জামালপুরের ডিসি ওএসডি তদন্ত কমিটি

99

এক ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে জামালপুর থেকে বদলি করে ‘বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা’ (ওএসডি) হিসেবে পাঠানো হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। জামালপুরের ডিসির দায়িত্ব পেয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ এনামুল হক, যিনি পরিকল্পনা মন্ত্রীর একান্ত সচিবের (পিএস) দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গতকাল গতকাল রবিবার এই বদলির আদেশ জারি করেছে। আর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠন করেছে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন অধিশাখা) মুশফিকুর রহমানকে আহ্বায়ক করে গঠিত এই কমিটিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি, ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনারের একজন প্রতিনিধি, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) একজন প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে রয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন শৃঙ্খলা অধিশাখার উপসচিব কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠপ্রশাসন অনুবিভাগ) আ. গাফ্ফার খান বলেছেন, কমিটিকে আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের
সম্প্রতি ফেসবুকে ৪ মিনিট ৫৮ সেকেন্ড এবং ২৪ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের দু’টি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে একজন পুরুষ ও একজন নারীকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা যায়। এর পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে আলোচনা চলছে। সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে ওই ভিডিও জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর তার অফিসের বিশ্রাম কক্ষের। পুরুষটি জেলা প্রশাসক নিজে এবং অন্যজন ওই অফিসেরই একজন সহকর্মী।
সময় টেলিভিশন গত শুক্রবার এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন সম্প্রচার করে, সেখানে বলা হয়, ডিসির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে ওই নারী কর্মী অফিসের সবার ওপর ‘খবরদারি’ চালাতে শুরু করেছিলেন। এ কারণে অফিসের কেউ ওই কক্ষে গোপন ক্যামেরা বসিয়ে দেন। ফেসবুকে আসা ভিডিও ওই ক্যামেরাতেই তোলা। তবে জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর নিজেকে নির্দোষ দাবি করে শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ওই ভিডিও’র পুরুষটি তিনি নন। এটি একটি ‘সাজানো ঘটনা’।
উদাহরণ সৃষ্টির মতো শাস্তি হবে :
অভিযোগ প্রমাণিত হলে জামালপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) থেকে ওএসডি হওয়া আহমেদ কবীরের বিরুদ্ধে ‘উদাহরণ সৃষ্টির মতো’ শাস্তির ব্যবস্থা হবে বলে মন্তব্য করেছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। গতকাল গতকাল রবিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই উদাহরণ সৃষ্টি করার মতো পানিশমেন্ট তার হবে। আমাদের চাকরির বিধানে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়ে গেছে। সেটিই হবে। আমরা খুব দ্রæত একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারব’।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সেখানে কি ঘটেছে, কতটুকু ‘অ নৈতিকতা’ সেখানে হয়েছে, সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করেই তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেবে। আর তার ভিত্তিতেই সরকার ব্যবস্থা নেবে। বিষয়টি অনেকের ‘দৃষ্টিগোচর’ হয়েছে মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটি অ নৈতিক কর্মকান্ড। একজন ডিসি হিসাবে তার যে দায়দায়িত্ব আছে, সেখান থেকে সরে গিয়ে যে অনৈতিক কর্মকান্ডের কথা আমরা দেখেছি- এটি আমাদের কাছে লিখিত এসেছে এবং আমরা খুব তড়িৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আমরা তাকে ওএসডি করেছি। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে আমরা সেটি করেছি আপাতত’।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে যারা আছে, তারা সরকারের চাকরি যদি করে থাকেন, সরকারি কর্মচারী হয়ে থাকেন, তাদের উভয়ের বিচার হবে, উভয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে’।
ডিসির বিশ্রাম কক্ষে ক্যামেরা গেল কিভাবে- এ প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আসলে সিসিটিভি থাকার কথা না কোনোভাবে। কিন্তু তার কর্মকান্ড তো এটা হওয়ার কথা না, এটাই বড় কথা। সে কি ধরনের কর্মকান্ড করবে, তাদের কোড অব ম্যানার্স আছে, এথিকস আছে। সেগুলো অনুযায়ী কিন্তু আমাদের সরকারি কর্মকর্তাদেরকে চলতে হয়’।
অনেক কর্মকর্তার জন্য ব্যক্তিগত বিশ্রাম কক্ষ থাকবে কিনা- সে বিষয়েও এখন সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে বলে মনে করছেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিষয়গুলো যাতে আরো পরিচ্ছন্ন থাকে, কারণ সাধারণত এ ধরনের ঘটনা ঘটে না। এ ধরনের ঘটনা সত্যিই আমাদের ব্যুরোক্রেসিতে যথেষ্ট পরিমাণে অস্বস্তি এনেছে’।
সম্প্রতি আহমেদ কবীরের পাওয়া শুদ্ধাচার সার্টিফিকেট প্রত্যাহার করা হবে কিনা জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই সেটি প্রত্যাহার করা হবে’।