জামায়াত নিষিদ্ধে রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে

40

জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রশ্নে রায় পর্যন্ত অপেক্ষার কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে আদালতে চলমান মামলার রায় শিগগিরই হবে, এমন আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জামায়াতকে এদেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের নিষিদ্ধ করার জন্য কোর্টে একটি মামলা রয়েছে। সেই মামলার রায় যতক্ষণ পর্যন্ত না হবে, ততক্ষণ আমরা কোনও কিছু করতে পারবো না। শিগগিরই যদি রায় হয়ে যায়, তাহলে জামায়াত দল হিসেবে নিষিদ্ধ হবে।’
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারির সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠিত হয়। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
জামায়াত প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জামায়াতের কোনও নিবন্ধন নেই। তবে এটা ন্যক্কারজনক যে, তারা নিবন্ধিত না হয়েও জামায়াতের নামে ভোট করেছে। বিএনপির সঙ্গে একযোগে জোট করে ধানের শীষ নিয়ে প্রার্থী হয়েছিল। তবে জনগণ তাদের ভোট দেয়নি। সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।’
তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা বিষয়ে নজিবুল বশরের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, ‘যারা অপরাধী, মানুষ খুন থেকে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে যারা বিদেশে পলাতক আছে, সেই পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনার জন্য এরইমধ্যে আমাদের আলোচনা চলছে। বিশ্বাস করি, তাদের ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করতে পারবো।’
ডিসেম্বরের মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে : জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে সরকার প্রধান বলেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। এরইমধ্যে এ প্রকল্পের ৬২ শতাংশ ভৌত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কারিগরি দিক থেকে অত্যন্ত জটিল এ সেতুর পাইল ড্রাইভিং চলাকালে সয়েল কন্ডিশনের কারণে কিছু পাইলের নতুন করে ডিজাইন করতে হয়েছে। এতে কিছু অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন রয়েছে। তা সত্বেও ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যহত আছে।’
চট্টগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, ‘গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে এদেশের আপমর জনসাধারণ বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছে। এ বিজয় ছিল খুবই প্রত্যাশিত। নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জরিপের ফলাফলে এরকম পূর্বাভাসই দেওয়া হয়েছিল।’ এই ল্যান্ড-স্লাইড বিজয়ের বহুবিদ কারণ রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে আমাদের প্রধান প্রতিপক্ষের নির্বাচনি কোনও প্রস্তুতি বা কৌশল ছিল বলে মনে হয়নি।’ তাদের পরাজিত হওয়ার পেছনে এক আসনে একাধিক প্রার্থী মনোয়ন, মনোয়ন বাণিজ্য, দুর্বল প্রার্থী মনোনয়ন, সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন তার অনিশ্চয়তা, যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের মনোনয়নসহ বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করেন তিনি।
চট্টগ্রাম-১১ আসনের মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়, যা দেশ-বিদেশে সবার কাছে প্রশংসিত হয়।’
নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি রেকর্ডের জন্য রাজনীতি করি না। প্রধানমন্ত্রীত্ব আমার কাছে উপভোগের কোনও বিষয় নয়, এটি একটি দায়িত্ব এবং অবশ্যই কঠিন দায়িত্ব। যখনই আপনারা এ দায়িত্ব দিয়েছেন, তখনই আমি আরও বেশি করে দায় বোধ করেছি। আমার একমাত্র লক্ষ্য এদেশের মানুষ যাতে ভালোভাবে বাঁচতে পারেন, উন্নত-সমৃদ্ধ জীবনের অধিকারী হতে পারেন, তা বাস্তবায়ন করা।’
জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পরিচিত তথ্য যাচাইয়ের জন্য গত বছর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে আট হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার তালিকা সরবরাহ করলে, তারা তাদের মধ্যে পাঁচ হাজার ৩৮৪ জনকে মিয়ানমারের আধিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বাকি দুই হাজার ৪৩১ জনকে নিবন্ধিত পরিবারের তালিকায় খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে মিয়ানমার সরকার আমাদের জানিয়েছে।’
তিনি জানান, দু‘দেশের সম্মতিক্রমে ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর প্রত্যাবাসনের তারিখ নির্ধারণ করা হলেও মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে রাজি হয়নি। রোহিঙ্গাদের প্রতি অত্যাচার নির্যাতন ও নিপীড়ন বন্ধ করে তাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। আশা করা যায়, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ শিগগিরই রাখাইন রাজ্যে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে যথাসম্ভব দ্রæত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
নেত্রকোনা-৩ আসনের অসীম কুমার উকিলের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। এ উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি প্রণয়নের জন্য বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গৃহীত হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনি এলাকা কোটালিপাড়ায় উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ বিষয়ে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনও দেশের উন্নয়নের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনার প্রয়োজন হয়। কোথায় কোন কাজ করলে বেশির সংখ্যক মানুষ উপকৃত হবেন, সেদিকে চিন্তা করে কাজ করি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সমগ্র বাংলাদেশের জনগণের জন্যই আমার কাজ। শুধু নিজের কোলে ঝোল টানার কাজ আমি করি না। নিজের এলাকা দেখবো তা নয়, সার্বিকভাবে সমগ্র বাংলাদেশের সুষম উন্নয়নে বিশ্বাসী। তবে এটা ঠিক কোটালিপাড়া, টুঙ্গিপাড়াসহ দক্ষিণ অঞ্চল সবসময় অবহেলিত ছিল।’
চর জানাজাতের মাটি বিমানবন্দরের উপযোগী নয় : তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দর নির্মাণ করার মতো কোনও জায়গা কোটালিপাড়ায় নেই। সেটা সম্ভবও নয়। এটা করতে গেলে অনেক কৃষি জমি নষ্ট হয়ে যাবে। সেটা করতেও চাই না। দক্ষিণাঞ্চলে একটি বিমানবন্দর করার একটি পরিকল্পনা আমরা নিয়েছিলাম। কিন্তু অসুবিধাটা হলো, চর জানাজাতের মাটি আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি। ওখানটার মাটির বিমানবন্দর করার মতো শক্তি নেই। আমরা অন্যান্য জায়গায়ও এভাবে পরীক্ষা করেছি। তবে, বিকল্প হিসেবে রাস্তার ব্যাপক উন্নতি করে দিচ্ছি। পদ্মা সেতু হয়ে গেলে অল্প সময়ের মধ্যে কোটালিপাড়া-টুঙ্গিপাড়া পৌঁছাতে পারবো।’