জনসাধারণের আইনি অধিকার নিশ্চিতে কাজ করছে সরকার

3

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘বিনা খরচে নিন আইনি সহায়তা, শেখ হাসিনার সরকার দিচ্ছে এই নিশ্চয়তা’ এই প্রতিপাদ্যকে উপজীব্য করে গতকাল চট্টগ্রামসহ সারাদেশে উদযাপিত হয়েছে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস। সকালে বেলুন উড়িয়ে দিবসের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আজিজ আহমদ ভূঞা। পরে আদালত চত্বর থেকে এক স্বাগত র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি চট্টগ্রাম আদালত ভবন, লালদিঘি হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। র‌্যালি শেষে জেলা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে জেলা ও দায়রা জজ এবং জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান আজিজ আহমদ ভূঞা’র সভাপতিত্বে দিবসের তাৎপর্য শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ) রাজিয়া সুলতানার সঞ্চালনায় সভায় সভাপতির বক্তব্যে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আজিজ আহমদ ভূঞা বলেন, সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রমের সাফল্য নির্ভর করছে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ও জনমত সৃষ্টির উপর। ২০২১ সালে চট্টগ্রামে ৫৬৬টি প্রি-কেইস এডিআর এর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ওই সময়ে ১৩৯টি সফল মিমাংসাসহ ৫৩৮টি (বিগত বছরের জের সহকারে) এডিআর নিষ্পত্তি করা হয়েছে। প্রি-কেইস ও পোস্ট-কেইস বিরোধ মিমাংসার মাধ্যমে ৮৪ লাখ ৪১ হাজার টাকা আদায় করে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও এডিআর বিধিমালার আওতায় ওই সময়ে ৪০ জন নারী ও ৩৫ জন পুরুষসহ ৭৫ জনকে আইনগত পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। ২০২১ সালে ১ হাজার ২৮৯ জন অসহায় বিচার প্রার্থীর আবেদনের প্রেক্ষিতে আইনি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ওই সময়ে লিগ্যাল এইডের সহায়তায় পরিচালতি ৫২১টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। যা দেশের বিচার অঙ্গনের জন্য নজীরবিহীন ব্যাপার। এছাড়াও ওই বিরোধ মিমাংসার মাধ্যমে প্রায় একশ অসহায় দরিদ্র নির্যাতিতা নারীকে স্বামীর সংসারে ফিরিয়ে দিতে পেরেছে। যেগুলোর মধ্যে যৌতুক দাবি, ভরণপোষণ এবং পারিবারিক সহিংসতা সংক্রান্ত বিরোধগুলো উল্লেখযোগ্য। আর্থিকভাবে অসচ্ছল যার বার্ষিক গড় আয় ১ লাখ টাকার উর্ধ্বে নয়; বীর মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার উর্ধ্বে নয় তাদের মামলায় আইনি সহায়তা প্রদান করা হয়। সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ন্যাশনাল হেলপ লাইন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। হেলপ লাইন নম্বর- ১৬৪৩০। এর ফলে সারা দেশের মানুষ যেকোনো প্রান্ত হতে টোল ফ্রি কল করে আইনি পরামর্শ গ্রহণ করতে পারছেন। একইসাথে কোথায় গেলে আইনি সেবা পাবেন এ বিষয়েও নির্ভরযোগ্য তথ্য পাচ্ছেন। লিগ্যাল এইড অফিস চট্টগ্রামের হেল্প লাইন নম্বর-০১৭০১২৬৭৩৮০-তে ফোন করে আইনি সহায়তা প্রার্থীরা লিগ্যাল এইড অফিসের সহায়তা নিচ্ছেন। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইনি সহায়তা দিবস উদযাপন কমিটির আহŸায়ক ও চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম কামরুন নাহার রুমী। সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রমের বিশেষ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ) রাজিয়া সুলতানা। সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ চট্টগ্রামের বিচারক (সিনিয়র জেলা জজ) ফউজুল আজিম, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রবিউল আলম, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুমিনুর রহমান, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবু মোহাম্মদ হাসেম, সাধারণ সম্পাদক এইচএম জিয়াউদ্দিন, জেলা পিপি এ কে এম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী জেসমিন সুলতানা পারু। উপস্থিত লিগ্যাল এইড উপকারভোগীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রুপা আকতার আঁখি। সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাবৃন্দ, জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্যবৃন্দ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন প্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ, জেলা বারের আইনজীবী, ডিল্যাক প্যানেল আইনজীবী, এনজিও প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রছাত্রী। সভায় জেলার ৫টি চৌকি আদালত লিগ্যাল এইড কমিটি ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। আলোচনা সভা শেষে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি, চট্টগ্রামের ২০২১ সালে কর্মদক্ষতা বিবেচনায় এডভোকেট মো. সালাহ উদ্দিন চৌধুরীকে জেলার শ্রেষ্ঠ প্যানেল আইনজীবী সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।