জেসির হাতে জাদু

37

 

দিপুটা বড্ড বিরক্ত করে।
দিন দিন যত বড় হচ্ছে তত বেশি বেয়ারা হয়ে উঠছে। তাকে খাওয়াতে গেলেই যত খসরত। রীতিমতো মায়ের গলদঘর্ম। এদিকে গান শোনানো তো ঐদিকে ভূতের গল্প, পুলিশের ভয়। ইদানীং আরেক উপসর্গ তৈরী হয়েছে। মোবাইলে নানান রকম কার্টুন, ক্লিপ অথবা গেইম। তাও আবার নিজে নিজে।

সেই শৈশবে ভালো ছিলো। একটু গাল-গল্প, ভূতের কথা বলে মন ভুলিয়ে খাইয়ে দিতো। তাতে খিচুরির সাথে সবগুলো মিশানো হতো। ডাল, চাল, ডিম, আলু, বেগুন, গাজর সহ নানা রকম সবজী। তা খেতেও ভালো লাগতো। খাবারের যত পুষ্টিগুণ সবই পাওয়া যেতো। সেই শৈশবেও একটা সমস্যা মা বাবা এড়াতে পারতো না। তা হলো খাওয়াতে হলে মোবাইলটা তার হাতে দিতে হতো। দিপু মোবাইলে মশগুল থাকতো, আর খাবারটা নিশ্চিন্তে খাইয়ে দিতো। যাক তবুতো খাওয়া হলো।

এখন যত বয়স বাড়ছে, রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে খাওয়ানোর জন্য। এ ঘর ও ঘর দৌঁড়াদৌঁড়ি। কিছুই খাবে না। যেদিন সবজি কিংবা মাছ রান্না হবে সেদিন তো খাবেই না। ডিম সিদ্ধ। তাও খাবে না। ডিম পেঁয়াজ কাঁচামরিচ দিয়ে ভেজে দিলে একটু খাবে। দুধ খেতে চায় না। দুধে না কি পঁচা ডিমের গন্ধ।

পড়ার টেবিলে দুধ দিয়ে আসলে তা আর খাওয়া হয় না। লুকিয়ে হয় বেসিনে নয়তো জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেবে। মা যখন জোর করে দাড়িয়ে খাওয়াতে যাবে তখন কতরকমের খসরত। নাক চেপে, চোখ মুখ কুচকে এক চুমুক খাওয়ার পর বলবে, মা সত্যি বলছি, আমার বমি আসছে। ওয়াক। এসব যে সব না খাওয়ার ছল-চাতুরি তা কিন্তু মা ঠিকই বুঝতে পারে।

খাওয়াতে বসলে এটা খাবে না, ওটা খাবে না। শাক-সবজি খাবে না। সেই সাথে মোবাইলের অভ্যাসটা আরো বেশি করে পেয়ে বসেছে। এনড্রয়েড মোবাইলে গেইম খেলবে। আর যেই মনোযোগটা মোবাইলে থাকে অমনি মা দু’এক লোকমা ভাত মুখে পুরে দেয়। খাওয়ার মধ্যে শুধু মুরগীর মাংসটা খুব মজা করে খায়। তাও আবার ফার্মের মুরগী। ফ্রাই করে দিলে খাবে। রান্না করা মাংস, তা খাবে না। এই বয়সে খাওয়ার প্রতি এত বাচ-বিচার কত আর ভালো লাগে।

প্রতিদিন মুরগীর মাংস পাবে কোথায়। এও কি কম ঝামেলার? পাশের বাসার রতন। দিপুর সমবয়সী। খাওয়ার সময় একটুও বিরক্ত করে না। সব সময় মায়ের কথা শোনে। খেতে বসে মা যা দেয় তাই খেয়ে নেয়। কোনো বাচ-বিচার নেয়। কোনো তাল-বাহানা নেয়। মাছ-মাংস, শাক-সবজি, ফল-মূল যখন যা থাকে সবকিছু খেয়ে নেয়। প্রতিদিন শোবার সময় এক কাপ দুধ, তাও বেশ তৃপ্তি ভরে খাওয়া হয়। রতন জানে দুধ হলো পুষ্টিকর খাবার।

খাবারের প্রতি দিপুর এরকম অনীহা দেখে মা বাবা খুবই চিন্তিত। কিন্তু কি করা? কোনো কূল কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না। অবশেষে দিপুর ফুপাতো বোন জেসিকে খবর দেওয়া হলো। জেসি ডাক্তার। পুষ্টিবিশারদ। জেসি আপুর সাথে দিপুর খুব ভাব। জেসি যা বলে দিপু তা মন দিয়ে শোনে। অবশেষে ডাঃ জেসি এলেন।

ডাঃ জেসি দিপু আর রতনকে একসাথে ডাকলেন। সব খাবারের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে এক এক করে বুঝিয়ে বললেন। অনেক্ষণ সময় নিয়ে বোঝালেন যে, সব খাবার আমাদের শরীরের জন্য কেন এতো প্রয়োজন। দিপু কোনোদিন এভাবে ভাবেনি। দিপু শুধু বললো, কিন্তু আমার যে খেতে ইচ্ছে করে না।

জেসি বুঝিয়ে বললেন, খেতে ইচ্ছে করে না তা বুঝলাম। কিন্তু আস্তে আস্তে একটু একটু করে খাওয়ার অভ্যাসটা তো আমরা করতে পারি। একসময় সব ঠিক হয়ে যাবে। এই যেমন রতন। ওরও যে খেতে ইচ্ছে করে তা নয়, কিন্তু সবকিছু একটু একটু খেতে খেতে অভ্যেস হয়ে গেছে। ওর শরীরের জন্য যেটুকু পুষ্টি প্রয়োজন, ওসব খাবার থেকে পরিমাণমতো পাচ্ছে।

স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য শরীরের প্রয়োজনীয় বৃদ্ধির জন্য সুষম খাদ্য দরকার। তোমরা কি জানো যে, সুষম খাদ্য আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তি, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ জোগান দেয়। তাই আমাদের সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার দরকার।

এসব গল্প করতে করতে দিপু রতন কখন যে জেসি আপুর হাতে সবজি, ডাল আর মাছ দিয়ে পেট ভরে ভাত খেয়ে ফেলেছে দিপু টেরও পায়নি। জেসি আপুর হাতে মাখানো ভাত খেতে এতো মজা! এবার জেসি আপুর হাতে দুটো দুধের গøাস। রতন তো খেলোই। দিপুও না করেনি। নাক চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে তেতো গেলার মতো করে গিলে ফেললো। সব খাওয়ার পরে দিপু ভাবলো, জেসি আপুর হাতে কি জাদু আছে কে জানে?