জেলা পরিষদের পুকুরে বাণিজ্যিক স্থাপনা!

15

পটিয়া প্রতিনিধি

পটিয়ায় জেলা পরিষদের পুকুর দখল করে রাতারাতি স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পটিয়া পোস্ট অফিস সংলগ্ন জেলা পরিষদ মার্কেটের পেছনে জেলা পরিষদের পুকুরের উপরে খুঁটি স্থাপন করে এর উপর এসব স্থাপনা ও বাণিজ্যিক দোকান ঘর নির্মাণ করা হয়। পটিয়া আদালত ও খাসমহল সড়ক ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির নেতৃবৃন্দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুই দফায় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দখল প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিলেও দখলদার তাতে কর্ণপাত না করে স্থাপনা নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করেন। গত শুক্রবার রাতে এসব স্থাপনা নির্মাণ করেন পৌর সদরের ৫ নং ওয়ার্ড ছদু তালুকদার বাড়ির বাসিন্দা মৃত আহমদ নবীর পুত্র কামরুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী।
পটিয়া আদালত ও খাসমহল সড়ক ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আয়ুব আলী অভিযোগ করেন, কামরুল ইসলাম জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার মোহাম্মদ আমিরকে ম্যানেজ করে জমি দেখিয়ে ৪ ফিট প্রস্থ ও ২৮ ফিট লম্বা জমি মাত্র তিন হাজার ৩৬০ টাকায় লিজ নেন। এক সনা লিজ নেয়ার পরপরই রাতে দখল করে নেয়া হয় ১৫ ফিট প্রস্থ ও ২৮ ফিট লম্বা সাইজের পুকুর। এর উপর রাতারাতি তৈরি করা হয় বাণিজ্যিক স্থাপনা। কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ না করার বিষয়ে লিজে শর্ত দেয়া থাকলেও লিজ নেয়ার পরপরই শর্ত ভঙ্গ করে পুকুরের উপর তৈরি করা হয়েছে স্থাপনা। মাত্র তিন হাজার ৩৬০ টাকায় বেদখল হলো জেলা পরিষদের কোটি টাকার সম্পত্তি।
স্থানীয়রা জানান, কামরুল ইসলাম জোরপূর্বক জেলা পরিষদের পুকুরের অংশ ও পৌরসভার রাস্তার কিছু অংশ দখল করে সেখানে পাকা দোকানগৃহ নির্মাণ করার সময় স্থানীয়রা ৯৯৯ এ ফোন করেন। এরপর পুলিশ এক দফা ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। পুলিশ চলে যাওয়ার পর আবারও স্থাপনা নির্মাণ শুরু করলে ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ করা হলে আরেক দফা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। পুলিশ চলে যাওয়ার পর আবারও তৈরি করা হয় স্থাপনা।
আদালত ও খাসমহল সড়ক ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হারুন জানান, কামরুল ইসলাম জেলা পরিষদকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে এ লিজ নিয়েছেন। আমরা সরকারি স্বার্থ রক্ষার্থে পুলিশকে অবহিত করেছি। আজ রবিবার জেলা পরিষদ প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ দেওয়া হবে।
বাণিজ্যিক দোকান নির্মাণকারী কামরুল ইসলাম লিজের শর্ত ভঙ্গ করার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, পুকুরের পাড় না থাকায় পুকুরের মধ্যে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। লিজের চেয়ে অন্তত ২০ গুণ পরিমাণ জমি দখলের বিষয়ে তিনি বলেন, যে পরিমাণ জমি লিজ দেয়া হয়েছে তাতে দোকান হবে না। তাই প্রয়োজন মত পুকুরের উপর দোকান ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
পটিয়া থানার এস আই শেখ ফরিদ জানান, তিনি দুই দফায় বাধা দিলেও পরবর্তীতে কামরুল ইসলাম দোকান ঘর নির্মাণ করেছেন। বিষয়টি জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে দেখভাল করার কথা। তারা এখনো কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি। এ ব্যাপারে পৌর মেয়র আইয়ুব বাবুল জানান, পৌরসভার রাস্তার পাশে কামরুল ইসলাম অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা করছে। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার মোহাম্মদ আমির যোগসাজশ করে জমি না থাকলেও পুকুরকে জমি দেখিয়ে লিজ দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, লিজ দেয়া হয়েছে জমি। কিন্তু পুকুরে দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা অবৈধ। এছাড়া তাকে ৪ ফিট প্রস্থে ও ২৮ ফিট দৈর্ঘ্যরে যে জমি দেয়া হয়েছে এ পরিমাণের বাইরে যাওয়ারও সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী শাব্বির ইকবালের ফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয় নি।