জুলাইয়ে আবারও টিকাদান শুরু হবে

12

 

করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকার টিকা সংগ্রহের ‘সর্বাত্মক’ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস বলেছেন, জুলাই মাসে আবারও সারা দেশে গণটিকাদান শুরু করা যাবে বলে তারা আশা করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকা দিয়ে গত ৭ ফেব্রæয়ারি সারাদেশে গণটিকাদান শুরু হয়েছিল। কিন্তু ভারত রপ্তানি বন্ধ রাখায় টিকার সঙ্কটে পড়ে বাংলাদেশ। পর্যাপ্ত টিকা না থাকায় দেশে প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। ইতোমধ্যে যারা প্রথম ডোজ পেয়েছেন, তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার মত অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাও সরকারের হাতে নেই।
এ অবস্থায় সরকারকে অন্য উৎস থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের চেষ্টা করতে হচ্ছে। এর মধ্যে টিকার আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকে ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি ১ লাখ ৬২০ ডোজ এবং চীনের উপহার হিসেবে দুই দফায় সিনোফার্মের তৈরি ১১ লাখ ডোজ টিকা দেশে এলেও আগের মত গণটিকাদান শুরুর জন্য তা যথেষ্ট নয়। খবর বিডিনিউজের।
আহমদ কায়কাউস বলেন, আমরা যোগাযোগ করে চলেছি। ইতোমধ্যে আমরা কয়েকটা দেশের সঙ্গে কথা বলেছি, প্রত্যাশা করছি খুব দ্রুত আমরা পাব। আমরা প্রত্যাশা করছি যে জুলাই মাস থেকে আমরা হয়ত আবার ম্যাস স্কেলে (টিকাদান) শুরু করতে পারব।
সিনোফার্মের কাছ থেকে সরকারি পর্যায়ে দেড় কোটি ডোজ করোনা ভাইরাসের টিকা কেনার একটি প্রস্তাব সরকার ইতোমধ্যে অনুমোদন করেছে। প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে ওই টিকা বাংলাদেশ পাবে বলে সরকার আশা করছে।
এছাড়া রাশিয়া থেকে স্পুৎনিক ভি টিকা কেনার আলোচনাও একটি ‘সমঝোতার পর্যায়ে’ পৌঁছে গেছে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আগের দিন জানিয়েছেন।
গত সোমবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, সারাদেশে গণ টিকাদান কর্মসূচি আগামী ১৯ জুন থেকে আবার শুরু করার আশা করছেন তিনি। তবে মুখ্য সচিব বৃহস্পতিবার বললেন জুলাই মাসের কথা।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আহমদ কায়কাউস বলেন, আমরা কিন্তু প্রতিদিনই অন্ততপক্ষে একটা দেশ বা কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে যাচ্ছি। একই সঙ্গে আমাদের বাংলাদেশেও উৎপাদন করার চেষ্টা করছি।
টিকা কেনার জন্য সরকার আগামী বাজেটে ১৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে জানিয়ে মুখ্য সচিব বলেন, অর্থাৎ আমরা কিন্তু কারো দয়া চাই না। আমরা বারবার বলছি, বাংলাদেশ সরকার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিন্তু সব সময় বলছেন, আমাদের ফ্রি দরকার নাই। আমরা টাকা দিয়ে কিনব। যেখানে পাওয়া যায় সেখান থেকে কেনা হবে এবং আমরা কিন্তু অনেক দূর এগিয়েছি।
মহামারির মধ্যে সারা বিশ্বজুড়েই যে টিকার সঙ্কট চলছে, সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমানে ভ্যাকসিন মার্কেটটা কিন্তু সেলারস মার্কেট, কেউ কিন্তু বিক্রি করছে না। আমরা পৃথিবীর সব জায়গায় চেষ্টা করেছি প্রথম দিন থেকে, তখন আমাদের কাছে যে অপশনটা ছিল, সেটা আমরা গ্রহণ করেছি। এবং এখনো পর্যন্ত বিশ্বের ভেতরে আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখতে পারবেন, কম দামে কিন্তু আমরা পেয়েছি।
এখন একটা কথা বলা হচ্ছে যে আমরা সোর্স করিনি ( একাধিক কোম্পানির সঙ্গে আগাম চুক্তি) কেন? আপনাদের কীভাবে বোঝাব, আমরা সোর্সিংয়ের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ইউরোপ বা চায়নাসহ সমস্ত দেশে আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের রাষ্ট্রদূতরা যোগাযোগ করে চলেছেন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মুখ্য সচিব বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি যে প্রায়োরিটি ভিত্তিতে- যারা স্টুডেন্ট আছে মেডিকেলের, তারা কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে কাজ করছে। সে জন্য আমরা তাদেরকে দিয়েছি। যেহেতু আমাদের কাছে টিকা কম আছে। কালকে যদি এক মিলিয়ন পাই, তাহলে তো তখন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আবার দেওয়া হবে।
অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, আশ্রায়ন-২ প্রকল্পের পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ।