জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের কাজ বর্ষার আগেই শেষ করা জরুরি

47

 

চট্টগ্রাম মহানগরীর দুঃখ চাক্তাই খাল এবং নগরীর নিম্নাঞ্চলের জলাবদ্ধতা। দীর্ঘদিন হতে মহানগরীর মানুষ বর্ষা মৌসুমে জলজটের দুর্ভোগে ভোগছে। এ নিয়ে ইতিপূর্বে মোটা অংকের আর্থিক অপচয় হলেও শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরীকে জলাবদ্ধতা হতে মুক্ত করা সম্ভব হয়নি। চকবাজার, আগ্রাবাদ, প্রবর্তক মোড, ষোলশহর দুই নং গেইট, বাদুরতলা, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ইত্যাদি এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে মহানগরীর মানুষ অতিষ্ঠ। তাইতো পত্রপত্রিকা, ছাড়ায়, কবিতায় উঠে আসে মানুষের দুর্ভোগের ছবি। জনৈক ছড়াকারের ভাষায়-
জ্যৈষ্ঠমাসে বৃষ্টি পড়ে ফলবে ভালো ধান
আউস ফসলে গোলা ভরে গাইবে চাষি গান
উর্দুগলি ডুবলো জলে রাস্তা হলো নদী
চকবাজারে সোনা নৌকা পেত যদি
দাঁড় বেয়ে সে খেলতো জলায়
ভাটিয়ালী বুনতো গলায়…
আসলে বৃষ্টি হলেই চট্টগ্রাম শহরের কিছু কিছু স্থানে জলজট সৃষ্টি হয়। এর জন্য দায়ি অপরিকল্পিত নগরায়ন, স্বার্থান্বেষি মহলের খাল, নালা-নর্দমা ভরাট এবং পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থার অভাব। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন দীর্ঘদিন চাক্তাই খাল খনন করে চকবাজার ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের চেষ্টা করেছে। কিন্তু কার্যত কর্পোরেশন এবং সরকারি টাকার অপচয় ছাড়া কিছুর কিছুই হয়নি সংশ্লিষ্ট এলাকার জলাবদ্ধতার। ক্রমে নগরীর আরো বহু এলাকা বৃষ্টি হলেই প্লাবিত হতে দেখা গেছে। একপর্যায়ে বৃষ্টির দিনে চট্টগ্রাম মহানগরীর মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বিশেষ অগ্রাধিকার প্রকল্প হাতে নেন। জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পান সিডিএ। সিডিএ’র এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের মাধ্যমে। নানা জটিলতায় নির্দিষ্ট সময়ে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। পরে প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় বরাদ্ধ দু’টিই বাড়ানো হয়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। এদিকে বসন্ত-গ্রীষ্মের পরে বর্ষা আসি আসি করছে। কার্যত দেখা গেছে চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতার জন্য সাধারণ জনগণ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকেই দায়ি করতে দেখা যায়। যার কারণে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের ভোগান্তি নিয়ে সিটি মেয়র ক্ষোভ ঝারতে দেখা যায় দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে। বর্ষা মৌসুমের পূর্বে যদি উল্লেখিত মেগা প্রকল্প সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন না হয়, তা হলে চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। কেননা প্রকল্পের আওতায় বহু খালের দু’পাশে গেইট ওয়াল নির্মাণের লক্ষে খালের মাঝখানটি ভরাট অবস্থায় বিরাজমান। যার কারণে বর্ষা শুরু হলে খাল সমূহে পানির স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
প্রসঙ্গত কারণে নগরীর সাধারণ মানুষ আতঙ্কের মধ্যে আছে। যার দায়ভার সিটি কর্পোরেশন নিতে প্রস্তুত নয়। সিডিএর প্রকল্পের দায় কেন নেবে সিটি কর্পোরেশন ? তবু ‘নগর পুড়িলে দেবালয় কি এড়ায়’ এমন চিন্তা থেকে চট্টগ্রামে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মহোদয় আগেভাগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মেগা প্রকল্প যদি বর্ষা মৌসুমের পূর্বে শেষ করা না যায় তা হলে সিডিএর উচিৎ হবে চট্টগ্রাম মহানগরীর খালসমূহকে পানি চলাচলের উপযোগী করে দেয়া। প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন হওয়া যেমন জরুরি, তেমনি প্রকল্প বাস্তবায়ন কল্পে জনগণের দুর্ভোগ বাড়ানোর যৌক্তিকতা আসার। তাই চট্টগ্রাম মহানগরীর সাধারণ মানুষ আগামী বর্ষা মৌসুমের পূর্বে মেগা প্রকল্পের নির্মাণ কাজ সমাপ্তের দাবি রাখছে। সিডিএসহ সংশ্লিষ্টদের যত দ্রæত সম্ভব চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ শেষ করে চট্টগ্রাম মহানগরীকে আসন্ন সংকটাপন্ন অবস্থা হতে রেহাই দেয়া জরুরি। আমরা আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবেন।