জলাবদ্ধতার নাখালে নগরবাসী নিরসনে সমন্বিত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

12

এক সপ্তাহ আগে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) সাংবাদিক সন্মেলন করে চট্টগ্রামবাসীকে আশ্বাস্ত করেছিল জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের ৭৬ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। সুতরাং এবার জলাবদ্ধতা অন্যান্যবারের চেয়ে কম হবে। কিন্তু সপ্তাহ পার না হতেই নগরবাসীকে জলাবদ্ধতার নাখালে পড়তে হয়েছে। গত রবিবার মোখা নামক ঘর্ণিঝড়ের ধকল কিভাবে সামলাবে চট্টগ্রাম এ নিয়ে নানা কথা ও প্রস্তুতি থকলেও সর্বশেষ ঘর্ণিঝড়ের আচঁড় চট্টগ্রামে লাগেনি। তবে সোমবার ও মঙ্গলবার রাতে কালবৈশাখী ঝড়সহ সামান্য সময়ের বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে নগরীর নি¤œাঞ্চল। মুরাদপুর, বাদুরতলা, বহদ্দারহাট, চকবাজার, ডিসি রোড, বাকলিয়া, আগ্রাবাদেও সিডিএসহ বিভিন্ন এলাকায় সেই আগের চেহারা ফুটে উঠেছে। সবচেয়ে বড় কথা একপসলা বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতায় নাকাল হ চট্টগ্রাম নগরবাসী অথচ সেবাদানকারী সংস্থা কেউ এর দায় নিচ্ছে না। সোমবার রাতে মাত্র ৩৮ মিলিমিটার আর মঙ্গলবার রাতে ২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের কারণে জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষ সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন। নগরীর ছোট-বড় নালাগুলোর আবর্জনা অপসারণ না করা এবং চট্টগ্রাম উন্নযন কর্তৃপক্ষের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পকাজের ধীরগতির কারণেই সামান্য বৃষ্টিতে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ নগরবাসীর। নালা পরিষ্কার না করার জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে (চসিক) দায়ী করছেন তারা। তবে চসিক এ দায় নিতে নারাজ। সামনে বর্ষার ভরা মৌসুম। তখন টানা বৃষ্টিতে কী ধরনের দুর্ভোগে পড়তে হবে- তা আতঙ্ক বাড়িয়ে দিচ্ছে বৈকি। সূত্র জনায়, ২০১৭ সালে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ বছর মেয়াদে চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ শুরু করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। ২০২০ সালের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ বাকি ছিল অর্ধেক। পরে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয় প্রকল্পের মেয়াদ। সঙ্গে বাড়ানো হয় ব্যয়। এ অবস্থায় মে মাসে এসেও জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৭৬ শতাংশ। সিডিএ যদিও বলেছেন প্রকল্পের অধীনে বাকি খালগুলোর সংস্কার জুন মাসে শেষ হবে, কিন্তু অবস্থা দেখে শিগগির প্রকল্পের কাজ শেষ হবে তার কোনো আলামত নেই। অভিযোগ উঠেছে, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পটি একটি অসম্পূর্ণ প্রকল্প। বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা ছাড়াই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। কারো মতামতের তোয়াক্কা না করে নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী প্রকল্পগুলো নিয়েছে সিডিএ। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিলেও তাতে কর্ণপাত করেনি। তাড়াহুড়ো করে করা সম্ভাব্যতা যাচাই, নিরীক্ষণ ও দুর্বল কর্মপরিকল্পনাই এর জন্য দায়ী। প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৩৬টি খাল খনন ও সংস্কার করে সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করার বিধান রয়েছে। কিন্তু এই খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতে কী ধরনের জনবল কাঠামো লাগবে, কী ধরনের ইক্যুইপমেন্ট লাগবে- প্রকল্পে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই। প্রকল্পের আওতায় ৩৬টি খালের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৫টির কাজ শেষ হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পানি নিষ্কাশনের কোনো জায়গা না থাকার কারণেই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। চট্টগ্রামে যে খালগুলো ছিল সেগুলো ভরাট ও দখল হয়ে গেছে। তাহলে এ পানি যাবে কোথায়? ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রাকৃতিকভাবে এ সমস্যা কমার সম্ভাবনা নেই। তবে কৃত্রিমভাবে যে ড্রেনগুলো আছে সেগুলো সঠিকভাবে মেরামত করতে পারলে কিছুটা স্বস্তি পাবেন নগরবাসী। এই ড্রেনেজ সিস্টেম মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ একক কর্তৃত্বে আনতে বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ গুরুত্বসহ বিবেচনা করা প্রয়োজন। চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখি কম হয়নি। সরকারের নানামুখী উদ্যোগ, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পরামর্শ কোনোটাই যেন কাজে আসছে না। আমরা মনে করি, জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রামের খালগুলো ভূমিকা রাখতে সক্ষম। নগরীর খালগুলো উদ্ধারে কর্তৃপক্ষকে আরো সোচ্চার হতে হবে। চট্টগ্রামের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড খালের উচ্ছেদ কার্যক্রম সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করে খাল খনন, দুপাশে দেয়াল নির্মান নির্মাণসহ বেশ কয়েকটিতে ¯øুইচগেট নির্মাণ সম্পন্ন করেছে। খালের আশপাশে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা তিন হাজারেরও বেশি অবৈধ স্থাপনা অপসারণের দূরূহ কাজ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে প্রকল্পটি দ্রæত সম্পন্ন করছে সেনাবাহিনী। তবে এর সঙ্গে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বাকি কাজগুলো দ্রæততার সাথে সম্পন্ন করতে পারলে চট্টগ্রামবাসী বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার হাত থেকে কিছুটা রেহাই পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে এক্ষেত্রে প্রকল্পের বাইরে থাকা ২১টি খালের এবং নগরীর নালা-নর্দমাগুলো সংস্কার ও নিয়মিত পরিষ্কার করা না হলে মেগা প্রকল্পের সুফল নগরবাসী আদৌ পাবে কিনা-তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আমরা মনে করি, এজন্য নগরীর সেবাদানকারী কর্তৃপক্ষ চসিকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের কোন বিকল্প নেই।