নিজস্ব প্রতিবেদক
সীতাকুন্ডের জঙ্গল সলিমপুরে গতকাল শুক্রবার টানা অষ্টম দিনের মতো অভিযান পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসন। অভিযানে শতাধিক একর জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে। জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগর এলাকা নিয়ন্ত্রণে চেকপোস্টের স্থান নির্ধারণ, সিসিটিভি স্থাপনের লোকেশন চিহ্নিতকরণসহ নাইট সাফারি পার্কের সীমানা পিলার স্থাপনের কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
গতকাল বিকাল ৩টা থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. নাজমুল আহসানের নেতৃত্বে জঙ্গল সলিমপুরে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে জঙ্গল সলিমপুর মৌজার প্রায় ১০০ একর খাস জায়গা করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত খাস জায়গায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার এক্সটেনশন হিসেবে সিঙ্গাপুরের জুরং ন্যাশনাল পার্কের আদলে নাইট সাফারি পার্ক নির্মাণের লক্ষ্যে সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে এবং ৫৭ একর সরকারি খাস জায়গা ঘিরে সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। জঙ্গল সলিমপুর ছিন্নমূল এলাকা ও আলীনগর এলাকায় প্রশাসনের নিশ্চিদ্র নজরদারি স্থাপনের জন্য প্রায় তিন শতাধিক সিসিটিভি স্থাপন করা হবে। এর জন্য সিসিটিভি স্থাপনের লোকেশন সমূহ চিহ্নিত করা হয়েছে। জঙ্গল সলিমপুরের ছিন্নমূল এলাকা, আলীনগর এলাকায় প্রশাসনের কর্তৃত্ব স্থাপন করতে এবং সার্বক্ষণিক নজরদারি নিশ্চিত করতে পুলিশ, র্যাব, আনসার কাজ করবে। এই লক্ষ্যে গতকাল এই বাহিনীগুলোর সিকিউরিটি চেকপোস্ট স্থাপনের জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে এর পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে নির্দিষ্ট দূরত্বে নিরাপত্তা চৌকির জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জঙ্গল সলিমপুরের ছিন্নমূল ও আলীনগর এলাকায় খাস জায়গায় যারা অবৈধভাবে দখল করেছে এবং অবৈধভাবে জায়গা বিভিন্ন কথিত সমিতির থেকে কেনা-বেচা করছে তাদেরকে সতর্ক করে গণবিজ্ঞপ্তি সম্বলিত সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে জঙ্গল সলিমপুরের ছিন্নমূল ও আলীনগর এলাকার অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি এই জঙ্গল সলিমপুর এলাকার ১৫টি সমবায় সমিতির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে আলীনগর এলাকায় ইয়াসিন বাহিনীর কাছ থেকে যারা প্রতারিত হয়েছে তাদের অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। গত মঙ্গলবার থেকে আলীনগর থেকে প্রায় প্রতিদিনই ১০ থেকে ১৫টি পরিবার তাদের নির্মিত ঘরবাড়ি থেকে মালামাল সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি যে সকল জিনিসপত্র দিয়ে ঘরবাড়ি বানিয়েছিল সেগুলো খুলে ট্রাকে ভরে নিয়ে যাচ্ছে। আনুমানিক এ পর্যন্ত প্রায় ৫০টি পরিবার আলীনগর ছেড়ে গেছে।
গতকাল অভিযানে আরো উপস্থিত ছিলেন সীতাকুন্ডের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাহাদাত হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি), সীতাকুন্ড সহ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ, সীতাকুন্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ প্রমুখ।
অভিযানে ৬০ জন পুলিশ সহ জেলা প্রশাসনের স্টাফ ও ভলান্টিয়াররা উপস্থিত ছিলেন। জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামের উদ্যোগে সরকারি খাসজমি উদ্ধার এবং পাহাড় রক্ষায় প্রশাসনিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের রিট পিটিশনের আদেশ প্রতিপালনে সীতাকুন্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুরসহ সকল পাহাড়ি এলাকা রক্ষায় এবং পাহাড় কাটা প্রতিরোধে জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম এর নির্দেশে সংশ্লিষ্ট উপায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং সহকারী কমিশনারগণ (ভূমি) একটানা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছে।
