জঙ্গি জাবেদের ৮০ বছরের পিতার আক্ষেপ এক ছেলেতেই লন্ডভন্ড পরিবার

29

১৬ বছর আগে ভয়ানক আত্মঘাতি জঙ্গিপনার দায়ে সাজা হয়েছে জেএমবি’র চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান জাবেদ ইকবালের। মামলার রায় উপলক্ষে ছেলেকে দেখতে চুপিসারে আদালতের সামনে এসেছিলেন। জাবেদের বাবা মাওলানা আবদুল আউয়াল সিকদার ৮০ বছরের বৃদ্ধ। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া এ লোকটির শারীরিক সক্ষমতা চট্টগ্রাম আদালতে আসার মতো না হলেও ছেলের জন্য বাবার টান বলে কথা।
আবদুল আউয়াল সিকদার স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। ছেলের এ কান্ডের পর তাও শেষ। জাবেদের ভাই বোনরাও এ ঘটনার পর নিজেদের লুকিয়ে লুকিয়ে জীবন ধারণ করছেন। জঙ্গি জাবেদ ইকবাল কক্সবাজার জেলার সদর থানার খুরুশকুল এলাকার। সবমিলে এ ঘটনায় পুরো পরিবার একেবারে লন্ডভন্ড।
রায়ের পর গণমাধ্যমকর্মীরা প্রশ্ন করলে শুরুতে নিরব থাকেন জাবেদ। পরে তিনি বলেন, আমি দোষী নই। আদালতের কাছে বাবার সাথে দেখা করার অনুমতি চেয়েছিলেন জাবেদ ইকবাল। আদালত অনুমতি দিলে রায় ঘোষণার পর ছেলের সাথে দেখা করেন বাবা আবদুল আউয়াল শিকদার। রায় ঘোষণার ২০ মিনিট পর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে বাপ ছেলের মধ্যে কথা হয়। পরে আউয়াল সিকদার বলেন, অন্য ঘটনায় জড়িত হলেও এ ঘটনায় সে দোষী না। আমরা আপিল করব। সে আদালতে বলেছে, অনুতপ্ত। আমরা পুরো পরিবার তার জন্য বিধ্বস্ত এখন।
তিনি আরো জানান, এলাকায় জেএমবির বাবা বলে ডাকে অনেকে। ঘটনার পর থেকে এ অসম্মান নিয়ে আছি।
এদিকে রাষ্ট্রের নিয়োজিত আইনজীবী মো. ইউনুস জানান, রায়ের প্রতি আমরা সন্তুষ্ট নই। জাবেদের বাবাও তার অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। ঘটনার সঙ্গে জাবেদ ইকবাল জড়িত থাকার কোনো ধরনের প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করব। চাঞ্চল্যকর মামলা, ঘটনার সঙ্গে অনেকে জড়িত। শুধু অভিযোগপত্রে ৫ জনের নাম দেওয়া হয়েছে, তাদের দিয়ে এই ঘটনা হয়নি। এটার অন্তরালে আরও অনেক লোক ছিল। পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের মৃত্যুদÐ কার্যকর করা হয়েছে। জাবেদ ইকবাল ও বোমা মিজানকে সহযোগী হিসেবে বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নেই। এদের মূল আসামি হিসেবে ধরা হয়েছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুল হাসান বলেন, জঙ্গিদের রায়কে কেন্দ্র করে আদালতের চারদিকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। রায়ের পর আসামিকে বিশেষ নিরাপত্তায় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) এর গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা জঙ্গি জাবেদ ইকবালের পিতা মনে করেন, কম বয়সে ‘ভুল বুঝিয়ে’ তার ছেলেকে এ সংগঠনে যুক্ত করা হয়েছিল। যেজন্য তাদের পরিবারকে মূল্য দিতে হয়েছে।
আদালত প্রাঙ্গণে মাওলানা আবদুল আউয়াল জানান, শুধু গতকালই নয়, যতবারই ছেলেকে আদালতে আনা হয়েছে তিনি চট্টগ্রামে এসেছেন। ছেলের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছেন। ছেলে জাবেদকে নিয়ে অনেক আশা ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ছেলের জঙ্গিবাদে যুক্ত হওয়ায় পুরো পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চার সন্তানের মধ্যে জাবেদ দ্বিতীয়। লেখাপড়ায় ছিল মেধাবী। আমার স্বপ্ন ছিল সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে ভর্তি হয়েছিল। ঢাকায় তার সঙ্গে আমি দেখাও করতে গিয়েছিলাম।
কোন সময়ে জাবেদ জেএমবিতে জড়িত হয় জানতে চাইলে তা ঠিকভাবে মনে করতে পারেননি জঙ্গি কার্যক্রম নিয়ে ক্ষুব্ধ এ পিতা। তিনি বলেন, তালেবান যখন ক্ষমতায় আসে প্রথম। এরপরই সে জেএমবিতে যুক্ত হয়। তখন ছিল হাইলি মোটিভেটেড।
তিনি আরো বলেন, যা হবার হয়ে গেছে। না বুঝে জেএমবি করেছিল। ১৯ বছর বয়সে সে জেএমবির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। পুরো বুঝতে পারেনি। পরে নিজেও বুঝতে পেরেছে, এটা ইসলামের পথ না। এটা ভুল। নিজেই অনুতপ্ত বলে জানিয়েছে। সে একটা স্টেটমেন্ট দিয়েছে দ্রæত বিচার আদালতে।
কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নের বাসিন্দা আউয়াল জানান কর্মজীবনের শুরুতে স্কুলে এবং পরে মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন তিনি। ছেলে বিপথে যাওয়ায় ব্যথিত এ পিতা বলেন, আমি জেএমবির বিরুদ্ধে। আজীবন আমি এসব জঙ্গিপন্থার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি। এটা ইসলাম নয়। এগুলো ইসলামের বিরুদ্ধের পথ। জেএমবি হল বাতিল, খারিজি মতবাদ।
গতকাল রবিবার এ মামলায় সাজা পাওয়ার আগেই চট্টগ্রামের ১৫টি ও কক্সবাজারের দুটি মামলায় জাবেদ ইকবাল মোট ২০৬ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত হয়েছে।