জিপি-রবির লাইসেন্স কেন বাতিল হবে না

59

দুই দফা চাপ দিয়েও নিরীক্ষা আপত্তির ‘পাওনা’ টাকা আদায় করতে না পেরে দেশের দুই শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবির বিরুদ্ধে ‘চূড়ান্ত’ পদক্ষেপে গেল সরকার। টাকা না দেওয়ায় গ্রামীণফোন ও রবির লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না- তা জানতে চেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুই অপারেটরকে ‘কারণ দর্শাও’ নোটিশ পাঠিয়েছে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।
কমিশনের চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০১ এর ৪৬(২) ধারা মোতাবেক মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবির লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না, আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তা জানাতে বলা হয়েছে নোটিসে’।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নোটিশের জবাব না দিলে বা পাওনা টাকা পরিশোধ না করলে পরবর্তী পদক্ষেপ বিষয়ে সোয়া ১২ লাখ গ্রাহকের এই দুই অপারেটরে প্রশাসক নিয়োগের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে জানান বিটিআরসি প্রধান।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিটিআরসির ওই নোটিশকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যায়িত করে গ্রামীণফোন বলেছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার এই ‘অন্যায্য’ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা তারা নেবে।
বিটিআরসি’র দাবি, গ্রামীণফোনের কাছে নিরীক্ষা আপত্তির দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে তাদের। প্রথম ধাপে ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দিয়ে এবং দ্বিতীয় ধাপে বিভিন্ন ধরনের সেবার অনুমোদন ও অনাপত্তিপত্র দেওয়া বন্ধ রেখেও কাজ না হওয়ায় সরকার এমন পদক্ষেপে যেতে বাধ্য হয়েছে বলে বিটিআরসি কর্মকর্তাদের ভাষ্য। আর এই ‘চূড়ান্ত পদক্ষেপ’ নেওয়ার এখতিয়ার সরকারের আছে মন্তব্য করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গত ২৮ আগস্ট বলেছিলেন, ‘গা যেহেতু করছে না, আমরা তো জাতীয় অর্থ পানিতে ফেলে রাখতে পারি না। এই ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দিতে পারি না’। খবর বিডিনিউজের
বিটিআরসি নোটিশ পাঠানোর পর এক বিবৃতিতে গ্রামীণফোন ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, তবে রবির আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। বিবৃতিতে গ্রামীণফোন বলেছে, ‘বিটিআরসির নোটিশটি অযৌক্তিক। সেই সঙ্গে একটি বিতর্কিত অডিট দাবির বিষয়ে আমাদের গঠনমূলক সমাধান প্রস্তাবের বিপরীতে তাদের অনীহার আরেকটি বহিঃপ্রকাশ। নোটিসটি পর্যালোচনা করার পর গ্রামীণফোন এ বিষয়ে উত্তর দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আমাদের প্রতিষ্ঠান, শেয়ারহোল্ডার ও সম্মানিত গ্রাহকদের অধিকার রক্ষায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার অন্যায্য যে কোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আমরা প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করব’।
বিটিআরসির দাবি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সালিশের মাধ্যমে বিষয়টির মীমাংসা করার প্রস্তাব দিয়েছিল রবি আর জিপি। কিন্তু তাতে সাড়া না দিয়ে বিটিআরসির পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের আইনে এ ধরনের ক্ষেত্রে সালিশের কোনো সুযোগ নেই। তাগাদা দেওয়ার পরও ওই টাকা পরিশোধ না করার যুক্তি দেখিয়ে গত ৪ জুলাই গ্রামীণফোনের ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি ৩০ শতাংশ এবং রবির ১৫ শতাংশ সীমিত করতে আইআইজিগুলোকে নির্দেশ দেয় বিটিআরসি। কিন্তু তাতে গ্রাহকের সমস্যা হওয়ায় ১৩ দিনের মাথায় ওই নির্দেশনা প্রত্যাহার করে নেয় বিটিআরসি। এরপর ২২ জুলাই গ্রামীণফোন ও রবিকে বিভিন্ন প্রকার সেবার অনুমোদন ও অনাপত্তিপত্র (এনওসি) দেওয়া স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বিটিআরসি ‘এনওসি’ দেওয়া বন্ধ রাখায় গ্রামীণফোন ও রবি বর্তমান সেবা চালিয়ে নিতে কোনো সমস্যায় পড়ছে না। তবে তারা নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ বা বিটিএস স্থাপন করতে পারছে না, যন্ত্রাংশ আমদানির অনুমতি পাবে না, নতুন কোনো প্যাকেজ তারা বাজারে ছাড়তে পারছে না, চলতি প্যাকেজে কোনো পরিবর্তনও আনতে পারছে না।
দেশে গ্রাহকের হাতে থাকা ১৬ কোটি ৮২ হাজার নিবন্ধিত মোবাইল সিমের মধ্যে ৭ কোটি ৪৭ লাখ সিম গ্রামীণফোনের। আর রবির ৪ কোটি ৭৬ লাখ সিম রয়েছে গ্রাহকের হাতে। এই হিসাবে মোট গ্রাহকের ৪৬.৪৯ শতাংশ গ্রামীণফোন এবং ২৯.৬৫ শতাংশ রবির সেবা নিয়ে থাকেন।
দেশের ৯ কোটি ৪৪ লাখ ইন্টারনেট গ্রাহকের মধ্যে ৮ কোটি ৮৬ লাখই মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, যা মোট গ্রাহকের ৯৩.৮৭ শতাশংশ।