জাপার নেতৃত্বে জিএম কাদের মহাসচিব রাঙ্গা

52

রওশন এরশাদকে প্রধান পৃষ্ঠপোষকের পদ দিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে বহাল থাকলেন জি এম কাদের। গতকাল শনিবার ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয় পার্টির নবম কেন্দ্রীয় সম্মেলনে এই ঘোষণা আসে। প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর এটাই জাতীয় পার্টির প্রথম সম্মেলন।
সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার শেখ সিরাজুল ইসলাম প্রধান পৃষ্ঠপোষক পদে রওশন এরশাদ এবং চেয়ারম্যান পদে জি এম কাদেরের নাম ঘোষণা করেন।
কাউন্সিলর ও প্রতিনিধিরা সমস্বরে তাতে সমর্থন দেন। দুই পদে তাদের কোনো প্রতিদ্ব›দ্বী ছিল না বলে কণ্ঠ ভোটেই প্রস্তাবটি পাস হয়ে যায়। দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রধান পৃষ্ঠপোষকের পদটি সম্মানসূচক আলঙ্করিক পদ, সব ক্ষমতা থাকবে চেয়ারম্যানের হাতেই।
সিরাজুলের ঘোষণার পর জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী দলের ‘সর্বময় ক্ষমতার মালিক’ চেয়ারম্যান জিএম কাদের মহাসচিব পদে মসিউর রহমান রাঙ্গার নাম ঘোষণা দেন। খবর বিডিনিউজের
শেখ সিরাজুল ইসলাম পরে জানান, জাতীয় পার্টিতে প্রধান পৃষ্ঠপোষকের পদ ছাড়াও সৃজন করা হয়েছে অতিরিক্ত মহাসচিবের পদ। দেশের আটটি বিভাগে আটজন অতিরিক্ত মহাসচিবকে নির্বাচিত হবেন। এছাড়াও কো-চেয়ারম্যান পদে আসছেন আরও ৫ নেতা।
অতিরিক্ত মহাসচিব ও কো চেয়ারম্যান পদে কারা থাকছেন, তা পরে ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানান শেখ সিরাজুল।
দলের এই নবম কাউন্সিল অনুষ্ঠানে আসেননি রওশন এরশাদ ও তার ছেলে রাহগির আল মাহী সাদ এরশাদ। দলের নেতারা জানিয়েছেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে রওশন অনুষ্ঠানস্থলে আসতে পারেননি।
কাউন্সিলের মূল মঞ্চ বা সম্মেলনের ব্যানারগুলোতেও এরশাদের স্ত্রী রওশনের ছবি ঠাঁই পায়নি। এরশাদের ছবির পাশাপাশি ভাই জিএম কাদেরের ছবি শোভা যায় ব্যানারে।
সকাল ১০টায় সম্মেলনস্থলে আসেন চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব রাঙ্গা। জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় ও দলীয় পতাকা তোলার পর শান্তির প্রতীক কবুতর ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন জি এম কাদের।
এতদিন রওমনের পক্ষ নিয়ে জি এম কাদেরের ঘোর বিরোধিতা করে আসা সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ মঞ্চে বসেন জি এম কাদেরের ডানের আসনটিতে।
বহিষ্কৃত মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বসেন বর্তমান মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার বাম পাশের আসনে।
এছাড়াও মঞ্চে বসেন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু, কাজী ফিরোজ রশীদ, সালমা ইসলাম, মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, নাজমা আখতার, ফখরুল ইমাম, নাসরিন জাহান রত্না, সাহিদুর রহমান টেপা, সাঈফুদ্দিন আহমেদ মিলন, লিয়াকত হোসেন খোকা, খালেদ আখতার, ফয়সল চিশতী, মীর আব্দুস সবুর আসুদ।
সম্মেলনে বক্তৃতায় জিএম কাদের ফের ক্ষমতায় আসার পথ সুগম করতে জাতীয় পার্টির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহব্বান জানান।
