জুনেই পানি যাবে দক্ষিণ চট্টগ্রামে

104

এম এ হোসাইন

জুনে মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া চট্টগ্রাম ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৮৪ শতাংশ। কালারপুল এলাকায় একটি ক্রসকালভার্ট সংযোগ ছাড়া পাইপলাইন ও ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টসহ ভৌত কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। জুনেই গ্রাহক পর্যায়ে সংযোগ প্রদান শুরু হতে পারে। বাকি কাজ শেষ করার জন্য ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া একবছর সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বোয়ালখালী, পটিয়া, কর্ণফুলী ও আনোয়ারা শিল্পাঞ্চলে পানি যাবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের প্রায় কাজ শেষ হয়েছে। এখন গ্রাহক পর্যায়ে সংযোগ প্রদান শুরু হবে। কাজ শেষ পর্যায়ে থাকলেও বিল প্রদানসহ বিভিন্ন আনুষাঙ্গিক বিষয়গুলো শেষ করতে সময়ের প্রয়োজন। তাই আমরা এক বছর সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছি। কিন্তু কোনো ব্যয় বৃদ্ধি করা হচ্ছে না।
কর্ণফুলী নদীর পানি পরিশোধনের মাধ্যমে দৈনিক ছয় কোটি লিটার পানি সরবরাহের লক্ষ্য ধরা হয় ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পে। পটিয়া ও আনোয়ারা কর্ণফুলীর শিল্পাঞ্চল এলাকার পানিসঙ্কট দূরীকরণকে টার্গেট করে প্রকল্প নেয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ১০ লাখ মানুষকে সুপেয় পানির আওতায় আনার কথা চিন্তা করা হয়। এ মেগা প্রকল্পের পানি সরবরাহের জন্য পটিয়া বাইপাস এলাকায় পাঁচ একর জায়গায় ও আনোয়ারা দৌলতপুর মৌজায় ২ দশমিক ৯৪ একর জায়গায় প্রথক দুটো জলাধার নির্মাণ করা হয়েছে। মোট উৎপাদিত পানির মধ্যে ৮০ শতাংশ শিল্প কারখানায় এবং বাকি ২০ শতাংশ আবাসিকে সরবরাহ করার লক্ষ ধরা হয়েছে। এজন্য ১০ হাজার সংযোগ দেওয়ার টার্গেট আছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এলাকায় পাইপলাইনের কাজ শেষ হয়েছে। বোয়ালখালীর ভান্ডালজুড়ি থেকে পানির পাইপ লাইন বোয়ালখালী মিলিটারি পুলের কাছে এসে দুই ভাগ হয়ে গেছে। একটি অংশ চলে গেছে আহলা দরবার শরীফ হয়ে পটিয়া পৌরসভায়। অপর অংশটি শিকলবাহা ও মইজ্জ্যার টেক হয়ে কর্ণফুলী ও আনোয়ারায় চলে গেছে। কর্ণফুলী ও আনোয়ারা অংশ যাওয়া পাইপলাইনটি কালারপুল ব্রিজের কাছে এসে ক্রসকালভার্টের কাজ করার জন্য আটকে আছে। বাকি সব পাইপলাইনের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুব আলম বলেন, পুরো প্রকল্পের ১৩০ কিলোমিটার পাইপ লাইনের কাজ শেষ হয়েছে। ভান্ডালজুড়ি প্রকল্প এলাকায় ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এবং দুটো জলাধার নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এখন কালারপুল এলাকায় একটি ক্রসকালভার্টের কাজ বাকি আছে। তাছাড়া সার্ভিস লাইনগুলোর কাজ শুরু হবে। এ পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৪ শতাংশের বেশি।
তিনি বলেন, প্রায় দশ হাজার সার্ভিস লাইন দেয়া হবে। জুনের মধ্যে আমরা সার্ভিস কানেকশন দেয়া শেষ করতে পারবো আশা করছি। এরপর প্রেসার টেস্ট করা হবে এবং পরিক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করা হবে। আমরা আশা করছি, দক্ষিণ পাড়ের কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইপিজেড, সিইউএফএল, কাফকোসহ অন্যান্য শিল্পাঞ্চল ও আবাসিকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পারবো।
২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি একনেকে অনুমোদন পেয়েছিল চট্টগ্রাম ওয়াসার বোয়ালখালী ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প। তখন প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে প্রকল্পের শুরুতেই ভূমি জটিলতায় পড়তে হয় ওয়াসাকে। এজন্য তিনবছর সময় আটকা পড়ে যায়। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয় প্রকল্পের কাজ। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি প্রথম সংশোধিত আকারে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি এবং ব্যয় বৃদ্ধি করে ১৯৯৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার করা হয়। প্রকল্পের ৮২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা অর্থায়ন করছে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক। বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ১১৫০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম ওয়াসা নিজস্ব তহবিল থেকে দিচ্ছে ২০ কোটি টাকা।
বোয়ালখালির ভান্ডালজুড়ি এলাকায় ৪১ দশমিক ২৬ একর জায়গায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কর্ণফুলী নদীর তীরে গড়ে ওঠা শিল্প-কারখানাগুলোতে এখান থেকে পানি সরবরাহ করা হবে। প্রকল্পে পানি শোধনাগার, কনভয়েন্স, ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন পাইপলাইন এবং দুটি রিজার্ভার নির্মাণ করা হয়েছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো শুরু হতে যাওয়া এ প্রকল্প হবে ওয়াসার সবচেয়ে লাভজনক প্রকল্প। একই সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামে শিল্পের প্রসারও তরান্বিত হবে প্রকল্পের মাধ্যমে।