জালে আটকে মারা পড়ছে একের পর এক ডলফিন

19

সীতাকুন্ড প্রতিনিধি

সীতাকুন্ডে প্রতিবছরের ন্যায় এই বছর জেলেদের জালে রুপালী ইলিশ কম পড়লেও মৎস্য অফিস কর্মকর্তাদের নীরবতায় এলোপাতাড়ি জাল বসানোর কারণে জালে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। একই সাথে মারা পড়ছে বিরল প্রজাতির ডলফিন, কাঁকড়াসহ জলজ প্রাণী। গত এক সপ্তাহ ধরে উপজেলার বঙ্গোপসাগর উপকূলে ভেসে এসেছে তিনটি মৃত ডলফিন। ইতিমধ্যে ডলফিনগুলোর পচা দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। অনেকে রোগাক্রান্ত হবার আশঙ্কা প্রকাশ করছে। এ অবস্থায় পচা ডলফিনগুলো মাটি চাপা দেওয়ার জন্য স্থানীয়রা অভিযোগ করলেও মৎস্য অফিস ও বন বিভাগের মধ্যে টানাহেঁচড়া চলে। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর উপকূলীয় বন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরতহাল পরবর্তী পচাগলা ডলফিনটি সাগর তীরে মাটি চাপা দেন।
বাড়বকুন্ড সাগর উপকূল এলাকার জসিম উদ্দিন বলেন, গত কয়েকদিন আগে সাগর থেকে উপকূল এলাকায় একটি মৃত ডলফিন ভেসে আসে। ধারণা করা হচ্ছে- ইলিশ মৌসুমে জেলেদের জালে আটকা পড়ে এই ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়রা বিষয়টি মৎস্য অফিসকে অবগত করলে উনারা বন বিভাগকে বলতে পরামর্শ প্রদান করেন। উভয়ের টানাটানির পর গতকাল দুপুরের দিকে বন বিভাগ পচা ডলফিনটি মাটিতে পুঁতে ফেলে। সাধারণত বঙ্গাপসাগরে এই প্রজাতির ডলফিন দেখা যায় না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিন আগে উপজেলার সাগর উপকূল এলাকায় জোয়ারের পানিতে ভেসে এসেছে বিরল প্রজাতির তিনটি মৃত ইরাবতী ডলফিন। ইলিশ মৌসুমে সাগরে জেলেদের অনিয়ন্ত্রিত জাল বসানোর কারণে ডলফিনগুলো জালে আটকে মারা যাচ্ছে। মূলত মৎস্য অফিসের কর্মকর্তাদের নীরবতায় জেলেরা সাগরে যেনতেনভাবে জাল বসাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বঙ্গোপসাগরের ডলফিন, লাল কাঁকড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। গত কয়েকদিনে উপজেলার বাড়বকুন্ড ইউনিয়নের সাগর উপকূলে একটি ডলফিন ও সৈয়দপুর এলাকায় দুটি ডলফিন ভেসে আসে। সৈয়দপুর এলাকার ডলফিনগুলো পচে দুর্গন্ধ বের হলে স্থানীয়রা মাটিতে পুঁতে ফেলেন। তবে বাড়বকুন্ড এলাকার ডলফিনটি উদ্ধারে স্থানীয়রা মৎস্য অফিসকে অবগত করলে তারা বন বিভাগকে জানাতে পরামর্শ দেন। দুই সংস্থার টানাটানিতে প্রচন্ড গরমে পচে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে ডলফিনটি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দুপুরের পর বন বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরতহাল করে পচা ডলফিনটি উপকূলীয় এলাকায় মাটিতে পুঁতে ফেলেন। এর আগে গত ২০ আগস্ট উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের বগাচতর উপক‚লেও একটি মৃত ডলফিন ভেসে আসে। এ নিয়ে সীতাকুন্ডের সাগর উপকূলে এক মাসে মোট ৪টি মৃত ডলফিন ভেসে আসে। উপকূলীয় বনের ঘাসের ওপরে পড়ে থাকা ডলফিনটি আনুমানিক ৭ ফুট লম্বা। এর ওজন আনুমানিক ১ শত কেজির বেশি হবে। এই ডলফিনগুলো মিঠা পানিতে থাকে। মিয়ানমার সাগরে সাধারণত এসব ডলফিনের বিচরণ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সীতাকুন্ড উপকূলীয় বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ কামাল উদ্দিন বলেন, বঙ্গোপসাগরের জেলেরা এলোপাতাড়ি ইলিশ জাল বসানোর কারণে জেলেদের জালে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে ডলফিন। আর এগুলো দেখভাল করবে মৎস্য অফিস। কিন্তু তারা অদৃশ্য কারণে নিরব। আমরা বাড়বকুন্ড এলাকায় একটি ডলফিন সুরতহাল পরবর্তী মাটিতে পুঁতে ফেলেছি। গত এক মাসে সীতাকুন্ড সাগর উপকূল এলাকায় ৪টি মৃত ডলফিন ভেসে আসে। এভাবে সাগরে যদি জেলেদের জালে আটকা পড়ে ডলফিন মারা যায় ভবিষ্যতে সাগর ডলফিনশূন্য হয়ে পড়বে। অন্যদিকে বিলুপ্ত হবে বিরল প্রজাতির ডলফিন।
এসব বিষয়ে জানতে সীতাকুন্ড উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ শামীম আহমেদকে উনার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করেও ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।