জমায়েত ঘটিয়ে ইসির প্রশিক্ষণ!

27

করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সচেতনতার অংশ হিসেবে মেয়র প্রার্থীদের সাথে হ্যান্ডশেক করেননি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা। আরেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার প্রার্থীদের সাথে থাকা পূর্ব নির্ধারিত সভার কর্মসূচি বাতিল করেছেন। এর আগে করোনা সচেতনতা সৃষ্টিতে মাঠে নেমেই লিফলেট বিতরণ করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ চসিক নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা নিজেরাই যখন আতঙ্কে; ঠিক এই সময়ে ঝুঁকি নিয়েই প্রথমদিনের প্রশিক্ষণ নিতে বাধ্য হয়েছেন ১২ ওয়ার্ডের প্রায় পাঁচ হাজার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জমায়েত ঘটিয়ে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করেছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ছয়দিনে মোট ১৫ হাজার ৩৯৩ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ নেবেন বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘ইভিএমে ভোটগ্রহণ পরিচালনার জন্য দক্ষ যে জনবল দরকার তা প্রশিক্ষণ ছাড়া সম্ভব নয়। নির্বাচন স্থগিত না হওয়ায় পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে। কারণ নির্বাচনের সবধরনের প্রস্তুতি নিয়ে না রাখলে আমাদেরকে ভোগান্তিতে পড়তে হবে। কোনো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্রতি আমাদের আন্তরিকতার কমতি নেই। আমরা নির্বাচনী কাজগুলো এগিয়ে রাখতেই এ আয়োজন করেছি’।
রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্র জানায়, অতিরিক্ত ৫ শতাংশসহ মোট ১৬ হাজার ১৬৩ জন ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তার প্রশিক্ষণ হবে। তিন ধাপে এই প্রশিক্ষণ চলবে ২৫ মার্চ পর্যন্ত। দুইদিন করে প্রশিক্ষণের প্রতি ধাপে সাড়ে ৫ হাজার করে কর্মকর্তা অংশ নেবেন। চারটি ভোটকেন্দ্রে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- কুলগাঁও সিটি কর্পোরেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিডিএ পাবলিক স্কুল, খাজা আজমেরি উচ্চ বিদ্যালয় এবং পাহাড়তলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ। গতকাল প্রথমদিনে দক্ষিণ পাহাড়তলী, জালালাবাদ, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও, মোহরা, পূর্ব ষোলশহর, উত্তর পাহাড়তলী, উত্তর কাট্টলী, পাহাড়তলী, পাঠানটুলি, পূর্ব মাদারবাড়ি ও গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডের ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
গতকাল থেকে শুরু হওয়া প্রশিক্ষণ চলবে ছয়দিন। প্রতিটি কেন্দ্রে এক হাজারের বেশি ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে দেখা যায়, প্রায় ২৫টি শ্রেণিকক্ষে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ভোটার। প্রতিটি কক্ষে ৩০ থেকে ৪০ জনের সমাগম হয়েছে। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে অনেক প্রশিক্ষণার্থী মাস্ক পরেই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। কেউ কেউ স্যানিটাইজার নিয়েই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যান। মূলত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার ও ভোটগ্রহণ পদ্ধতি হাতে-কলমে শেখাচ্ছেন প্রশিক্ষকরা। প্রতিটি ইভিএম ঘিরে ১০-১৫ জনের জটলা। অধিকাংশ ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তার ছিল না প্রতিরোধমূলক সরঞ্জাম।
পাহাড়তলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ নেয়া একজন বলেন, নির্বাচন কমিশন ও স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা নিয়ে কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন। যে কারণে আমরা ধরে নিয়েছি প্রশিক্ষণ হবে না। সকালে প্রশিক্ষণ হচ্ছে শুনে দ্রæত কেন্দ্রে এসেছি। প্রশিক্ষণে সবাই করোনা নিয়ে আতঙ্কে। এমনকি নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারাও করোনা নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে বলেছেন নির্বাচন স্থগিত হতে পারে। তবুও যতক্ষণ ঘোষণা হবে না ততক্ষণ আমাদের প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে।
সাইদুর রহমান নামে এক প্রশিক্ষণার্থী বলেন, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা নিজেরাই সরকারি আইন অমান্য করেছে। আমরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। আর যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তারা খুব সচেতন দেখলাম। জটলা কমানোর নির্দেশনার মধ্যে এভাবে প্রশিক্ষণ আয়োজন করা উচিত হয়নি। কালকে (আজ ২১ মার্চ) নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত দেয়ার কথা আছে। এ দিনের পরই প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে পারতো।
সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রাম জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মুনির হোসাইন খান বলেন, ‘নির্বাচন স্থগিতের বিষয়ে কমিশন থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত ভোটগ্রহণের সবধরনের প্রস্তুতি আমরা চালিয়ে যাবো’।
প্রসঙ্গত, আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সাতজন মেয়র প্রার্থী, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৬৩ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৫৬ জন প্রার্থী মিলিয়ে ২২৬ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। নির্বাচনে মোট ভোটার ১৯ লক্ষ ৫১ হাজার ৫২ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লক্ষ ৯৮ হাজার ৭২৩ জন ও নারী ভোটার ৯ লক্ষ ৫২ হাজার ৩২৯ জন। এবারের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র আছে ৭৩৫টি। ৪ হাজার ৮৮৬টি কক্ষে ভোটগ্রহণে দায়িত্ব পালন করবেন ৭৩৫ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৪ হাজার ৮৮৬ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও ৯ হাজার ৭৭২ পোলিং কর্মকর্তা। এ সংখ্যার পাঁচ শতাংশ বাড়তি হারে মোট ১৬ হাজার ১৬৩ ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।