জীবন রক্ষা এখন বড় চ্যালেঞ্জ উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি, চূড়ান্ত বিকল্প কঠোর লকডাউন

12

দেশে মহামারি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ-এর তান্ডবে জনজীবন বিধ্বস্ত প্রায়। সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার প্রতিদিনই রেকর্ড করছে। করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত সপ্তাহে সরকার ১৮ দফা স্বাস্থ্যবিধি ঘোষণা করে চলাফেরা নিয়ন্ত্রণে বিধিনিষেধ তথা লকডাউন জারি করেছে। কিন্তু বাস-মালিক সমিতি, দোকান মালিক সমিতিসহ নানা শ্রেণি পেশার দাবি মেটাতে গিয়ে সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিথিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ফলে অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, সামাজিক দূরত্ব নির্দেশনা ভেঙে পড়ছে। চট্টগ্রাম নগরবাসীসহ দেশের রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য শহরবাসী ঘরে থাকা তথা লকডাউন মানছে না। মাস্ক ছাড়াই অফিস, আদালত, বাজার, গণপরিবহনে চলাফেরা করছে মানুষ। সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই নেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, এমতাবস্থায় করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ বিপর্যয় নামতে পারে। পোশাক কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট, শপিংমল চালু রাখার কারণে সড়কে মানুষের চলাচল বেড়ে গেছে। সূত্র জানায়, দক্ষিণ আফ্রিকার ভেরিয়েট ফ্লুর বিস্তার চলছে দেশে। যা অতি দ্রুত সাধারণ মানুষকে সংক্রমণ করে। এতে মানুষের দ্রæত ফুসফুস অকার্যর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। আমরা রক্ষ্য করছি, এপ্রিলের শুরু থেকে করোনা সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। গত শনিবার সংক্রণের হার ও মৃত্যু ছিল এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। আগামী দুই সপ্তাহে দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বর্তমানের চেয়ে অনেক বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। গত কয়েকদিনে যেভাবে প্রতিদিন রোগী শনাক্ত হচ্ছে তাতে গতবারের পিকের (জুন-জুলাই) চেয়েও পরিস্থিতি খারাপের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আমরা বুঝতে পারছি, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা সত্তে¡ও পোশাক কারখানা, দোকানপাট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত অর্থনীতির ক্ষতি এড়ানোর উদ্দেশ্যে। কিন্তু এটা কতটা যুক্তিযুক্ত সেটা ভাবার বিষয়। দেশের আক্রান্তের দিকে তাকালে তা স্পষ্ট হয়ে উঠে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহের দিকে যাচ্ছে। তবে করোনা থেকে মানুষকে বাঁচাতে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা প্রধানমন্ত্রী পুনরায় ব্যক্ত করার পর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ সময় পোশাক-শিল্পসহ সকল প্রকার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট ও গণপরিবহন বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করি, কঠোর লকডাউন যেভাবেই হোক কঠোরভাবে পালনে জনগণকে বাধ্য করতে হবে। কোনরকম শিথিলতা কোনভাবেই প্রদর্শন করা চলবে না। এর আগে করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ২৯ মার্চ যে ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছিল, তাতে দোকানপাট-শপিংমল ও গণপরিবহন বন্ধের নির্দেশনা ছিল। এ নির্দেশনা প্রথমে হোঁচট খায় গণপরিবহন চালুর মাধ্যমে। পরবর্তীতে কিছু দোকান মালিক শ্রমিক চট্টগ্রাম ও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দোকান খোলা রাখার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। এমন অবস্থায় ৮ তারিখ থেকে দোকানপাট খুলে দিয়েছে সরকার। তবে তাদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের চিত্র ছিল একেবারেই নাজুক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ৭৪ জন মারা গেছেন। এ পর্যন্ত দেশে মারা গেছেন প্রায় সাড়ে ৯ হাজার। আক্রান্তের সংখ্যা দ্রæত বৃদ্ধি ও মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব না মানা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার সামাজিক দূরত্বের বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করছে। অথচ আমরা কী করছি? কী করে শিল্প মালিক বা দোকান-মালিকরা এটা চিন্তা করলেন, শত শত কর্মী পাশাপাশি বসে একসঙ্গে কাজ করবে? আর গ্রাহকরা ঝাঁকে ঝাঁকে এসে বাজার করবে? বাংলাদেশে করোনা মহামারি ইউরোপ-আমেরিকার মতো ব্যাপক সংক্রমণ ও প্রাণঘাতী রূপ নিলে দেশের সামাজিক বাস্তবতা ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা ভেবে আতঙ্কিত হতে হয়। আমরা বলব আমাদেরকে আরো সতর্ক ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। জীবন রক্ষা ও অর্থনীতির ক্ষতি ন্যূনতম মাত্রায় রাখা-এই উভয় কূল রক্ষার চ্যালেঞ্জে সবাইকে বিচক্ষণতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে এক সপ্তাহের কঠোর লক ডাউনে জীবিকার বড় ক্ষতি হবেনা, তবে লক ডাউন না হলে জীবনের চরম বিপর্যয় ঘটতে পারে, যা কেউ আর আটকাতে পারবে না।