জাপানি বিনিয়োগ দেশের অর্থনীতিকে সম্মৃদ্ধ করবে

7

মিরসরাইতে ৫০ একর জমির উপর বাংলাদেশ ও জাপানি কোম্পানির যৌথ বিনিয়োগে নির্মিত হচ্ছে এলুমিনিয়াম কারখানা’। স্টার এ লাইড-ভেঞ্চার লি. এবং জাপান মেটাল কোম্পানির লি. এর মধ্যে মিরসরাইতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে ৫০ একর জমির উপর যৌথ বিনিয়োগের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এ সমঝোতা স্মারক দেশে আরো জাপানি বিনিয়োগের দ্বার উন্মুক্ত করবে। শিল্প ক্ষেত্রে জাপানি বিনিয়োগ খুব একটা নেই। চীন, কোরিয়া যেভাবে দেশে বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে তার সাথে জাপানও এখানে শিল্প বিনিয়োগে এগিয়ে আসলে দেশের শিল্প উন্নয়নে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। দেশে এলুমিনিয়াম ইনগট এবং কপার ইনগট তৈরির উন্নত মানের শিল্প কারখানা নেই। বাংলাদেশি ও জাপানি কোম্পানি দ্বয়ের মধ্যে এলুমিনিয়াম ইনগট এবং কপার ইনগট তৈরির যৌথ বিনিয়োগ একদিকে দেশের বেকার সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি উন্নতমানের টেকসই এলুমিনিয়াম সামগ্রী উৎপাদনের পথ উন্মুক্ত করবে। বর্তমানে এমন শিল্প সামগ্রী বিদেশ হতে আমদানি করতে হয়। দেশে এমন শিল্প সামগ্রী উৎপাদনের কারখানার যাত্রা এক দিকে এলুমিনিয়াম সামগ্রী আমদানি হ্রাস করবে অন্যদিকে দেশের এলুমিনিয়াম সেক্টর এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ-জাপান যৌথ উদ্যোগের বিনিয়োগ হতে উৎপাদিত সামগ্রী দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার অর্জনের বিশেষ ভ‚মিকা রাখবে।
আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে চিটাগাং চেম্বার কার্যালয়ের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলের এই সমঝোতা স্মারক অন্যান্য জাপানি বিনিয়োগ কারীদেরকেও উৎসাহিত করবে। জাপান মেটাল কোম্পানি জাপান হতে কারখানার কাঁচামাল এনে এখানে বিশ্বমানের এলুমিনিয়াম সামগ্রী উৎপাদন করা, দেশের জন্য খুবই আশাব্যঞ্জক বিষয়। জাপানি কোম্পানির প্রেসিডেন্ট মিজুতানি বাংলাদেশের বিনিয়োগের পরিবেশ সম্পর্কে বলেন- এখানে করোনাকালীন সময়ে শিল্প উৎপাদনের গতি যেভাবে সচল ছিল তা শুনে আমি এখানে বিনিয়োগে আগ্রহ পোষণ করি। এখানে এসে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ দেখে খুবই আশান্বিত। দেশে গিয়ে অন্যান্য জাপানি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করবো। একজন জাপানি কোম্পানির প্রেসিডেন্টের এমন বক্তব্য দেশের শিল্প উন্নয়নের গতি বৃদ্ধি করবে।
শিল্প- প্রযুক্তিতে আমাদের দেশ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শিল্পবান্ধব মানসিকতার কারণে দ্রæত উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিদেশিরা যত বিনিয়োগ করবে তত দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। দেশে এভাবে বিদেশি কোম্পানিগুলো শিল্পক্ষেত্রে এগিয়ে এলে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবার পাশাপাশি দেশ দ্রæত উন্নত দেশের তালিকায় স্থান লাভ করবে এমন ধারণা বিশেষজ্ঞদের। চট্টগ্রামে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যেভাবে এগিয়ে আসছে তা সমগ্রদেশের জন্য খুবই সুখকর বিষয়। মিরসরাই অর্থনৈতিক জোন, পতেঙ্গা ইপিজেট, কর্ণফুলী ইপিজেট, আনোয়ারা কেইপিজেট, আনোয়ারা চীনা অর্থনৈতিক জোন, কর্ণফুলী টানেল, কাফকো ইত্যাদি শিল্প জোনের পাশাপাশি বাঁশখালী অর্থনৈতিক জোনের কাজ দ্রæত এগিয়ে গেলে চট্টগ্রাম দেশের অর্থনীতিকে উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে যাবে। চট্টগ্রামে বিদেশি বিনিয়োগের সুবিধা ও সম্ভাবনার পাশাপাশি রাজধানির মতো চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নে জাতীয় ভাবে বৈষম্য দূরীকরণে সমূহ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দরকে ঘিরে দেশে অর্থনীতি ও শিল্প-বাণিজ্য যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সে তুলনায় সরকারিভাবে চট্টগ্রামের উন্নয়নে বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। সরকারের নীতি নির্ধারকরা চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নে আন্তরিকতার পরিচয় দিলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম দেশকে দ্রæত উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে এমন ধারণা অমূলক নয়। আমরা চাই দেশ এগিয়ে যাক। দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হোক। বিদেশিরা বেশি বেশি বিনিয়োগ করুক এদেশে। এর পূর্বশর্ত হলো সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে সরকারের উচিত চট্টগ্রামে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা। চট্টগ্রামকে ঢাকার পাশাপাশি উন্নয়ন ও উন্নত পরিবেশের স্থানে পরিণত করলে বাংলাদেশ পার্শ্ববর্তী সকল দেশকে অর্থনীতিতে ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হবে।