জুমুআতুল বিদা আল বিদা মাহে রমজান

256

ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে পবিত্র রমজান মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। সিয়াম সাধনার এ মাসের প্রতিটি দিন, ক্ষণ ইবাদতে পূর্ণ থাকে। বিশেষ করে, এ মাসের জুমাবার আর শবেকদর অনন্য মর্যাদায় পালন করেন ধর্মপ্রাণ মুসলামানগণ। আজ রমজান মাসের শেষ জুমাবার। এ জুমাকে বলা হয়, ‘জুমুআতুল বিদা’। ইয়উমুল জুমুআ মানে শুক্রবার বা জুমাবার। জুমার নামাজ জামাতের সঙ্গে একত্র হয়ে মসজিদে পড়া অত্যাবশ্যকীয় করা হয়েছে। আল বিদ শব্দের অর্থ হলো বিদায় বা বিদায়ী শুভেচ্ছা। আমরা সাধারণত কাউকে বিদায় জানাতে আল বিদা বলে থাকি। রমজানের শেষ জুমা যেহেতু বিদায়ী জুমা তাই এটিকে জুমাতুল বিদা বলে। এমনিতেই জুমার গুরুত্ব অনেক। এর মধ্যেই রোজার শুক্রবার হলো সোনায় সোহাগা। আজকের এ দিনে সকল মুসলমান মসজিদে সমবেত হয়ে রমজানকে বিদায় জানায় বলে এটিকে জুমাতুল বিদা বলা হয়। রমজানের শেষ জুমুআ তো একটি বছরের জন্য আর পাওয়া যাবে না। ফলে মুমিন বান্দার ভেতরে রমজানের শেষ আমলের ছুঁয়ে যাওয়া পরিবর্তন লক্ষ করা যায় আজকে।
পবিত্র রমজানের প্রতিটি দিনক্ষণই গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে নিশ্চয়ই শুক্রবার মুসলিম জাতির কাছে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময়। অন্যান্য সাধারণ দিবসের মতো এ দিবস নয়। লাইলাতুল কদর যেমন হাজার মাসের চেয়ে উত্তম, তেমনিভাবে প্রতিটি জুমুআও অন্যান্য বারের তুলনায় অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ।
পবিত্র কোরআনে শুক্রবারের নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়ে সব মুসলমানকে এ দিন একত্র হয়ে জুমার নামাজ আদায়ের তাগিদ প্রদান করে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! জুমুআর দিনে যখন সালাতের জন্য আহŸান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা উপলব্ধি কর। (সুরা আল জুমা : আয়াত ৯)।’ তাই স্বাভাবিকভাবেই এই দিনটি গুরুত্বপূর্ণ। আর রমজানে তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রমজানের প্রতিটি জুমাই মুমিন অনেক আড়ম্বরতার সঙ্গে উদযাপন করে, পালন করে। নিজেকে পাক-পবিত্র করে নিতে নিরন্তর প্রয়াস চালায়। কারণ প্রিয় নবী হজরত মুহম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে মুসলমান রমজান মাস পেল, কিন্তু সারা বছরের গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারল না, তার মতো হতভাগা আর নেই।’ (ইবনে মাজা)। জুমাতুল বিদার দিন মাহে রমজানের বিদায় আসন্ন হয়ে আসে। এজন্য যুগ যুগ ধরে জুমাতুল বিদার এ ঐতিহ্য ইমাম, গাউছ, কুতুব, আলেম-ওলামাগণ উত্তম বলে পালন করে আসছেন। কারণ আল্লাহর পক্ষ থেকে নেয়ামত প্রাপ্তির উপর শোকর করা যেমনি সুন্নত, তেমনিভাবে আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতের বিদায়ের উপর আপসোস করাও সুন্নত। একজন আশেকে রাসুল মাহে রমজানুল মোবারকের বিদায়ের উপর আপসোস করে বলেছেন, আপসোস তো রুখসোদ হুয়া, মাহে মোবারক আল বিদা, রোকে দিল মে ইউ কাঁহা, মাহে মোবারক আল বিদা’।
বান্দার আকুতি থাকে অন্তত রমজানের শেষ ফজিলতপূর্ণ জুমায় নিজেকে পবিত্র করে নিতে। দয়া, ক্ষমা ও মুক্তি লাভের আশায় জুমার দিনে আরো বেশি ইবাদতে মগ্ন হয় মুমিন। তাই রমজানের শেষ জুমা মুসলিম বিশ্বে অনেক তাৎপর্য নিয়ে আসে। মানুষকে ইবাদতে আরো অনুপ্রাণিত করে। বান্দা নিজেকে ভিন্ন এক প্রস্তুতিকল্পে আল্লাহর দরবারে পেশ করে।
আজ জুমুআতুল বিদার সাথে বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় আল কুদ্স দিবস হিসাবেও পালন করে থাকেন। পবিত্র মক্কার মসজিদে হারাম ও মদিনা মনোয়ারার মসজিদে নববীর পর তৃতীয় পবিত্রতম স্থান হচ্ছে ‘বায়তুল মোকাদ্দাস’। রমজান মাসের শেষ শুক্রবার আল্লাহর নবী হজরত দাউদ (আ) এর পুত্র হযরত সুলায়মান (আ.) জেরুজালেম নগর প্রতিষ্ঠা করেন এবং আল্লাহ তা’আলার মহিমা তুলে ধরতে সেখানে পুননির্মাণ করে গড়ে তোলেন মুসলমানদের প্রথম কিবলা ‘বায়তুল মোকাদ্দাস’। এ জন্যও বিশ্বের মুসলিম জাতি জুমুআতুল বিদাকে বিশেষভাবে স্মরণ করে থাকে। আল কুদস দিবসও উদযাপিত হয় এ দিনে। কুরআন মজিদে বায়তুল মোকাদ্দাসকে পবিত্র ভূমি উল্লেখ করে আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘স্মরণ করো, ( মুসা তাঁর স¤প্রদায়কে বলেছিলেন) হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ তোমাদের জন্য যে পবিত্র ভূমি নির্দিষ্ট করেছেন, এতে তোমরা প্রবেশ করো এবং পশ্চাদপসরণ করো না, করলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ (সূরা আল-মায়িদা : আয়াত ২১)
মহান আল্লাহ আমাদের এ পবিত্র দিবসের তাৎপর্য অনুধাবনের পাশাপাশি প্রত্যাশা থাকবে, যে সংযম ও সম্প্রীতির বন্ধনে এ পবিত্র রমজান পালনে ব্রত ছিলাম আমরা, বাকি এগারো মাসে তার শুদ্ধ চর্চায় নিজে মনোনিবেশ করব।