জাতীয় বাজেট স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন জরুরি

37

২০২০-২০২১ অর্থ বছরের বাজেট বরাদ্দে স্বাস্থ্যখাতে ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেটে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় জরুরি তহবিল হিসেবে ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতের বাজেট বরাদ্দ নিয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার শেষ নেই। কেউ কেউ সমালোচনার খাতিরে সমালোচনা করছে। আবার কেউ কেউ গঠন মূলক সমালোচনাও করছে। যে কোন দেশে স্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। গণস্বাস্থ্য ঠিক থাকলে দেশের উন্নতি অগ্রগতি, অর্থনৈতিক অবস্থা সঠিকভাবে পরিচালনা সম্ভব হয়। শ্রমজীবী, কৃষিজীবী হতে সমাজ ও রাষ্ট্রের সবধরনের মানুষ শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে দেশ ও জাতি এগিয়ে যেতে পারে, সুতরাং স্বাস্থ্যখাতে বাজেট পরিকল্পনার গুরুত্ব অপরিসীম। যে কারণে বাজেট বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্য খাতের বাজেট বরাদ্দ নিয়ে নানা কথা বলছেন। বলার যৌক্তিকতাও রয়েছে। আমাদের দেশে প্রতি অর্থ বছরে বাজেট হয়, কিন্তু তার শতভাগ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়না। এর পেছনে বিচিত্র জটিলতা পরিলক্ষিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অর্থ বছর শেষে জুনে এসে নামমাত্র বাস্তবায়নের নামে বিভিন্ন খাতের সংশ্লিষ্টরা দায়সারা গোচের নয়-ছয় করে বাজেটের বরাদ্দের অর্থকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করে থাকে। কোন কোন সেক্টরে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। বাজেট একটি দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বাজেট প্রণয়নে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা বিচার বিশ্লেষণ না করে বাজেটে অর্থ বরাদ্দ রাখা ‘আই ওয়াস’ মাত্র।
সরকারি পরিকল্পনার সমালোচনা আমরা করছিনা। সরকার বরাবরই সৎউদ্দেশ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণের স্বার্থে বিভিন্ন খাতে অর্থ বরাদ্দ করে থাকে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমাদের দেশে দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি, জনগণ ও বিভিন্ন সেক্টরের কল্যাণের অর্থ ব্যক্তিগত আত্মসাতের প্রবণতার কারণে যে কোন খাতের বরাদ্দের সঠিক বাস্তবায়নে সন্দেহ থেকেই যায়।
দেশের বর্তমানে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে রাষ্ট্রের নাগরিক জনজীবন এবং অর্থনৈতিক অবস্থা হুমকিতে আছে। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ প্রতি অর্থ বছরেই থাকে। দেশে করোনা ভাইরাস দেখা দেয়ার পর এদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তথা মেডিকেল সেক্টর করোনা ভাইরাসের সুচিকিৎসা এবং আনুসাঙ্গিক ব্যবস্থায় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। যা জাতির কাছে আজ স্পষ্ট। করোনা পরীক্ষার কীট হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসা ও তাদের রাখার সুব্যবস্থা দীর্ঘ ৩ মাসপরও স্বাভাবিক ভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ডাক্তার নার্সদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থায়ও দুর্বলতা ছিল উল্লেখ করার মতো। যার ফলে প্রথম থেকে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আমাদের চিকিৎসা সেক্টর ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থায় এখনো স্বাভাবিক পরিস্থিতি আনয়ন সম্ভব হয়নি। স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ যদি ব্যক্তি বিশেষের লুটের মালে পরিণত হয় অতীতের মতো ভবিষ্যৎ বাজেটের বরাদ্দও ব্যর্থ হতে বাধ্য। আমরা দেশের স্বাস্থ্যখাতে কত টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে তা নিয়ে বলছিনা। কত টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে তাও বলতে চাইনা। শুধু বলতে চাই-যাই রাখা হয়েছে তা যথাযথ বাস্তবায়নে সঠিক তদারকি ব্যবস্থার বিষয়ে সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কতটুকু পূর্ব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তা নিয়ে । আগে থেকে অর্থ অপচয়ের ছিদ্র বন্ধের ব্যবস্থা ছাড়া কোন বাজেট বরাদ্দ দেশ ও জনগণের কল্যাণে আসবে না। সরকারি ত্রাণ বিতরণ এবং সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ সম্প্রতি সময়ে যেভাবে চলেছে তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে বাজেটে স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দকে পরিকল্পনা মাফিক বাস্তবায়নের মুখ দেখাতে হবে। তা সম্ভব হলে যা বরাদ্দ হয়েছে তাতেও জাতির অনেক উপকার হবে সন্দেহ নেই।