জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় ভোগাচ্ছে নেপালকে

13

 

দুই বছর পর করোনা ভাইরাস মহামারী কাটিয়ে ওঠার মুহূর্তে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে, সেই আঁচ লাগছে হিমালয়ের দেশ নেপালেও। প্রায় ৩ কোটির জনসংখ্যার স্থলবেষ্টিত এ দেশের অবস্থান ভারত আর চীনের মাঝখানে। জ্বালানিসহ প্রায় সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস আমদানির জন্য তাদের অনেক বেশি নির্ভর করতে হয় ভারতের ওপর। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকট পার করছে। মূলস্ফীতির জেরে পাকিস্তান সরকারপতন দেখেছে কয়েক দিন আগেই। নেপালের পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে, তার একটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে। রাজধানী কাঠমান্ডুর সবজি বিক্রেতা পামফা খত্রী বিবিসিকে বলেছেন, ‘প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে আর আমরা খরচ মেটাতে সংগ্রাম করছি’। ৩৭ বছর বয়সী এই নারী দুই সন্তানের জননী। পরিবারসহ কাঠমান্ডুর কাছে ভক্তপুর জেলায় থাকেন। প্রতিদিন ৩০ কেজির বেশি ওজনের সবুজ শাক ভর্তি ঝুড়ি অনেক কষ্টে বাজারে টেনে নিয়ে আসেন। খত্রীর দিন শুরু হয় ভোর ৩টায়, সেসময় আশেপাশের খামার থেকে শাক-সবজি কিনতে বের হন। সেগুলো আবার গণপরিবহনে করে শহরে নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। তাতে দিনে আয় হয় আড়াই হাজার রুপির মত।
তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী কাজ করে না। তাই পুরো পরিবার আমার উপর নির্ভরশীল। আমার দুই ছেলের স্কুলের খরচও আমাকে দিতে হয়। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং পরিবহন খরচ বাড়ছে, জীবন ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে’। বিবিসি লিখেছে, গত দুই বছরে খাদ্যপণ্যের দাম যে গতিতে বেড়েছে, সেটাই খত্রীর মতো নেপালিদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কোনো শেষ তারা দেখতে পাচ্ছেন না। যেমন- রান্নার কাজে ব্যবহৃত এক লিটার সূর্যমূখী তেল মহামারীর আগে ১৬০ রুপিতে বিক্রি হত। এখন বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে, গুনতে হচ্ছে প্রায় তিনশ রুপি। ভোক্তা সংগঠনগুলোর হিসাবে বলছে, নেপালে বেশ কিছু খাদ্য পণ্যের দাম এক বছরে ২০ শতাংশ বেড়েছে। আমদানি ব্যয় বাড়ার কারণে হিমালয়ের দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত ফেব্রæয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত সাত মাসে ১৬ শতাংশ কমে ৯৫৯ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। খাদ্য ও জ্বালানির মত প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে নেপালকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ডলার জমা রাখতে হবে। আর সেজন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হয়েছে সরকারকে। গাড়ি, প্রসাধনী ও সোনার মতো পণ্য, যেগুলো অপরিহার্য নয়, সেসব আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে।