জেলা প্রশাসনের বর্ণাঢ্য আয়োজন

39

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মহান বিজয় দিবস উদযাপন ও বিজয় কনসার্ট উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন আজ ১৬ ডিসেম্বর ও আগামীকাল ১৭ ডিসেম্বর মোট দুই দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচীর আয়োজন করেছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের এই অনন্য সময়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন। নতুন প্রজন্মসহ সকলকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিখায় আলোকিত এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করার মহতি লক্ষ্যে সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের এ মাহেন্দ্রক্ষণে শপথ অনুষ্ঠান আয়োজনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
আজ ১৬ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা থেকে দেশব্যাপী উক্ত শপথ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় শপথ অনুষ্ঠান নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম শহরের সকল সরকারি ভবনের পাশাপাশি বেসরকারি ভবনগুলোতে আলোকসজ্জাকরণ, সরকারি, বেসরকারি, বাণিজ্যিক ও আবাসিক সকল ভবনে নির্ধারিত মান ও রংয়ের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এই দুই রাত সমগ্র চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় কর্ণফুলী সেতুর পর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রধান সড়কটিসহ শহরের সকল সরকারি ভবনের পাশাপাশি, বেসরকারি, বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনগুলো আলোকসজ্জাকরণ।
১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের চত্বরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ৫০ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে বিজয়ের কর্মসূচির মাধ্যমে সূচিত হবে এবং সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জেলা প্রশাসন থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। একইদিন সকাল ৮টায় নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসটির শুভ সূচনা করা হবে। বাংলাদেশ পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, বিএনসিসি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, কারারক্ষী, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ স্কাউটস, রোভার স্কাউটস, গার্লস গাইড এবং শিশু কিশোর সংগঠন বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ ও শারীরিক কসরত প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে শেখ রাসেল চত্বরে সংবর্ধনা প্রদান করা হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, ১৬ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সকল পেশাজীবী, সকল সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সদস্যগণ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, নারী, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-ছাত্রীসহ সমাজের সর্বস্তরের ৪ হাজার জন নির্ধারিত আসনে নির্ধারিত টি-শার্ট, ক্যাপ, জাতীয় পতাকা ও মাস্ক পরিধানপ‚র্বক অবস্থান করে শপথ গ্রহণ করবেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যগণ তাদের স্ব-স্ব বাহিনীর ইউনিফর্মে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীগণ তাদের স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্ম পরিধান করে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত থাকবেন এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান/সংগঠনসমূহ তাদের স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানে ইউনিফর্ম (যদি থাকে) পরিধান করে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করবেন। গ্যালারির দর্শকগণকে কোন গেইট দিয়ে প্রবেশ করতে হবে তা ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তাগণকে জানিয়ে দেয়া হবে এবং স্টেডিয়ামের প্রবেশমুখে আসন ব্যবস্থাপনাসহ দৃশ্যমান থাকবে।
ডিসি মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, স্টেডিয়াম/গ্যালরিতে প্রবেশের সময় মোবাইল, মানিব্যাগ ব্যতীত অন্য কোন সামগ্রী (যেমন- ব্যাগ, কলম, খাবার, মূল্যবান অলঙ্কারদি, পাওয়ার ব্যাংক, হেডফোন, খাতা ইত্যাদি) সঙ্গে রাখা যাবে না। প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীগণকে স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্টেডিয়ামে গ্যালারিতে বসতে হবে। প্রত্যেক সংস্থা/প্রতিষ্ঠান/সংগঠনের নাম সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্টেডিয়ামে নির্ধারিত সারিতে দাঁড়াতে হবে। এছাড়াও গ্যালারিতে ১২-১৫ হাজার মানুষ অবস্থান করবেন। প্রধানমন্ত্রী শপথ অনুষ্ঠানে সরাসরি যুক্ত হবেন। শপথ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীগণ ছোট আকারের (১০ ইঞ্চি বাই ৬ ইঞ্চি) জাতীয় পতাকাযুক্ত পতাকা হাতে শপথবাক্য পাঠ করবেন। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত শপথ অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করা যাবে না।
ওইদিন (১৬ই ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টায় এম.এ আজিজ স্টেডিয়ামে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দর্শকের উপস্থিতিতে জমকালো আতশবাজি ও লেজার শো’র আয়োজন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আগামীকাল ১৭ ডিসেম্বর (শুক্রবার) বিকেল বিকাল ৩টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের ৯টি জনপ্রিয় ব্যান্ডদলের অংশগ্রহণে “বিজয় কনসার্ট” অনুষ্ঠিত হবে। ব্যান্ডদল হচ্ছে- অর্থহীন, শিরোনামহীন, ভাইকিং, সোলস, ওয়ারফেইজ, অ্যাভয়েডরাফা, আরভোভাইরাস, আর্টসেল ও তীরন্দাজ। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার উদ্যোগে যৌথভাবে “বিজয় কনসার্ট” এর আয়োজন করা হচ্ছে। কনসার্টে সম্ভাব্য ১৫ হাজার দর্শক বিনামূল্যে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে গ্যালারিতে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন। আনুমানিক সর্বোচ্চ দেড় হাজার আমন্ত্রিত অতিথি স্টেডিয়ামের ভিতরে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন। কনসার্টে বাইরে থেকে খাবার বা পানির বোতল নিয়ে মূল ফটকে প্রবেশ নিষিদ্ধ। শ্রোতাদের জন্য স্টেডিয়ামের ভিতরে অস্থায়ী হালকা খাবারের দোকান থাকবে।
ডিসি আরও বলেন, অনুষ্ঠানের সার্বিক নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ, আনসার বাহিনী ও র‌্যাব নিশ্চিত করবে। কনসার্টের প্রবেশপথ থেকে ও অন্যান্য গেইটসমূহে ৪২০ জন স্বেচ্ছাসেবক বিএনসিসি, স্কাউটস, রোভার স্কাউটস, গার্লস গাইড নিয়োজিত থাকবে। কনসার্টটি ফেইসবুকসহ স্যোসাল মিডিয়া ও ক্যাবলটিভিতে লাইভ প্রচারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সিএমপি থেকে মোতায়েন থাকবে। এছাড়াও ১২০ জন অঙ্গীভ‚ত আনসার ও ২০ জন ব্যাটলিয়ন আনসার মোতায়েন থাকবে। ট্রাফিক পুলিশ থেকে রোড ট্রাফিক প্ল্যান ইতোমধ্যে গণবিজ্ঞপ্তি আকারে মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়েছে।
আগত অংশগ্রহণকারী দর্শকদের সুবিধার্থে কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান ও “বিজয় কনসার্ট” শেষ না হওয়া পর্যন্ত যাতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট না ঘটে সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ, বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ), স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। অগ্নিকান্ডের দূর্ঘটনা এড়াতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেডিয়ামে অবস্থান করবেন। বিদ্যমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় সকল অংশগ্রহণকারীকে মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. সুমনী আক্তার, স্টাফ অফিসার টু ডিসি ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পীযুষ চৌধুরী এসময় উপস্থিত ছিলেন।