জন্মি যেন তোমার নামে…

26

এড. সুজন কান্তি দে

শীতের শেষে বসন্তের প্রারম্ভে প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও মহাআড়ম্বরে উদ্যাপিত হচ্ছে ঋষিকুল শিরোমণি পুণ্যাত্মা শ্রীমৎ স্বামী নারায়ণ পুরী মহারাজ এর মহাপ্রয়াণের ৮ম বর্ষ স্মরণ উৎসব। এমন মহাঋষির মহাপ্রয়াণ দিবসে তাঁকে নিয়ে কিছু লিখতে গিয়ে বারংবার মনে পড়ছে শ্রী অরবিন্দের উক্তি- “ঘড়নড়ফু পধহ ৎিরঃব ধনড়ঁঃ সু ষরভব নবপধঁংব রঃ রং হড়ঃ ড়হ ঃযব ংঁৎভধপব, ভড়ৎ সবহ ঃড় ংবব.’’ অর্থাৎ কেউ তাঁর জীবনী লিখতে পারে না। কারণ স্থ‚ল অস্তিত্বের মাঝে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। যুগে যুগে এমন ঋষির আবির্ভাব ঘটুক কোন অবতার হিসেবে নয়, মানুষরূপে মানুষের বেশে কলির জীব কল্যাণে। যেমনটা লালন সাঁইজী
বলেছিলেন-‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি।’
মানবতা আর মানবপ্রেমের জন্য এই মহাপুরুষ কতকিছুই না করলেন তা বলে বা লিখে কখনও শেষ করা যাবে না। মানবপ্রেমের আলোর দিশারী হয়ে ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের৭ জুন নন্দনকানন ব্রহ্মনির্বাণ তীর্থ শ্রীশ্রী তুলসীধামের ১৫তম মোহন্ত মহারাজ হিসেবে ঋষি অদ্বৈত-অচ্যুত ভাবধারার ধ্বজা হাতে অভিষিক্ত হয়েছিলেন শুভ্র বসনধারী এই প্রেমময় মহাপুরুষ। জীবপ্রেম আর মানবকল্যাণে শ্রীমৎ স্বামী নারায়ণ পুরী মহারাজ ছিলেন মূর্ত প্রতীক। শাস্ত্রে বর্ণিত আছে, যেজন নিজেকে মানবসেবায় নিয়োজিত করতে পারেন-তিনি ঈশ^রের উপাসনার যোগ্য। তাই মহারাজ ঈশ^র ব্রতের পাশাপাশি সৃষ্টি করেছেন সম্পূর্ণ মানবকল্যাণমুখী সংগঠন ‘অদ্বৈত-অচ্যুত মিশন-বাংলাদেশ’। যার সেবার কার্যক্রম বাংলাদেশের পাশাপাশি ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশে^। তাঁর অনবদ্য আরো এক সৃষ্টি ‘অদ্বৈত-অচ্যুত ডক্টরস্্ ফোরাম’ যেখানে একঝাঁক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আর্তমানবতার সেবায় নিজেদের বিলিয়ে দিচ্ছেন। মহারাজ গুরু দায়িত্বভার আর গুরুকর্ম প্রচারে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন মহাপ্রয়াণের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত।
শ্রীমৎ স্বামী নারায়ণ পুরী মহারাজনিত্যকর্ম সম্পাদন ও ঈশ^রের নাম বিলিয়ে লোহাগাড়ার মঙ্গলনগর গ্রাম থেকে ফিরে শ্রীশ্রী তুলসীধামে মদনমোহনজীর কাছেনিজেকে সমর্পিত করে পদ্মাসনে উপবিষ্ট হয়ে২০১৫খ্রিস্টাব্দের ৯ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় ব্রহ্মলীন হয়েছিলেন। সেই অন্তিম মুহূর্তের আমিও একজন নীরব প্রতক্ষ্যদর্শী। গুরু পরম্পরা শ্রীমৎ স্বামী অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ ও শ্রীমৎ স্বামী অচ্যুতানন্দ পুরী মহারাজের নির্দেশিত পথেই হলো তাঁর যাত্রা। তিনি তো অন্তর্যামী, সব জানতেন। তাঁর নাম যেমন নারায়ণ, কাজেও তিনি ছিলেন নারায়ণ এর স্বরূপ। গুরু পরম্পরার ধ্বজা কাঁধে নিয়ে জীবন তরীর ৩২টি বছর কাটিয়ে দিয়েছেন গুরুকর্মে। বারেবারে মনে পড়ে গানের পংক্তিটুকু-‘গুরু আমার এই মিনতী তব রাঙ্গা পায়, আবার তুমি এসো ফিরে আমার এই ধরায়।’
বর্তমান সময়ে এমন মহাপুরুষের সান্নিধ্য খুবই বিরল। তাঁকে একবার দর্শনে প্রেমে মজেনি এমন মানুষ খুব কমই আছে। আজ তুলসীধামের বর্তমান মোহন্ত শ্রীমৎ দেবদীপ পুরী মহারাজের পৌরহিত্যে তিনদিনব্যাপী এই মহাঋষির স্মরণ উৎসব তথা প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের সর্বাঙ্গিন সাফল্য কামনা করি। এই দিনে তাঁর স্মরণে নিবেদন-
আমার জীবন নদীর ওপারে এসে
দাঁড়াইয়ো, আসবো তরী বাহিয়া,
তুমি চরণখানি বাড়াইয়ো হে।