জিয়া কারাগারে কত মানুষকে হত্যা করেছে খুঁজে বের করুন

16

সামরিক ক্যু’র ওজর তুলে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আমলে নিহত ব্যক্তিদের তথ্য খুঁজে বের করার আহব্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে এই আহব্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের সংসদ সদস্যদের একটা উদ্যোগ নেওয়া উচিত, জিয়ার আমলে প্রত্যেকটা কারাগারে কত মানুষকে ফাঁসি দিয়ে মারা হয়েছে; বিশেষ করে ঢাকা, বগুড়া, রাজশাহী, খুলনা এবং কুমিল্লায়। একটার পর একটা ক্যু আর শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। শত শত মানুষ, আর্মি অফিসার, আর্মি সোলজার, বিমানবাহিনীর ৫৬৮ জন অফিসার এবং সোলজার সব মিলে এবং কত মারা গেছে। এগুলো তো থেকে যায়। (রেকর্ড) সেগুলো একটু খুঁজে বের করে দেখেন’।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘যে এক রাতে ফাঁসি দিতে দিতে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে, এখনো এরকম লোক আছে। এদের কাছ থেকে মানবাধিকারের কথা শুনতে হয়। এদের কাছে জ্ঞানের কথা শুনতে হয়, আইনের শাসনের কথা শুনতে হয়। অথচ আমি আমার বাবা-মা হত্যার জন্য মামলা করতে পারিনি। আমার কোনো অধিকার নাই। আমার অধিকার নাই মামলা করার। আর আমাদের দলের বেঈমান তো ছিলই। খন্দকার মোশতাক-তোশতাক তো ছিলই’।
বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়াউর রহমান জড়িত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘৭৫ এর হত্যার সঙ্গে জড়িত, এতে তো কোনো সন্দেহ নেই। আমি তাকে আসামি করতে চেয়েছিলাম। তখন আমাদের হোম সেক্রেটারি ছিলেন রেজাউল হায়াত, তিনি বললেন- মৃত মানুষকে তো আসামি করা যায় না। আমার মনে হয় নামটা থাকা উচিত ছিল’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়া যে ষড়যন্ত্রে জড়িত, সেটা ফারুক-রশিদ নিজেরাই বলেছে, বিবিসি ইন্টারভিউতে। অ্যান্থনি মাসকারেনহাসের বইতে আছে, লরেন্স লিফশুলজের বইতে আছে- কীভাবে অস্বীকার করবে?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছিল তাদের সে ছেড়ে দিল কেন? এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের ৭ খুনের আসামিকেও মুক্ত করে দিল। এমন বহু ঘটনা সে ঘটিয়েছে। জিয়া সেই সব খুনিদের নিয়েই পরে দল করল’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে এক হয়ে এ দেশে অগ্নিসংযোগ, হত্যা, খুন ধর্ষণ করেছে, তাদের মন্ত্রী-উপদেষ্টা করে সংসদে বসাল। জাতির পিতার খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করলো আর তার থেকে একধাপ উপরে গিয়ে তার স্ত্রী খালেদা জিয়া কর্নেল রশিদ এবং হুদাকে এমপি বানিয়ে সংসদে বসাল। এই তো তাদের চরিত্র। খুনি, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদ, যুদ্ধাপরাধী, ধর্ষণকারী এদের নিয়েই তাদের চলাফেরা। গোলাম আযম পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে চলে গিয়েছিল। জিয়াউর রহমাান তাকে ফেরত নিয়ে এলো’।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে ‘হাড়িভাঙ্গা আম’ পাঠানোর জন্য বিএনপির সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমি কেবল পাকিস্তান নয়, আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা এমনকি মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে সব দেশেই এই আম পাঠিয়েছি। কারণ, আমাদের আম অত্যন্ত সুস্বাদু। একটা হচ্ছে বন্ধুত্বের নিদর্শন। আরেকটা হচ্ছে আমার এই উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণ, এটা বাস্তবকথা। দুই দিকেই আমাকে দেখতে হবে এবং আম কিন্তু সবাইকেই পাঠিয়েছি’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একাত্তর সালে পাকিস্তানি সেনারা আমাদের ওপর যে অত্যাচার করেছে সেটা নিশ্চই আমরা ভুলতে পারি না। সেটা ভুলে গিয়েছিল বিএনপি’। তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা, বঙ্গবন্ধু তাকে খেতাব দিয়েছেন সবই সত্যি। কিন্তু আদতে মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানটা কী? মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কর্নেল আসলাম বেগ, জিয়াউর রহমানকে চিঠি দেয় এবং যে চিঠিও আমার কাছে রয়েছে’। খবর বাংলানিউজের
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়া যেখানকার দায়িত্বে ছিল সেখানেই সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে, ক্যাজুয়ালিটি বেশি হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন আসে সে তখন যুদ্ধে কী কাজ করেছে, পাকিস্তানিদের পক্ষে যাতে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা মৃত্যুবরণ করে সেই ব্যবস্থা করেছিল কিনা, সেটাই আমার প্রশ্ন’।
তিনি বলেন, ‘জিয়া তো একটা সেক্টরের অধিনায়ক। সেক্টর কমান্ডার ছিল জিয়া। একটা সেক্টরের অধিনায়ক হয়ে সেখানকার ক্যাজুয়ালিটি বাড়িয়ে দেওয়ার মানে কী? সে নিজের হাতে পাকিস্তানি সেনাদের গুলি করতে যায়নি বরং আমাদের নিজেদের লোকদের এগিয়ে দিয়েছে মরতে। এ বিষয়টি মেজর হাফিজের বইতেও রয়েছে, পরে যে বইয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কর্নেল আসলাম বেগ তখন ঢাকায় দায়িত্বরত ছিল পরে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হয়েছিল। সেই কর্নেল আসলাম বেগ জিয়াকে মুক্তিযুদ্ধকালীন ৭১ সালে একটা চিঠি দেয়। সেই চিঠিতে সে লিখেছিল- আপনি খুব ভালো কাজ করছেন। আমরা আপনার কাজে সন্তুষ্ট। আপনার স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে চিন্তা করবেন না। আপনাকে ভবিষ্যতে আরো কাজ দেওয়া হবে’।