জালালাবাদে ‘ভুলকে’ পুঁজি করে কোটি টাকার বাণিজ্য!

83

ভুল করে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি বিএস জরিপে খাস খতিয়ানে লিপিবদ্ধ হয়। আর তাতেই বন্দোবস্তি নেয় ‘জেলা প্রশাসক পরিবহন পুল সমবায় সমিতি লি.’ নামে একটি সংগঠন। জায়গাটির মূল মালিক বন্দোবস্তির বিরুদ্ধে আপত্তি জানালে ভূমি মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে পরিবহন পুলের দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্তি বাতিল করে। কিন্তু ওই সংগঠনের কতিপয় অসাধু ব্যক্তি জাল খতিয়ান তৈরি করে মানুষের কাছে জায়গা বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, নগরীর খুলশী থানার পূর্ব পাহাড়তলী মৌজার আরএস খতিয়ান নং ২৫ এর দাগ নং ৩৬, বর্তমানে বিএস ৩৪ দাগের ৫ দশমিক ৪৭ একর জায়গার আর.এস রেকর্ডিয় মালিক আবদুল আজিজ। পরে তার মৃত্যুতে দুইপুত্র আবুল কাসেম ও আবুল হাশেম ওয়ারিশ সূত্রে স্বত্ববান ও দখলকার থাকা অবস্থায় জায়গাটি ১৯৯৭ সালে জালালাবাদ কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির লি. এর কাছে বিক্রি করেন। সে অনুসারে জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটি সিডিএ’র (চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) অনুমতি নিয়ে প্লট তৈরি করে সদস্যদের মধ্যে বরাদ্দ দেয়। বরাদ্দ পেয়ে সদস্যরা ঘর-বাড়ি তৈরি করে বসবাস ও ভোগদখল করে আসছেন বলে জানা গেছে।
তবে বিএস জরিপ হলে ‘ভুলবশত’ সরকারি খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত হয়। আর সে সুযোগে ১৯৮৮ সালে ‘জেলা প্রশাসক পরিবহন পুল সমবায় সমিতি লি. বন্দোবস্ত ভাগিয়ে নেয়। এমনকি জায়গাটি পরিকল্পিতভাবে খাস ঘোষণা করার পেছনেও সংগঠনটির হাত রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এরই মধ্যে বন্দোবস্তের বিপরীতে খতিয়ান তৈরি করে মানুষকে বিভ্রান্ত জায়গা বিক্রির নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনের নেতৃত্বে একটি চক্র।
অন্যদিকে ১৯৯০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর জায়গাটির বিপরীতে বন্দোবস্ত বাতিল করে ভূমি মন্ত্রণালয়। একইসাথে সংশ্লিষ্ট তহশীলদারের মাধ্যমে মূল মালিককে স্বত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক পরিবহন পুল কর্মচারী সমবায় সমিতি চট্টগ্রামকে নির্র্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও কর্ণপাত করেনি চক্রটি। উল্টো জায়গার নামে বিভিন্ন জাল কাগজপত্র তৈরি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে। ভূমি মন্ত্রণালয় বাতিল ঘোষণা করার পর বিষয়টিকে জিইয়ে রাখতে পরিবহন পুল সমবায় সমিতি মন্ত্রাণালয়ের ৮ নং শাখার নাম ব্যবহার করে জাল স্মারকমূলে (নং- ভূ.ম.শা. ০৯/১২২/৯০- রীট/২২২ তাং ১২/০৪/১৯৯৪) বন্দোবস্ত বহাল দাবি করে আসছে। সেই স্মারকের সূত্র ধরে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে স্মারকটির কোন অস্তিত্ব নেই বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিয়ে পৃথক দুইটি মামলা করেছে জালালাবাদ কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি। একটি জেলা প্রশাসক চট্টগ্রামকে বিবাদী করে যুগ্ম জেলা জজ ৩য় আদালতে খাস খতিয়ান থেকে জায়গাটি সংশোধন করার জন্য। বিবাদী সরকারের উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ হয় এবং জালালবাদ হাউজিং সোসাইটির দখলে বিঘ্ন সৃষ্টি না করার জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগণের উপর আদেশ জারি করেন আদালত।
অন্যদিকে পরিবহন পুল কর্তৃক সৃজনকৃত খতিয়ান (নামজারী) বাতিলের জন্য জালালাবাদ কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি খুলশী ভূমি অফিসে একটি ডকেট মামলা করেন (যার নং- ০৪/১৬)। ওই মামলাটি প্রায় চার বছর কাল শুনানি চলছে।
এদিকে ডকেট মামলার শুনানি বিলম্ব হওয়ার সুযোগে পরিবহন পুল সমবায় সমিতি ভুয়া খতিয়ানের উপর ভিত্তি করে কোটি কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন করছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কথিত জেলা প্রশাসক পুল পরিবহন সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হারুন ৪৮ জনকে বরাদ্দ দিয়েছেন। আবার অনেককে পাওয়ার অব এটর্নি দিয়ে জায়গা দখল করে যাচ্ছেন। ফলে বিবদমান বিষয়টি বিলম্ব হওয়ার সুযোগে মানুষকে বিভ্রান্ত করে টাকা হাতানোর জাল পেতেছে হারুন ও তার সহযোগীরা।
এ বিষয়ে জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুল হক বলেন, তারা ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে জায়গা বিক্রি করছে। সব ধরনের তথ্য প্রমাণ থাকার পরও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে প্রকৃত মালিকরা। তাই চিহ্নিত প্রতারক চক্রটিকে আইনের আওতায় আনা উচিত।