জনসচেতনতাই প্রাদুর্ভাব কমাতে পারে

99

আষাঢ়ের শেষ বিকাল। প্রকৃতিতে এখন ভরা বর্ষা। এ মাসের শুরুতে বর্ষার অবিরাম বৃষ্টির নামগন্ধ পাওয়া না গেলেও এখন কিন্তু সত্যিই বর্ষা নেমেছে অঝোর বৃষ্টি নিয়ে। ঋতু বৈচিত্রে বর্ষার বাংলা এক অনন্য রূপে প্রকাশ পেলেও বর্ষায় মাঠে-ঘাটে, নালা-নর্দমায় জমে থাকা বৃষ্টির পানির কারণে নতুন এক রোগের সৃষ্টি হতে দেখা যাচ্ছে বেশ কয়েক বছর ধরে। নাম তার ডেঙ্গু। মেয়েলি মশা এডিসের জীবানু থেকেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব। মূলত বৃষ্টি যখন থেমে যায় বা থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে নগরীর বিভিন্ন ময়লাযুক্ত স্থানে বা ফুলের টবে জমানো ময়লাযুক্ত পানিতে এ এডিস মশা বাসা বাঁধে। সম্প্রতি নগরীতে এ জাতীয় এডিস মশার ব্যাপক বিস্তারের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই মশার কামড়ে প্রতিদিনই শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। সরকারি হিসাব মতে, কেবল গত কয়েকদিনেই ঢাকা ও চট্টগ্রামে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় তিনশ জন; এর মধ্যে একজন ডাক্তারসহ মৃত্যুবরণ করেছে ৮ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে, মে মাসে শুধু রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে ১৯৩ জন। সারা বাংলাদেশে জুনে ১৬৯৯ জন আক্রান্ত হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে নতুন করে ডেঙ্গু জ্বর দেখা দেয়ায় নগরবাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, যথাযথ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া অনুসরণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টি হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। কারণ ডেঙ্গু জ্বরের কোনো প্রতিষেধক নেই। ডেঙ্গু থেকে রেহাই পেতে হলে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আইইডিসিআরের তথ্য মতে, সাধারণত জুন-জুলাই থেকে শুরু করে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গুর ব্যাপক বিস্তার ঘটে। বিশেষ করে জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত পরিস্থিতি বেশি খারাপ থাকে। সাধারণত মশক নিধন কার্যক্রমের স্থবিরতা, গাইডলাইনের অভাব এবং মানুষের অসচেতনতাই ডেঙ্গুর প্রকোপের জন্য দায়ী। হঠাৎ থেমে থেমে স্বল্পমেয়াদি বৃষ্টিতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা খুব বেশি মাত্রায় প্রজনন সক্ষমতা পায়। ফলে এডিস মশার বিস্তারও ঘটে বেশি। এ মশা যত বেশি হবে ডেঙ্গুর হারও তত বাড়বে। উৎস বন্ধ না করতে পারলে ডেঙ্গুর ঝুঁকি থেকেই যাবে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছরই বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বছর বাংলাদেশে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বর্ষা ঋতু দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে তাই সারাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তারও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বৃষ্টি যদি থেমে থেমে চলতে থাকে তাহলে এডিস মশার ঘনত্ব আরো বাড়বে। কাজেই দেরি না করে আমাদের এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। প্রথমত, সবখানে মশা নিধন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। বিশেষ করে মশা নিধনে ওষুধ ছিটানোর দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশন বা পৌর সভাগুলোর। কিন্তু সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশনকে ওষুধ ছিটানোর কোন ক্রাশ প্রোগ্রাম গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। যদিও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয় ওষুধ ছিটানো হচ্ছে কিন্তু এ ওষুধ মশক নিধনে কাজ করছে না। ওষুধের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বরাবরই। এই ওষুধ পরিবর্তন করা জরুরি । আমরা আশা করি, সিটি করপোরেশন এডিস নিধন এবং এডিসের বংশ বিস্তার রোধে জোরদার অভিযান পরিচালনা করবে । এ ছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা তৈরি, ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণগুলো সম্পর্কে মানুষকে ওয়াকিবহাল করা, ডেঙ্গু হলে করণীয় সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণা জোরদার করাও দরকার। তবে এটাও সত্য যে, প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে সিটি করপোরেশনের পক্ষে ওষুধ ছিটানো সম্ভব নয়। তাই জনগণকে সচেতন হতে হবে সর্বাগ্রে। নিজেদের আশপাশ নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার-পরিছন্ন রাখতে হবে। ফুলের টব বা টায়ার ইত্যাদিতে দীর্ঘদিনের জমানো পানি রাখার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।