জেলারসহ দুইজন প্রত্যাহার ৩ কারারক্ষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

28

কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে ঘেরা সুরক্ষিত কেন্দ্রীয় কারাগারের কর্ণফুলী ভবন থেকে খুনের মামলায় ফরহাদ হোসেন রুবেল নামে এক বন্দী উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় গতকাল রবিবার জেলার রফিকুল ইসলাম ও ডেপুটি জেলার আবু সাদাতকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি দুই কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত ও এক কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে কারা অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথক দু’টি কমিটি করা হয়েছে।
এর আগে গত শনিবার সকাল ছয়টায় প্রতিদিনের মত ওয়ার্ডের তালা খুলে বন্দী গণনা বা রোলকলের সময় সদরঘাট থানার একটি খুনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আটক রুবেলকে না পেয়ে খোঁজাখুুঁজি শুরু করে কারা কর্তৃপক্ষ। দিনভর হদিস না পেয়ে প্রথমে সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান সিএমপির কোতোয়ালী থানায় জিডি করেন। কারাভ্যন্তরে ব্যাপক তল্লাশির পরও ওই বন্দীর সন্ধান না পাওয়ায় রাতে জেলার রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে একই থানায় মামলা করেন।
কারা অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজন্স) এ কে এম ফজলুল হক জানান, আইজি-প্রিজন্স (কারা মহাপরিদর্শক) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন স্যারের নির্দেশে কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার ও ডেপুটি জেলারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে জেলার রফিকুল ইসলামকে কারা অধিদপ্তরে এবং ডেপুটি জেলার আবু সাদাতকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া মো. নাজিম উদ্দিন ও মো. ইউনুস নামে দুই কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত করার পাশাপাশি কামাল হায়দার নামে এক কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঘটনা খতিয়ে দেখতে খুলনা বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক ছগির মিয়াকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারের সুপার ইকবাল হোসেন ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা কারাগারের ডেপুটি জেলার ফোরকান ওয়াহিদ। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে, বন্দী উধাও কান্ড তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের পৃথক আরেকটি কমিটি করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে ওই কমিটি প্রধান করা হয়েছে। কমিটি তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, থানায় কারাগারের জেলার রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সদরঘাট থানার একটি হত্যা মামলায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন আটকাদেশের ভিত্তিতে গত ৯ ফেব্রূয়ারি কারাগারে বন্দী হিসেবে আসেন ফরহাদ হোসেন রুবেল। তিনি কারাগারের অভ্যন্তরে কর্ণফুলী ভবনের পঞ্চম তলায় ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে বন্দী ছিলেন। সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, গত শনিবার ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে বন্দী ফরহাদ ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে নেন। এরপর থেকে তাকে আর ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়নি। রোলকলের সময় গরহাজির পেয়ে দিনভর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ফরহাদের হদিস মিলেনি। ধারণা করা হচ্ছে, শনিবার ভোর সোয়া পাঁচটা থেকে সকাল সাড়ে ছ’টার মধ্যে তিনি ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে যান।
কারা সূত্র জানিয়েছে, কারাভ্যন্তর থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়া হত্যা মামলার আসামি ফরহাদ হোসেন রুবেল নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার মীরের কান্দি গ্রামের শুক্কুর আলীর ছেলে। এর আগে ২০১৮ সালেও তিনি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে এসেছিলেন। চলতি বছরের গত ৫ ফেব্রূয়ারি গভীর রাতে নগরীর সদরঘাটের আইস ফ্যাক্টরী রোডে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবুল কালাম আবু নামের এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন সকালে কালাম মারা যান। কামাল হত্যার ঘটনায় সদরঘাট থানায় মামলা হওয়ার পুলিশ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ওইদিন রাতে নগরীর মিস্ত্রিপাড়া থেকে ফরহাদ হোসেন রুবেলকে আটক করে।
উল্লেখ্য, সুরক্ষিত কারাগারের ভেতর থেকে বন্দী উধাও কান্ডের ঠিক দু’দিন আগে প্রতারণার মামলায় কারান্তরীণ রূপম কান্তি নাথ নামে এক বন্দীকে বৈদ্যুতিক শক ও বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দায়রা জজ আদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগীর স্ত্রী ঝর্ণা রাণী নাথ। মামলায় সিনিয়র জেল সুপার ও জেলারসহ মোট চারজনকে অভিযুক্ত করা হয়। আদালত নালিশী মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে নির্দেশ দিয়েছেন।