাবতেই আমার বেশি আনন্দ।
ফজলুল হক স্যারের পরবর্তী জীবনের পুরোটাই কেটেছে অধ্যাপনায়। অধ্যাপনা শিল্পের বরপুত্র। তবে সবচাইতে বড় ব্যাপার হচ্ছে শিল্পবোধ তথা সৃষ্টিশীলতা ফজলুল হক স্যারের সত্তাজুড়ে বিরাজমান। যার ফলে জীবনের প্রস্তুতি পর্ব থেকেই তিনি সৃষ্টিশীলতার পথ ধরেই হাঁটছেন।
চট্টগ্রাম ছাড়াও ঢাকার বেশ কয়টি পত্রিকায়ও লিখেছেন। লিখেছেন অসংখ্য ছোট গল্প ও তিনটি উপন্যাস। এগুলোও ছাপা হয়েছে বিভিন্ন পত্রিকায়। দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন প্রফেশনাল জার্নালে স্যারের লেখা ছাপা হয়। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে টক্ শোতে অংশ নেন প্রায় সময়। ইতোমধ্যে শিক্ষকতা ও লেখালেখির জন্য ১০০টির মতো সম্মাননা পেয়েছেন।
ইতোমধ্যে সাহিত্যে একজন বহুমাত্রিক লেখক হিসেবে অধ্যক্ষ ফজলুল হক পাঠক সমাজে স্থান করে নিয়েছেন।ফজলুল হক স্যারের সৃজনশীল সত্তার অনেকটা জুড়ে আছে কথাসাহিত্য। সমাজের বিভিন্ন আঙ্গিক থেকে তিনি তাঁর গল্পের বিষয়বস্তু খোঁজার চেষ্টা করেন, যা একজন পাঠককে সহজেই চমকে দেয়। প্রবন্ধে পরিবার সমাজ এবং রাষ্ট্রকে তিনি তৃতীয় নয়নে অবলোকন করেন। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুখ-দুঃখের কাহিনী উপস্থাপনে সিদ্ধহস্ত সাহিত্যিক ফজলুল হক। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখেছেন অনেকগুলো বই। এইপথ শুধুই চলতে থাকার, ফিরে আসার নয়। এক মুহূর্ত থেকে অন্য সময়ের দিকে চলতে থাকা তো এক ধরনের অমরতা। স্যার মনে হয় সেই চলাচলেরই এক পথিক। পথ অবশ্যই কখনও জটিল, কখনও কর্কশ। তবু সীমাহীন আকর্ষণ প্রেরণা যুগিয়ে যাবে এই সব মানুষদের যাদের আছে কাজের উল্লাস। সাহিত্য সৃষ্টি, সভ্যতা এই দৃষ্টির প্রসারতাকে উদ্ভাসিত করুক। একাগ্রতা সঞ্চারিত হোক অসীম কর্মযজ্ঞের প্রেরণায়। মনের দুর্বার শক্তি, অনড় বাধা দূরে সরিয়ে দিক। সৃষ্টি হোক কর্মসফল ক্ষেত্র যেখানে আগামী ভবিষ্যৎ পেতে পারে দেয়ালীর উৎসব।
সুন্দরের জবাব সুন্দরই পায়। অসুন্দর যখন জবাব ছিনিয়ে নিতে চায়, বীণার তার বাজে না, ছিড়ে যায়- রবীন্দ্রনাথ, রক্তকরবী।

লেখক : গবেষক, লেখক ও প্রকাশক