জলাবদ্ধতা নিরসনে চসিক-চউকের সমন্বিত ও কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি

15

 

আর মাত্র কয়দিন পরেই বর্ষা মৌসুমের আগমন ঘটবে। জ্যৈষ্ঠের তীব্র দাবদাহের মধ্যে যখন একটু বৃষ্টি মানুষের মনে স্বস্তির ছোঁয়া বয়ে দেয়, পরক্ষণে দুঃশ্চিন্তার যাতনায় ভার হয়ে উঠে মন। কারণ এ সামান্য বৃষ্টিতেই জলজটে আটকে যায় চট্টগ্রাম নগরবাসী। গত ছয়দিন আগে মাত্র ঘন্টাখানিকের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় নাকাল হয়েছে চট্টগ্রাম নগরবাসী। সামান্য বৃষ্টিতে নগরীর ২নং গেইট, মুরাদপুর, বাদুরতলা, আগ্রাবাদ সিডিএ এলাকাসহ নিম্নাঞ্চল যেভাবে প্লাবিত হয়েছে, তাতে আশঙ্কার ব্যাপ্তি ছড়ানো স্বাভাবিক যে, এবারের বর্ষা চট্টগ্রাম নগরবাসীর জন্য আগের সেই অভিশাপই বয়ে আনবে। সরকার বিগত পাঁচবছরের অধিক সময় ধরে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক), চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক), পানি উন্নয়ন বোর্ড (ওয়াপদা) এবং ওয়াসাকে দিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলেও এর সুফল নগরবাসীর ভাগ্যে কখন জুটবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। বিশেষ করে জলাবদ্ধতা নিরসনের সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নযন কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে চউকের কাজ নিয়ে বিশেষজ্ঞমহলে নানা অসন্তোষ পরিলক্ষিত হচ্ছে, তদুপরি সেবাদানকারী সংস্থাগুলো কেউ জলাবদ্ধতার দায় নিচ্ছে না। প্রকল্প বাস্তবায়নে চউক এর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ নগরীর ৩৬ টি খালে বাঁধ নির্মাণ করেছে। সম্প্রতি প্রকল্পের এক তৃতীয়াংশ কাজ প্রায় শেষ হলেও কর্তৃপক্ষ বাঁধগুলো এখনও সরাচ্ছেনা। চসিক বার বার এসব বাঁধ সরানোর আহবান, আিিল্টমেটাম দিলেও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তা আমলে নিচ্ছেনা। ফলে এবারও চট্টগ্রাম নগরী জলাবদ্ধতামুক্ত হবে না, তা নিশ্চিত। গত শনিবার সকালে মাত্র ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের কারণে জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী, স্কুল-কলেজ ও অফিসগামী মানুষ সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন। নগরীর ছোট-বড় নালাগুলোর আবর্জনা অপসারণ না করায় সামান্য বৃষ্টিতে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ নগরবাসীর। নালা পরিষ্কার না করার জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে (চসিক) দায়ী করছেন তারা। তবে চসিক এ দায় নিতে নারাজ, তারা এ অবস্থার জন্য চউককে দায়ী করে আসছে। সামনে বর্ষার ভরা মৌসুম। তখন টানা বৃষ্টিতে কী ধরনের দুর্ভোগে পড়তে হবে- তা আতঙ্ক বাড়িয়ে দিচ্ছে বৈকি। আমরা জানি, ২০১৭ সালে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ বছর মেয়াদে চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ শুরু করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। ২০২০ সালের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ বাকি ছিল অর্ধেক। পরে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয় প্রকল্পের মেয়াদ। সঙ্গে বাড়ানো হয় ব্যয়। এ অবস্থায় মে মাসে এসেও জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৬৭ শতাংশ। বাকি কাজও যে শিগগির শেষ হবে তার কোনো আলামত নেই। অভিযোগ উঠেছে, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পটি একটি অসম্পূর্ণ প্রকল্প। বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা ছাড়াই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। কারো মতামতের তোয়াক্কা না করে নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী প্রকল্পগুলো নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিলেও তাতে কর্ণপাত করেনি। তাড়াহুড়ো করে করা সম্ভাব্যতা যাচাই, নিরীক্ষণ ও দুর্বল কর্মপরিকল্পনাই এর জন্য দায়ী। প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৩৬টি খাল খনন ও সংস্কার করে সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করার বিধান রয়েছে। কিন্তু এই খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতে কী ধরনের জনবল কাঠামো লাগবে, কী ধরনের ইক্যুইপমেন্ট লাগবে- প্রকল্পে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই। প্রকল্পের আওতায় ৩৬টি খালের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১০টির কাজ শেষ হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পানি নিষ্কাশনের কোনো জায়গা না থাকার কারণেই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। চট্টগ্রামে যে খালগুলো ছিল সেগুলো ভরাট ও দখল হয়ে গেছে। তাহলে এ পানি যাবে কোথায়? ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রাকৃতিকভাবে এ সমস্যা কমার সম্ভাবনা নেই। তবে কৃত্রিমভাবে যে ড্রেনগুলো আছে সেগুলো সঠিকভাবে মেরামত করতে পারলে কিছুটা স্বস্তি পাবেন নগরবাসী-এমন মত দিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদগণ। তবে ড্রেনেজ সিস্টেম মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ একক কর্তৃত্বে আনতে বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ গুরুত্বসহ বিবেচনা করা প্রয়োজন। চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখি কম হয়নি। সরকারের নানামুখী উদ্যোগ, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পরামর্শ কোনোটাই যেন কাজে আসছে না। আমরা মনে করি, জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রামের নদী ও খালগুলোর ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। নগরীর নদী, খাল ও নালা-নর্দমাগুলো উদ্ধারে কর্তৃপক্ষকে আরো সোচ্চার হতে হবে। বাস্তবায়াধীন প্রকল্পে জলাবদ্ধতা নিরসনে সুপরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণসহ প্রকল্প সুরক্ষায়ও আর্থিক ও মানসিক প্রস্তুতি রাখা বাঞ্চনীয়।