‘জায়ান্ট কিলার’ ইয়াং এলিফ্যান্টসকে হারিয়ে সেমিতে চট্টগ্রাম আবাহনী

23

ভারতের শতবর্ষী ফুটবল টিম মোহনবাগানকে (২-১) হারিয়ে চমক সৃষ্ঠি করে এবারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের জায়ান্ট কিলার হিসেবে আবির্ভুত হয়েছিল লাওসের ইয়াং এলিফ্যান্টস। অপরদিকে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টস ক্লাবকে ৪-১ গোলে পরাজিত করে দাপটের সাথে শিরোপা পুনরুদ্ধারের মিশন শুরু করে টুর্নামেন্টের প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন চট্টগ্রাম আবাহনী। গতকাল মুখোমুখি হয় এবারের টুর্নামেন্টের প্রথম দু’ম্যাচের জয়ী দল চট্টগ্রাম আবাহনী ও ইয়াং এলিফ্যান্টস। চট্টগ্রামের দলটির খেলা দেখতে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে হাজির হয়েছিলেন হাজার হাজার দর্শক। তাদেরকে হতাশ করেননি জামাল ভুঁইয়ারা। প্রথমে গোল করে দু’গোলে পিছিয়ে পড়েও ৪-২ গোলে জয়ী হয় স্বাগতিক দল। টানা দুই জয়ের সুবাদে চট্টগ্রাম আবাহনী এবারের টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল অনেকটাই নিশ্চিত করে ফেলেছে। কেননা শেষ ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনী এক পয়েন্ট পেলেই হবে। আর মোহনবাগানের বিপক্ষে হারলেও গোল গড়ে যেভাবে এগিয়ে রয়েছে আবাহনী (৬পয়েন্ট) তাতে বাদ পড়া অসম্ভবই বলা যায়।
‘এ’ গ্রুপের অন্য ম্যাচে গতবারের চ্যাম্পিয়ন টিসি স্পোর্টসের বিপক্ষে ২-০ গোলে জিতেছে মোহনবাগান। মোহনবাগান ও এলিফ্যান্টস দুই দলেরই সংগ্রহ সমান ৩ পয়েন্ট। পয়েন্টের খাতা এখনও খুলতে পারেনি বর্তমান চ্যাম্পিয়ন টিসি স্পোর্টস।
মোহনবাগানকে হারানো ইয়াং এলিফ্যান্টস এর বিপক্ষে দুর্দান্ত ঘুরে দাড়ানোর গল্প উপহার দিয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনী। জোড়া গোল করার পাশাপাশি একটি গোল করিয়েছেন জামাল ভূঁইয়া।
ম্যাচের শুরুতেই লাওসের দলটিকে চমকে দেয় মারুফুল হকের শিষ্যরা। নয় মিনিটে লুকার পাস থেকে ম্যাথিউয়ের গোলে (১-০) লিড নেয় আকাশী-হলুদরা। প্রথম ম্যাচে জোড়া গোল করা নাইজেরিয়ান এই ফুটবলার এই ম্যাচেও লিড এনে দেন স্বাগতিকদের।
সেই লিড বেশিখন ধরে রাখতে পারেনি তারা। পাঁচ মিনিটের মাথায় দুর্দান্ত ফ্রি-কিক থেকে ইয়াং শিবিরকে সমতায় ফেরান আফিক্স আই (১-১)। গোল হজম করে বেশ আগ্রাসী হয়ে ওঠে মারুফুল হকের দল। এর মাঝে ২২ মিনিটের মাথায় পাল্টা আক্রমণে ফ্রি-কিক আদায় করে নিয়ে জামাল ভূঁইয়ার বুলেট শট আটকে দেয় লাওসের দলের গোলরক্ষক। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ঠাসা ম্যাচটাতে ৩৩ মিনিটে ডিফেন্ডারদের হাস্যকর ভুলে উল্টো দ্বিতীয় গোল হজম করে বসে চট্টগ্রাম আবাহনী। ডি-বক্সের ভেতর সতীর্থকে উদ্দেশ্য করে বল বাড়িয়েছিলেন ইকবল জন। কিন্তু সেই বল পেয়ে যান সোমজে কিওহানাম। দ্রুত ইয়ং ফরোয়ার্ড বল জড়িয়ে দেন জালে (২-১)। এই লাওস ফুটবলারই মোহনবাগানের বিপক্ষে জোড়া আঘাতে জর্জরিত করেছিলেন।
২-১ এ পিছিয়ে থাকা মারুফুল হকের শিষ্যরা যেন দ্বিতীয়ার্ধে তেতে উঠে হাজারো দর্শকের সামনে। এবার এগিয়ে আসেন জামাল ভূঁইয়া। তার পাস থেকে হেডে চট্টগ্রাম আবাহনীকে সমতায় ফেরান রাশিয়ান ফুটবলার লুকা। আগের ম্যাচেও জালের সন্ধান পেয়েছিলেন লুকা।
সমতায় ফিরেই আর ফিরে তাকাতে হয়নি আয়োজকদের। পুরো ম্যাচের বল নিয়ন্ত্রণ নিজেদের নাটাইয়ে রেখে আক্রমণের পর আক্রমণ সাজিয়ে গেছেন। তার সফলতা এলো তাৎক্ষণিকভাবে। ৭২ মিনিটে আবার লিড নিলো চট্টলার দলটি। রহমত মিয়ার থ্রোটা ডি বক্সের ভেতরে জটলায় পড়ে বাইরে চলে আসলে বাঁ পায়ের বুলেট শটে বল জালে জড়ান জামাল ভূঁইয়া (৩-২ )।
হাজার হাজার দর্শকের গলা ফাটানো উৎসাহ ধ্বনিতে উজ্জীবিত আবাহনী এরপর আক্রমণ চালিয়েছে একের পর এক। ৭৭ মিনিটে কর্নার কিক নেন অনবদ্য খেলতে থাকা জামাল ভুঁইয়া। তার মাপা শটে হেড নিয়ে জোড়া গোল পূরণ করেন চিনেডো ম্যাথিউ। এই নিয়ে আসরে চতুর্থ গোলের দেখা পেলেন তিনি। এর আগে টিসি স্পোর্টসের বিপক্ষে জোড়া গোল করেছিলেন ম্যাথিউ (৪-২)। শেষ দিকে চিটপাসংয়ের শট ফেরান গোলরক্ষক মোহাম্মদ নেহাল। আফিক্সাইয়ের ফ্রি-কিক নেহালকে ফাঁকি দিলেও ক্রসবারে লেগে ফেরে। প্রথম হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে লাওসের দলটি।
অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে টানা ২য় ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের সম্মান অর্জন করেন চট্টগ্রাম আবাহনীর জামাল ভুঁইয়া। তার হাতে ক্রেস্ট ও প্রাইজমানি তুলে দেন টুর্নাসেন্টের আয়োজক চট্টগ্রাম আবাহনীর মহাসচিব, শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব, জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মেহেদি হাসান, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহেছানুল হায়দার চৌধুরী (বাবুল) ও সিজেকেএস নির্বাহী সদস্য অহিদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন)।
২৫ অক্টোবর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচে মোহনবাগানের সঙ্গে খেলবে চট্টগ্রাম আবাহনী।