জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ শুরু তথ্য সংগ্রহ সুষ্ঠু ও নির্ভুল হোক

32

 

গতকাল দেশব্যাপী শুরু হয়েছে জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২। এ শুমারি চলবে ২১ জুন পর্যন্ত। দেশের জনসংখ্যা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রজনন, বিপণন, শ্রমশক্তি, উৎপাদন এবং প্রশাসনের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্যে ১০ বছর অন্তর এ শুমারি পরিচালিত হয়। আগে এ শুমারিকে বলা হতো আদমশুমারি। ২০১৩ সালের পরিসংখ্যান ব্যুরোর বিধি অনুযায়ী এবার এর নামকরণ করা হয়েছে জনশুমারি। দেশে সর্বশেষ এ শুমারি হয়েছিল ২০১১ সালে। সে অনুযায়ী ২০২১ সালে জনশুমারি হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারি এবং অফিসিয়াল প্রস্তুতি, জনবল ঘাটতি ও ট্যাব ক্রয়ে বিলম্বের কারণে তা সম্ভব হয়নি। সূত্র জানায় এবার জনশুমারি ও গৃহগণনার পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। এবং পরিসংখ্যান ব্যুরো ইতোমধ্যে বিশাল একটি জনবলও নিয়োগ দিয়েছে। এ জনবল ঘরে ঘরে গিয়ে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে ট্যাবের মাধ্যমে কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড পারসোনাল ইন্টারভিউইং (সিএপিআই) পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, জনশুমারিকে একটি দেশের জনসংখ্যার সরকারি গণনা হিসাবে গণ্য করা হয়ে থাকে। জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী জনশুমারি বলতে নির্দিষ্ট সময়ে একটি জনগোষ্ঠীর বা দেশের জনসংখ্যা গণনার সামগ্রিক প্রক্রিয়ায় তথ্য সংগ্রহ, তথ্য একত্রীকরণ এবং জনমিতিতে অর্থনৈতিক ও সামাজিক তথ্যাদি প্রকাশ করা বোঝায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর যে প্রধান উদ্দেশ্যগুলো উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো হলো-দেশের প্রতিটি খানা ও খানার সদস্যদের গণনা করে দেশের মোট জনসংখ্যার হিসাব নিরূপণ; দেশের সব বসতঘর/বাসগৃহের সংখ্যা নিরূপণ; দেশের সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের লক্ষ্যে তথ্য সংগ্রহ; স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণের জন্য তথ্য সরবরাহ এবং জাতীয় সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তথ্য সরবরাহ। এ কথা আমাদের মনে রাখতে হবে যে, একটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য সঠিক তথ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। জনশুমারির প্রয়োজনিয়তা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে মূলত জাতীয় পরিকল্পনার কারণেই। দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে খাদ্য, বাসস্থান এবং জীবনযাপনের অন্যান্য উপকরণের চাহিদা। সরকারকে সে অনুযায়ী খাদ্য উৎপাদন, আমদানি তথা সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হয়। এজন্য জনসংখ্যা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেতে জনশুমারির নির্ভুল গণনার বিকল্প নেই।
শুধু বর্তমান জনসংখ্যা নয়, ভবিষ্যতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে জনমিতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পেতে হলেও বয়সভিত্তিক জনসংখ্যার সঠিক গণনা প্রয়োজন। জানা গেছে, এবার জনশুমারি ও গৃহগণনা কার্যক্রমে দেশে বসবাসরত সব ব্যক্তিকে গণনাসহ তাদের সম্পর্কে মৌলিক জনমিতিক, আর্থসামাজিক ও বাসগৃহ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ছয় মাসের কম সময়ের জন্য বিদেশে অবস্থানরত সব বাংলাদেশি নাগরিককেও গণনায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এছাড়া বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকরাও গণনার অন্তর্ভুক্ত হবেন। সেক্ষেত্রে দেশে মিয়ানমার থেকে আগত যে ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন, তারা যেন কোনোক্রমেই বাংলাদেশি নাগরিক হিসাবে গণনায় অন্তর্ভুক্ত না হন, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সতর্ক থাকতে হবে।
আমরা মনে করি, জনশুমারি এ ক্ষেত্রে যারা সম্পৃক্ত তাদেও একক কাজ নয়, একাজ আমাদের। তথ্য সংগ্রহের জন্য যারা কাজ করছেন তাদের সঠিক ও নির্ভুল তথ্য আমাদেরকেই দিতে হবে। সুতরাং আমরা আশা করবে, দেশের সব নাগরিক স্বতঃস্ফূর্তভাবে তথ্য প্রদান করে এ গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় কার্যক্রমকে সাফল্যমন্ডিত করে তুলবেন। জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ কার্যক্রম সুষ্ঠু ও নির্ভুল হোক, এটাই সকলের প্রত্যাশা।