জলাশয়গুলোকে আগের অবস্থায় ফেরানো হবে

28

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকার মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের আমিষের চাহিদা পূরণে দেশের জলাশয়গুলোকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে (কেআইবি) জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৯-এর উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।
‘মাছ চাষে গড়ব দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ শীর্ষক স্লোগান নিয়ে প্রতিবারের মতো এবারেও দিবসটি পালিত হচ্ছে।
পরে প্রধানমন্ত্রী কেআইবি প্রাঙ্গণে সপ্তাহব্যাপী জাতীয় ‘মৎস্য মেলা’র উদ্বোধন করেন। এই মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে দেশের সব জেলায়ও মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
প্রশানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা নদীগুলির ড্রেজিং কাজ শুরু করেছি। ড্রেজিং করে পানি প্রবাহ ও পানির ধারণক্ষমতা যেন বৃদ্ধি পায় সেদিকেও আমরা কাজ শুরু করেছি। এসময় ২১০০ সাল পযন্ত নেয়া ডেল্টা পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী; যে পরিকল্পনার প্রধান উদ্দেশ্য নদী খনন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করা। যত বেশি পানি প্রবাহ বাড়বে আমাদের মাছের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে। মানুষের চাহিদা পূরণ হবে, বলেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী জানান, গত ১০ বছরে মাছের উৎপাদন ৫৮.৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৪২ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। তার সরকারের লক্ষ্য মাছের উৎপাদন ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে নিয়ে যাওয়া। খবর বিডিনিউজের
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে মৎস্য আহরণে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয় এবং মৎস্য চাষে পঞ্চম। ইলিশ আহরণে বিশ্বে প্রথম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলকে আমি অনুরোধ করব, বিশেষ করে গ্রামে-গঞ্জে বহু জলা-ডোবা পড়ে থাকে। কোনো একটা জায়গা যেন পড়ে না থাকে। এ লক্ষ্যেই তার সরকারের সময় ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
মাছের উৎপাদন বাড়িয়ে স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানির জন্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা প্রক্রিয়াকরণের ওপর জোর দিয়েছি। মানুষকে উৎসাহিত করছি। এর ফলে দেশের ভেতরেও যেমন চাহিদা বাড়বে আবার বিদেশে রপ্তানিও বাড়বে। তিনি বলেন, আমরা যে মাছ বিদেশে রপ্তানি করি, এই রপ্তানির ক্ষেত্রে মানটা বজায় রাখা একান্তভাবে দরকার। কারণ আমাদের দেশে অতীতে কিছু দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছিল। যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর পেয়েছিলাম চিংড়ি রপ্তানিই বন্ধ হয়েছিল। আমরা অনেক দেনদরবার করে সেটা আবার চালু করেছি। বর্তমানে মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের আন্তর্জাতিক মান নিরূপণে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় মাননিয়ন্ত্রণ ল্যাবরেটরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, গত ১০ বছরের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নতির কারণে দেশে দারিদ্র্যের হার ৪০ থেকে ২১ শতাংশে নেমে আসায় মানুষের মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতার পাশাপাশি ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। আগে একজন দিনমজুর সারাদিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে টাকা আয় করত, তা দিয়ে হয়ত তার চাল কিনতেই ফুরিয়ে যেত। আজকে কিন্তু সে অবস্থা নেই। আজকে সে খাদ্য কেনার সঙ্গে সঙ্গে কিছু মাছও কিনতে পারে। অর্থাৎ আমিষও গ্রহণ করতে পারে। মানুষের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার দিকে লক্ষ্য রেখে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
মৎস্য হ্যাচারি আইন ও বিধিমালা, মৎস্য খাদ্য ও পশুখাদ্য আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন এবং বিভন্ন জায়গায় মাছের অভয়াশ্রম সৃষ্টি করার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। আমরা ইতোমধ্যে নীতি গ্রহণ করেছি, জাল যার জলা তার। সেই নীতিতেই জলমহালগুলি সত্যিকার জেলেদের হাতে যেন খাকে সেই পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি।
ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে প্রায় এক লাখ ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আমাদের বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। এখন এই সমুদ্র সম্পদটা অর্থনৈতিক কাজে লাগাতে হবে। এখানে ৪৩০ প্রকার মৎস সম্পদ রয়েছে। কাজেই সেগুলিকে আহরণ করে আমরা দেশকে আরও সমৃদ্ধশালী করতে পারব।
সমুদ্রসম্পদ আহরণে ব্লু ইকোনমি নামে নীতিমালা করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সমুদ্রের সম্পাদগুলি আহোরণ করা এবং তার মধ্যে মৎস একটা, সেগুলো আমরা আমাদের অর্থনীতিতে কিভাবে কাজে লাগাতে পারি সেইদিকে আমরা ইতোমধ্যে দৃষ্টি দিয়েছি।
ইতোমধ্যে জরিপ জাহাজ ‘আর ভি মীনসন্ধানী’ কেনা হয়েছে। গভীর সমুদ্রে টুনাজাতীয় মাছ আহরণে ৯টি লং লাইনার ও ৭টি পার্স সেইনার প্রকৃতির ফিশিং লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমুদ্রের খনিজ ও অন্যান্য সম্পদ নিয়ে গবেষণার জন্য একটি জাহাজ ভাড়া করার কথাও চিন্তা করা হচ্ছে। উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে এক হাজার ৮৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের জরিপ ও উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, সামুদ্রিক মৎস্যচাষ, উপকূলীয় অঞ্চলে চিংড়িচাষ স¤প্রসারণ করা হবে। অপ্রচলিত মৎস্যপণ্য যেমন কাঁকড়া, ওয়েস্টার, কোরাল মাছের চাষ, সী-উইড ইত্যাদির চাষ প্রযুক্তিও স¤প্রসারণ করা হবে।
ইলিশ ধরা বন্ধের মৌসুমে জেলে যাতে বসে না থেকে নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ করতে পারে সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার আহŸান জানান প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে মৎস খাতে অবদানের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে পুরস্কার দেন শেখ হাসিনা। পরে তিনি কেআইবি প্রাঙ্গণে মৎস মেলা ঘুরে দেখেন।
এরপর গণভবনের লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।