জনপ্রতিনিধিরা নেই জনগণের পাশে

77

করোনা মহামারিতে কষ্টে আছে জনগণ। আতঙ্ক আর খেতে না পারার কষ্টে অস্তিত্ব সংকটে সাধারণ জনগণ। কিন্তু জনগণের সুখে-দুঃখে, দাবি আদায়ের একমাত্র আশ্রয়স্থল জনপ্রনিধিরা জনগণের পাশে নেই কেন? ক’দিন আগেও নির্বাচনী ঢামাঢোলে কত শত প্রতিশ্রুতি ছিল! নির্বাচনের আগেই জনপ্রতিনিধিরা গুটিয়ে গেলেন, নাকি জনপ্রতিনিধিদের কাছে জনগণের আবেদন ফুরিয়ে আসল? এমন প্রশ্ন অনেকের।
জাতির ক্রান্তিকালের এই সময়টায় জনপ্রতিনিধিদের বিরূপ অবস্থানে তৈরি হওয়া প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কথা হয় রাজনীতিক বিশ্লেষক ও সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেনের সাথে। তিনি জানান, জাতি এখন অস্তিত্বের সংকটকাল অতিক্রম করছে। জনগণ অনেক কষ্টে আছে, তাদের সচেতনতা দরকার, খাবার ও সুরক্ষা দরকার। তাই জনপ্রতিনিধিদের প্রতি তাদের প্রত্যাশাও অনেক বেড়ে যায়। জনগণের অধিকার ভোটের মাধ্যমে তাদের নির্বাচিত করেন জনপ্রতিনিধি। সুঃখে-দুঃখে পাশে পাওয়ার আশায়, নিয়মতান্ত্রিকভাবে দাবিগুলো আদায়ের স্বপ্নে। এসব শুধুমাত্র রাজনৈতিক চাওয়া নয়, সামাজিক চাওয়াও। তাই জনপ্রতিনিধিদের উচিত জনগণের পাশে থাকা। তার মানে জনসমাগম করা নয়। কেননা এই মুহুর্তে জনগণের সবচেয়ে বড় উপকার হবে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা।
তিনি আরও বলেন, লোক দেখানো কোনো কিছু করা মানে জনগণের ক্ষতি করা। এমন কাজ কখনও দায়বদ্ধতা হতে পারে না।
ক’দিন আগেও নির্বাচনী ঢামাঢোলে সরব ছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা। মাইকে প্রার্থীর গুণগান প্রচার ও প্রতিশ্রুতির ‘অমর বাণী’র ছড়াছড়ি ছিল নগরে। এছাড়া ব্যানার পোস্টারের দাপটও ছিল বেশ। করোনায় স্থগিত হল নির্বাচন, উধাও হলেন বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি ও জনপ্রতিনিধি হতে আগ্রহী প্রার্থী। তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে ‘আপনি বাঁচলে বাপের নাম’ এ নীতিতে মেনে নীরব রয়েছেন।
তবে যারা কাউন্সিলর পদে সরকার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন, সংকটকালে জনগণ ছেড়ে নীরব থাকার দৌড়ে তারাই বেশি। বিদ্রোহীদের আগের ইতিহাস যেমনই হোক, মাঠে থেকে জনগণের মনোরঞ্জনে এগিয়ে রয়েছেন।
তাদের দাবি, জনগণের পাশে ছিলেন বলেই মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। তবে বর্তমান কাউন্সিলরদের অনেকেই সরকারি বরাদ্দকে নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন। এমনকি চালের সাথে নির্বাচনী পোস্টার ধরিয়ে দিতেও দ্বিধা করেননি।
উল্লেখ্য, দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে গত ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচনে ৪১টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২’শ ১৭ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৫৬ জন এবং কাউন্সিলর পদে ১’শ ৬১ জন প্রার্থী রয়েছেন।
নগরীতে দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষের সংখ্যা কম নয়। প্রতিদিনই তাদের কাছে খাবার নিয়ে ছুটছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা। এসব কাজে জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে থাকার কথা থাকলেও সরকারি বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় ব্যস্ত তারা। তবে করোনার এই সময়টায় মাঠে থেকে প্রসংশা কুড়িয়েছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
একইভাবে করোনা পরীক্ষার কিট ব্যবস্থা ও নগরের চিকিৎসাখাতে হাত বাড়িয়ে দিয়ে ইতিবাচক আলোচনায় রয়েছেন নওফেল। তাছাড়া বাকি চার সাংসদ নেই কোনো আলোচনায়। করোনার সাথে সাথে তারাও হয়েছেন উদাও। সরকারি বরাদ্দে নিজেদের ‘ক্রেডিট’ লাগাতে না পেরে, সমালোচনাকেই উত্তম পন্থা হিসেবে বেঁচে নিয়েছেন! এমনটা দাবি ভুক্তভোগী জনগণের।
সরকার দলীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনপ্রতিনিধিদের মাঠে থাকতে বলেছেন, দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রীও একই কথা বলেছেন। কিন্তু তাদের এই আহব্বানে জনপ্রতিনিধিরা পর্যাপ্ত সাড়া দেয়নি বলে মনে করছেন স্থানীয় আওয়ামী রাজনৈতিক নেতারা।