তিনি বলেন, আজ আপনারা নতুন এক দীক্ষায় দীক্ষিত হলেন। সেই দীক্ষা হল, দেশ ও জাতিকে মুক্তি দেওয়ার দীক্ষা। ক্ষুধাদারিদ্র্য থেকে মুক্তি, অন্যায়, অবিচার, বৈষম্য থেকে মুক্তি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে মুক্তি।
আর বসে থাকার সময় নেই। আপনারা তৃণমূল পর্যায় থেকে আজ এখানে এসেছেন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ুন। আমাদের অতীতের সাফল্যের কথা জনগণকে আবার স্মরণ করিয়ে দিন। তাদের সামনে উপস্থাপন করুন- আগামী দিনে দেশ ও জাতির জন্য আমরা কি করতে চাই।
জাতীয় পার্টি নিজেদের জনগণের ‘প্রকৃত বন্ধু’ হিসেবে দাবি করতে পারে মন্তব্য করে জি এম কাদের বলেন, আমরা গতানুগতিক ধারার রাজনীতি করি না। আমাদের অতীতের সফলতা এখনও জাতি স্মরণ করে।
জনগণ বিশ্বাস করে, আমরা নিজেরা ঐক্যবদ্ধ, সংগঠিত ও সুশৃঙ্খল হতে পারলেই তাদের সকল প্রত্যাশা আমরা পূরণ করতে পারব। অধিকাংশ দেশবাসী একথা বিশ্বাস করে। কেননা অতীতে ৯ বছরের শাসনামলে আমরা তা প্রমাণ দিয়েছি।
গত ১৪ জুলাই জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এরশাদের মৃত্যুর পর নানা নাটকীয়তার মধ্যে এগিয়েছে জাতীয় পার্টির রাজনীতি।
এরশাদপত্নী রওশনের সঙ্গে নেতৃত্ব নিয়ে বারবার দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন এরশাদের ভাই কাদের। এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলের নেতা হতে দুজনই স্পিকারকে চিঠি দিলে দ্ব›দ্ব আসে প্রকাশ্যে।
জিএম কাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান থেকে পূর্ণ চেয়ারম্যানের পদে আসীন হলে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন রওশন। তার অনুসারী নেতারা রওশনকে দলের চেয়ারম্যান হিসেবেও ঘোষণা দিয়েছিলেন।
এক পর্যায়ে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা সমঝোতা বৈঠকে বসে ভাঙন ঠেকান। সেই সমঝোতায় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব নেন রওশন, জিএম কাদের হন দলের চেয়ারম্যান।
দলে আর যেন ভাঙন না আসে সেজন্য নেতাকর্মীদের সক্রিয় থাকার অনুরোধ জানিয়ে জিএম কাদের কাউন্সিলে বলেন, এ দলের মালিকানা আপনাদের। একে রক্ষণাবেক্ষণে-প্রতিপালন করার দায়িত্ব আপনাদের।
দলের ভালো হলে আপনাদের ভালো, দলের ক্ষতি হলে আপনাদের ক্ষতি, এ কথাটি অন্তরে ধারণ করবেন। যখন যে অবস্থায় থাকবেন দলের কথা বলবেন। সবসময় দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন।
কাউন্সিলে জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটির আহব্বায়ক সুনীল শুভ রায় জানান, কাউন্সিলের প্রথম পর্যায়ে বেশ কিছু সংশোধনী এনে ধারা যোগ হয়েছে।
তিনি জানান, অন্য কোনো রাজনৈতিক দল থেকে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিতে হলে আগে সেই সদস্য বা নেতাকে সেই দল থেকে পদত্যাগ করতে হবে। পদত্যাগপত্রের নমুনাও দেখাতে হবে দপ্তর বিভাগে।
বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশে যদি জাতীয় পার্টি যাত্রা করে, তবে তারা পাবে উপজেলা কমিটির মর্যাদা। সেই দেশে অন্তত পাঁচটি কমিটি সক্রিয় রয়েছে, এমন প্রমাণ দেখালে মিলবে জেলা কমিটির মর্যাদা।
এছাড়াও জাতীয় তরুণ পার্টি, মোটরযান শ্রমিক পার্টি, জাতীয় শ্রমিক পার্টিকে জাতীয় পার্টির অঙ্গসংগঠনের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।