জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে

15

চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগরী। দেশের প্রেক্ষাপটে নানা দিক হতে চট্টগ্রামের গুরুত্ব অপরিসীম। এখানে রয়েছে দেশের বৃহত্তম এবং আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর। গুরুত্বপূর্ণ বহু শিল্পকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। জনসংখ্যার দিক হতে চট্টগ্রাম মহানগরীর স্থানও ঢাকার পরেই। দেশের জেলাগুলোর মধ্যে অধিক পরিমাণ সরকারি রাজস্ব আসে চট্টগ্রাম হতে। কিন্তু যুগযুগ ধরে চট্টগ্রাম নানা দিক হতে অবহেলিত। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট বেশি চট্টগ্রামে। অথচ এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক থাকার কথা। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, চট্টগ্রামের মানুষ বিদ্যুৎ ও গ্যাস নিয়ে সময়ে, অসময়ে নানা বিড়ম্বনার শিকার হয়। বিগত এক সপ্তাহ ধরে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও অধিক হারে শীত পড়ছে। শীতের থাবায় মানুষ যখন নাকাল, এমন সময় গ্যাস সংকট সমগ্র চট্টগ্রামবাসীর কাম্য ছিল না। হঠাৎ করে চট্টগ্রামে সৃষ্টি হয় গ্যাস সংকট। বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পেরে অনেকের খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। অনেক দরিদ্র সাধারণ মানুষকে অনাহারে দিন কাটাতে হয়েছে। বাসা বাড়ির গ্যাস লাইনে গ্যাস না থাকায় গ্যাসের চুলা বন্ধের পাশাপাশি যানবাহনেও জনজীবন সংকটে পড়ে। ফিলিং স্টেশনগুলোতে গিয়ে গ্যাসচালিত গাড়িগুলো গ্যাস না পাওয়ার কারণে রাস্তায় যানবাহন সংকট সৃষ্টি হয়। দেশের একশ্রেণির অসাধু মানুষ যে কোন সংকটে সুযোগ খোঁজে বেড়ায়। তারা সুযোগ পেলেই সাধারণ মানুষের উপর জুলুমবাজি করে। গত ১৯ ও ২০ জানুয়ারি সড়কে সাধারণ যাত্রীরা সংকট ও দুর্ভোগে পড়ে যায় গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকার কারণে। ডিজেল ও অক্টেনে চালিত গাড়ি হঠাৎ করে দ্বিগুণ তিনগুণ হারে বাড়তি ভাড়া আদায় করে যাত্রী সাধারণের নিকট হতে। দেশের সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অধিকহারে লাভবান হবার একটা অপসংস্কৃতি দেশে বহু আগ হতে চালু হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা যেমন সময়ে অসময়ে বিনা কারণে দ্রব্যমূল্য নিয়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ায়, তেমনি যানবাহনের মালিক শ্রমিক পক্ষও একই ভাবে যাত্রীদের জিম্মি করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়। এই কর্মকাÐে অসাধু ব্যবসায়ী সমাজ ও যানবাহন মালিক শ্রমিকপক্ষ একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতে অপারগ। গ্যাসের কারণে গ্যাস চালিত যানবাহন স্বাভাবিকভাবে সড়কে যাত্রী পরিবহন করতে না পারলেও ডিজেল ও অক্টেন চালিত যানবাহন যাত্রীদের অপেক্ষিক সমস্যা আন্তরিকতার সাথে মোকাবিলা করতে পারতো। তাতে তাদের কোন অতিরিক্ত খরচ হতো না। গ্যাসের সংকটে ডিজেল বা অন্যান্য জ্বালানি দ্বারা পরিচালিত গাড়ির ভাড়া অতিরিক্ত দাবি মোটেও যৌক্তিক নয়। কিন্তু এদেশে বিবেক ও নৈতিকতার আকাল চলছে। মানুষ নামের অমানুষরা মানুষের উপর জুলুম করছে এবং দুর্ভোগের অগ্নিতে ঘি ঢালছে। পত্রিকার প্রতিবেদন হতে জানা যায় আমদানিকৃত এলএনজি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় নগরীর কোন চুলায় ও ফিলিং স্টেশনে গ্যাস ছিল না। যে কারণে সারাদিন (১৯/০১/২০২৪) ভোগান্তিতে পড়ে নগরবাসী। সিএনজি চালিত যানবাহন গ্যাস পায়নি। যার রেশ ২০ জানুয়ারিও ছিল। চট্টগ্রামবাসী দেশে নানা ভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তারই একটি জ্বলন্ত উদাহরণ সম্প্রতি কৃত্রিম তথা যান্ত্রিক ত্রæটির গ্যাস সংকট। আমদানিকৃত এলএনজি গ্যাসের পাইপ লাইনে ত্রæটির কারণে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ ছিল চট্টগ্রামে। এলএনজি আমদানির পূর্বেও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ ছিল। এ কথা সত্য যে, আমদানিকৃত এলএনজি সরবরাহের পর হতে সমগ্র চট্টগ্রাম আপদকালীন গ্যাস সরবরাহের ঝুঁকিতে পড়েছে। বাখরাবাদ ও অন্যান্য থেকে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহের যে ব্যবস্থা ছিল তার বৈষম্যমূলক নীতিই আজ চট্টগ্রামের মানুষের দুর্ভোগের কারণ। পূর্বে চট্টগ্রামের গ্যাস সরবরাহের যে ব্যবস্থা ছিল তাতে চট্টগ্রাম হতে নেয়ার ব্যবস্থা রেখে, চট্টগ্রামের আনার ব্যবস্থা বন্ধ করাই এর জন্য দায়ী। গ্যাস লাইনে সরবরাহ সংকট হতেই পারে। তবে সংকটের সময় বিকল্প ব্যবস্থা থাকা জরুরি। বিগত ১৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামে গ্যাস বন্ধ থাকায় চট্টগ্রামের বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধু রাখতে হয়। একদিনে শত শত হাজার কোটি টাকা ক্ষতি গুণতে হয়েছে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে। আপদকালীন সংকটে গ্যাস ও বিদ্যুৎ পাবার বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোরদাবি জানাচ্ছে চট্টগ্রামের শিল্প মালিকসহ সর্বস্তরের মানুষ।