জহুরের এলাকায় ভালো নেই যুবলীগ

6

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম জহুরের এলাকায় ভালো নেই যুবলীগ। যুবলীগের উপজেলা নেতাদের সাথে এই নেতার বিরোধ এখন তুঙ্গে। জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ফেসবুকেও ঝড় তুলছেন নেতাকর্মীরা। গত ১৪ এপ্রিল পৌর যুবলীগসহ কয়েকটি ইউনিয়ন কমিটি নিয়ে জেলার সিদ্ধান্তের পর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে এমন ক্ষোভ ঝারছেন উপজেলা যুবলীগের নেতাকর্মীরা। যদিও যারা এমন আচরণ করছেন তারা কেউ সংগঠনের দায়িত্বশীল ব্যক্তি নয় বলে জানিয়েছেন জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জহরুল ইসলাম জহুর।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম জহুর পূর্বদেশকে বলেন, ‘দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা আমাদের বিরুদ্ধে কিছুই বলছে না। ইতোমধ্যে সাংগঠনিক ব্যবস্থা যা নেয়ার নিয়েছি। সবাই একই আদর্শ নিয়ে সংগঠনে আসেনি। যে কারণে সংগঠনের বদনাম নিয়ে তাদের কিছু যায় আসে না।’ চরণদ্বীপের কমিটিতে নিজের ভাগিনাকে আনা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কমিটি আমরা দিই নাই। কমিটি দিয়েছে উপজেলা যুবলীগ। তারা আমাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছে। উপজেলা যুবলীগের নেতারাই পছন্দের ব্যক্তিদের কমিটিতে রেখেছিল।’
দলীয় সূত্র জানায়, গত ৩ এপ্রিল বোয়ালখালী পৌরসভা, শাকপুরা ইউনিয়ন ও পোপাদিয়া ইউনিয়নের কমিটি ঘোষণা করে উপজেলা যুবলীগ। এ কমিটি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে গত ১৪ এপ্রিল এসব কমিটি নিয়ে নির্দেশনা দেয় জেলা যুবলীগ। দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি মো. দিদারুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. জহুরুল ইসলাম জহুরের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের গঠনতন্ত্রের ২৩ ধারা অনুযায়ী উপজেলা কমিটি, কোন ইউনিয়ন কমিটি বিলুপ্ত কিংবা নতুন আহব্বায়ক কমিটি গঠন করতে চাইলে জেলা কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু বোয়ালখালী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, জেলা যুবলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ কিংবা পরামর্শ না করেই কমিটি করেছে। যেটা গঠনতন্ত্র পরিপন্থী ও স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত। অবৈধ ভাবে গঠিত বোয়ালখালী পৌরসভা ও পোপাদিয়া ইউনিয়নের নতুন কমিটি বাতিল করা হলো এবং আগের কমিটি বহাল করা হইল। একই সাথে শাকপুরা ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটিও বহাল করা হলো।
নেতাকর্মীরা জানান, এ বিজ্ঞপ্তি প্রচারের পর উপজেলা যুবলীগের নেতাদের সাথে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলামের বিরোধে তুঙ্গে উঠে। তবে চরণদ্বীপ যুবলীগের কমিটি গঠনের পর জহুরের বিরুদ্ধে বেশি বিতর্ক হয়। এ কমিটিতে যাকে সভাপতি করা হয়েছে তিনি জহুরের নিকটাত্মীয় হলেও পুরো পরিবার ভিন্ন দলের রাজনীতি করে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান বাবর এ নিয়ে জহুরের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ ঝেরেছেন। একইভাবে চরখিজিরপুর ইউনিয়নের সম্মেলনে মারামারির যে ঘটনা ঘটে তার জন্যও জহুরকে দোষারোপ করেছিল স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
বোয়ালখালী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি হাজী আব্দুল মান্নান রানা পূর্বদেশকে বলেন, ‘উপজেলা যুবলীগের কমিটি থাকতে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি দিয়ে ইফতার মাহফিল করানো হয়েছে। চরণদ্বীপে আত্মীয়ের বাড়ি থাকায় আমাদের কমিটি দিতে বাধ্য করেছে। যা নিয়ে আমরাও সমালোচিত হয়েছি। চরখিজিরপুরেও সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তার কারণে মারামারি হয়েছে। পৌরসভা যুবলীগকে উপজেলার সাথে সমন্বয় করতে দেয় না জেলা সাধারণ সম্পাদক জহুর। যেসব ইউনিয়ন তার বিরুদ্ধে যাবে তাদের কমিটি বাতিল করবে। উপজেলা যুবলীগের রাজনীতি জহুর তার কব্জায় রাখতে চায়। অথচ আমি জহুরের আগেই যুবলীগের রাজনীতি করছি। আমি যখন যুবলীগ করছি তখন জহুর যুবলীগের বিরোধীতা করছে। কিন্তু ভাগ্যক্রমে সেই আজকে যুবলীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় সবকিছু মেনে চলতাম। কিন্তু তিনি গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজ করছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সোহাগ ভাই ও জেলা সভাপতি দিদার ভাইকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি। দ্রুত লিখিতভাবে কেন্দ্র ও জেলাকে অবহিত করবো।’
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিনের পুরানো কমিটি দিয়ে চলছে উপজেলা যুবলীগ। আব্দুল মান্নান রানাকে সভাপতি ও ওসমান গণিকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১৩ সালে বোয়ালখালী যুবলীগের কমিটি গঠন করেছিল তৎকালীন জেলা যুবলীগ। পরবর্তীতে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিরোধীতা করায় ওসমানকে সরিয়ে সায়েম কবীরকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এ কমিটি দিয়েই বোয়ালখালী যুবলীগের রাজনীতি চলছে। বর্তমানে এ কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ।