জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ কারও ভোগ-বিলাসে ব্যয় হবে না

46

সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের অর্থ কারও ভোগ-বিলাসে ব্যয় হবে না। গতকাল শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিচ্ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
তিনি বলেন, আজকে আমরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছি, এটা অব্যহত থাকবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান, এটাও অব্যহত থাকবে। কারণ জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ জনগণের কল্যাণে ব্যয় হবে, কারও ভোগ-বিলাসের জন্য এটা ব্যয় হবে না। কেউ অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করবেন, বিলাসবহুল জীবন যাপন করবেন আর যে সৎভাবে জীবন যাপন করবে, সাদাসিধে জীবন যাপন করবে, তার জীবনটাকে নিয়ে সে কষ্ট পাবে এটা কিন্তু হতে পারে না। খবর বিডিনিউজের
শেখ হাসিনা বলেন, অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ওই বিরিয়ানি-পোলাও খাওয়ার থেকে বা কোনো ব্র্যান্ডের পোশাক পরার থেকে সাদাসিধে জীবনযাপন করা অনেক অনেক সম্মানের। অন্তত সারাক্ষণ ওই অবৈধ চোরা টাকা, এটা মনে আসবে না। শান্তিতে ঘুমানো যাবে।
টাকা বানানোকে রোগ হিসেব উল্লেখ করে তিনি বলেন, আসলে টাকা বানানো একটা রোগ, এটাও একটা ব্যাধি, এটা একটা অসুস্থতা। একবার যে টাকা বানাতে থাকে তার শুধু টাকা বানাতেই ইচ্ছে করে।
কিন্তু ওই টাকার ফলে ছেলেমেয়ে বিপথে যাবে, ছেলেমেয়ের পড়াশোনা নষ্ট হবে, মাদকসক্ত হবে, সেটা দেখারও সময় নাই- টাকার পেছনে ছুটছে তো ছুটছেই। আর নিজের পরিবার ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। কাজেই এই ধরনের একটা সামাজিক অবস্থা আমরা চাই না। আমরা চাই সৎ পথে কামাই করে যে চলবে সে সম্মানের সঙ্গে চলবে, সৎ পথে কামাই করে যে থাকবে, সে সমাজে সম্মান পাবে।
দুর্নীতিবাজদের মানুষ গালি দেয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চোরা টাকা, দুর্নীতির টাকা, অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে যতই বিলাসিতা করুক, মানুষ মুখে হয়তো খুব বাহবা দিবে, পিছনে একটা গালি দিবে- যে এই ব্যাটা দুর্নীতিবাজ, চোর। সেই গালিটা হয়তো শোনা যাবে না, বোঝা যাবে না। কিন্তু সেই গালিটা খেতে হয়। এই কথাটা মনে রাখতে হবে।
নেতাকর্মীদের জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে চলার আহব্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জাতির পিতা সারাজীবন সাদাসিধে জীবন যাপন করে গেছেন। যারা তার আর্দশের সৈনিক তাদেরকে সেভাবেই চলতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে জনগণের জন্য কতটুকু আমরা করতে পারলাম, সেই চিন্তা করতে হবে। জনগণকে কি দিতে পারলাম সেই চিন্তা করতে হবে। জনগণের কল্যাণ কিসে হবে সেই চিন্তা করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের কথা বলেছেন, তাদের ভাগ্য কতটুকু গড়তে পারি, তাদের কতটুকু সুন্দর জীবন দিতে পারি। মানুষের ভাগ্য সুন্দরভাবে গড়ে তোলা, প্রত্যেকটা মানুষ যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
আর সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেছি বলেই আজকের বাংলাদেশ বিশ্বে সম্মান পাচ্ছে। আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমরা যদি ওরকম বিলাসবসনে গা ভাসাতাম, এই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হত না। এই বাংলাদেশ বিশ্বে সম্মান পেত না।
তিনি বলেন, এই সম্মানটা ধরে রাখতে হবে। আগামীতে যারা নতুন নেতা নির্বাচিত হবেন, নেতৃত্বে আসবেন তাদের সেই কথাটাই মনে রাখতে হবে যে, আদর্শ নিয়ে চলতে হবে। যে ত্যাগের মহিমা জাতির পিতা দেখিয়ে গেছেন সেই পথ ধরে চলতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে সরকার দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে জানিয়ে চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ যেন আর কখনও পেছনে ফিরে না তাকায়, বাংলাদেশের অগ্রগতি যেন অব্যহত থাকে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন সুন্দর জীবন পায়, উন্নত জীবন পায়, সুশৃঙ্খল জীবন পায়, সমৃদ্ধশালী জীবন পায় সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি, বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আর কখনও কোন হায়েনার দল বাংলাদেশের মানুষের বুকে চেপে বসতে পারবে না। আর তাদের রক্ত চুষে খেতে পারবে না। আর কোনো দুর্নীতিবাজ সন্ত্রাসী, আগুন দিয়ে যারা পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে, তারা আর কখনও এদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবে না।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রমুখ।