জিয়ার কবর বিতর্ক এবার সংসদে

8

পূর্বদেশ ডেস্ক

ঢাকার চন্দ্রিমা উদ্যানের কবরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের লাশ থাকা-না থাকা নিয়ে জাতীয় সংসদে দু’পক্ষ পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশনে ‘বাংলাদেশ জাতীয় আর্কাইভস বিল-২০২১’ পাসের প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা এ বিষয়ে কথা বলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে বিলের ওপর যাচাই-বাছাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনাকালে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন বিএনপির সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন। এরপর বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দেন। সংস্কৃতিপ্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ জিয়ার লাশ থাকার বিষয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধানের প্রস্তাব দেন। পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম দীর্ঘ বক্তৃতা করেন।
বিএনপির সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, একজন সংসদ সদস্য বলেছেন ‑ সঠিক ইতিহাস আসতে নাকি শত বছর লাগে। মৃত্যুর ৪০ বছর পরে সঠিক ইতিহাস বের হলে সমস্যা কোথায়? জিয়াউর রহমানের লাশ আছে কি নাই ‑ এটা বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণের ব্যবস্থা আছে। আপনারা (বিএনপি) নিরপেক্ষ একটা কমিটি করেন। সরকার সহযোগিতা করবে। সত্য উদ্ঘাটনে ভয়ের কী আছে? তিনি বলেন, আপনাদের দলের নেত্রীকে বলেন, যদিও তিনি সাজাপ্রাপ্ত। প্রধানমন্ত্রীর অনুকম্পায় সাজা স্থগিত নিয়ে কারাগারের বাইরে বসবাস করছেন। আইনে সুযোগ থাকলে তার নেতৃত্বে কমিটি করেন।
পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, সেখানে কোনো লাশ নেই তা ৪০ বছর আগেই প্রমাণিত। একটি বাক্স রয়েছে। ওই বাক্স সরিয়ে ফেলার দাবি তুলে শেখ সেলিম বলেন, লাশ থাকলে তার স্ত্রী সন্তানকে দেখানো হয়নি কেন? তখন ক্ষমতায় থেকেও বিএনপি লাশ থাকার প্রমাণ দিতে পারেনি। যদি লাশ থেকে থাকে, আগামী এক মাসের মধ্যে প্রমাণ দিতে হবে। ভবিষ্যতে সংসদে লাশ নিয়ে কোনো কথা যাতে না হয়, সেই ব্যবস্থা নিতে স্পিকারকে অনুরোধ করেন শেখ সেলিম।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সেনাবাহিনীর একদল সদস্যের অভ্যুত্থানে নিহত হন সে সময় রাষ্ট্রপতি পদে থাকা জিয়াউর রহমান। ঘটনার আগের দিন স্থানীয় বিএনপি নেতাদের বিরোধ মেটাতে চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর গত নবম ও দশম জাতীয় সংসদের একাধিক বৈঠকে জাতীয় সংসদ এলাকা থেকে জিয়ার কবরসহ লুই আই কানের নকশাবহির্ভূত সব স্থাপনা সরানোর বিষয়ে কথা ওঠে। তখন বিএনপির পক্ষ থেকে প্রবল আপত্তি তোলা হয়েছিল। তবে ওই আলোচনা এক সময় স্তিমিত হয়ে পড়েছিল।
স¤প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বক্তৃতায় বলেন, ওই কবরে জিয়ার লাশ নেই। এর পর জিয়ার লাশ নিয়ে আবার সরব হয় রাজনৈতিক অঙ্গন।
আরকাইভস বিল বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের আলোচনাকালে বিএনপির সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, জিয়াউর রহমানের লাশ সেখানে (চন্দ্রিমা উদ্যান) আছে কি নাই, সেটা বড় বিষয় নয়। সেখানে যে লাশ নাই, তা আপনারা (আওয়ামী লীগ) কীভাবে জানলেন? এতবছর ধরে ক্ষমতায় আছে। এটা নিয়ে আগে তো কথা বলেন নাই কেন? এখন কেন বলছেন?
জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ইতিহাস বিকৃতিতো বিএনপিও করে। তারা বলেন স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান। এ বিষয়ে আমাদের সুপ্রিম কোর্টের নির্দশনা রয়েছে। আর তিনি (জিয়াউর রহমান) বেঁচে থাকতে কখনোই বলতে শুনেনি, দেখিনি উনি নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক বলেছেন। তাদের প্রথমে ইতিহাস বিকৃতি বন্ধ করতে হবে। তারপর আওয়ামী লীগ যদি ইতিহাস বিকৃতি করে থাকে, সেটা বন্ধের আহŸান বিএনপি জানাতে পারে।
বিএনপি হারুনুর রশীদ বলেন, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ তার বক্তব্যে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের লাশ থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ১৯৭৯ সালে সংসদ ছিল। সেখানে আওয়ামী লীগও ছিল। মানিক মিয়া এভিনিউয়ে যে জানাজা হয়েছিল, তাতে সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। শোক প্রস্তাবের উপর সংসদে দীর্ঘ আলোচনায় তারা অংশ নিয়েছিলেন। সেগুলো প্রসিডিংসের মধ্যে রয়েছে। আমার কথায় যদি কোনো অপ্রাসঙ্গিক বিষয় থাকে, তা এক্সপাঞ্জ করুন।
বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, আরকাইভস যদি করতে হয়, তাহলে স্বীকার করতে হবে জিয়াউর রহমান ছিলেন রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ছিলেন বীর উত্তম, এটা স্বীকার করেতে হবে। তিনি ছিলেন আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার। উনারা উনাদের কথা বলবেন। আর আমরা আমাদের কথা। এইটুকু ধৈর্য যদি তাদের না থাকে, তাহলে তারা কী ইতিহাস লিখবে? চর্চা করবে? আরকাইভসে কী জমা হবে সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছি।
রুমিন বলেন, ইতিহাস সবসময় জয়ীদের হাতে লেখা হয় বলে। তাই আমাদের মত দেশে প্রকৃত ইতিহাস জানতে শতবছর লাগে। যতদিন পর্যন্ত দলীয় চশমায় ইতিহাস লেখা হয়, তাতে আইন পাস করে কোনো লাভ হবে না। আজকে ৪০ বছর পরে কেন জিয়াউর রহমানের কবর নিয়ে এই বিতর্ক। সরকারের ব্যর্থতা, ভোট চুরি, গণতন্ত্রহীনতা, লুটপাট থেকে মানুষের দৃষ্টিকে অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য এই বিতর্ক করা হচ্ছে।
রুমিন ফারহানার বক্তব্যের শেষ দিকে সংসদে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সরকার দলীয় সদস্যরা হইচই করেন।